ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী

স্তন্যপায়ী জীবের প্রজাতী আজ বিশ্বে প্রায় ৪১০০টি। এদের মধ্যে ইঁদুর অন্যতম। বর্তমানে ইঁদুরের ক্ষতিকারক প্রজাতী আছে ২০টি। বাংলাদেশে ১২টি প্রজাতীর মধ্যে খুব বেশি ক্ষতিকারক ৫টি এবং কম ক্ষতিকারক ৭টি প্রজাতী।


ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী এর আলোকে বলা যেতে পারে, এই প্রাণীটি এমন কোন জায়গা নাই বা যেতে পারেনা। ইঁদুর ঘরে, চালায়, মাঠে বা ফসলের গুদামের অন্যতম ক্ষতিকারক প্রাণী।আসুন জেনে নেয়া যাক ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী সম্বন্ধে-

পোস্ট সূচিপত্র: ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী 

ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী সম্পর্কিত গবেষণা :

ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী সম্পর্কে জানতে গেলে প্রথমেই জানতে হবে ইদুরের বৈজ্ঞানিক নাম। অর্থাৎ induijje magirfua। বিজ্ঞানীদের দাবি, ইঁদুর নাকি মানুষের মতো কল্পনা করতে পারে। গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, অন্য সময়ের স্মৃতি, অভিজ্ঞতার কথা তারা মনে করতে পারছে এবং তারা ভাবনা-চিন্তাও করতে পারছে।

যে পরিস্থিতি বা বাস্তবে তারা ওই মুহূর্তে নেই, সে কথাও ইঁদুরেরা ভাবতে পারছে। শুধু তাই নয়, গবেষণায় দেখা গেছে— ভার্চুয়াল বাস্তবে ভাবনা-চিন্তা করে ইঁদুরেরা কোনো বস্তুকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে ফেলতেও সক্ষম।


ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী সম্পর্কে গবেষণার জন্য ভার্জেনিয়ার হাওয়ার্ড হিউস মেডিকেল ইনস্টিটিউটের জেনেলিয়া রিসার্চ ক্যাম্পাসের একদল গবেষক এই পরীক্ষায় নেমেছিলেন। গবেষকরা ভার্চুয়াল বাস্তবতায় মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ মাপতে এক বিশেষ ধরনের যন্ত্র (ব্রেন মেশিন ইন্টারফেস) তৈরি করেছিলেন। এরপর গবেষণাগারে ইঁদুরের ওপরে সেটি প্রয়োগ করা হয়।

গবেষণায় তারা দেখেছেন, নতুন পরিবেশ ও ঘটনায় মানুষের মতো ইঁদুরের মস্তিষ্কেও উদ্দীপনা তৈরি হয়। ইঁদুরের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অংশ (যেখানে আমাদের স্থান, কালসংক্রান্ত স্মৃতি ও তথ্য জমা থাকে) সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে তারা পূর্ব অভিজ্ঞতা, স্মৃতি ও তথ্য থেকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

তবে ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে বেশীরভাগ গবেষণায় তারা সাদা ইঁদুর বা অ্যালবিনো ইঁদুরেরই ব্যবহার করেন। গবেষকগণ বলছেন, ইঁদুরের জিনের সঙ্গে মানুষের জিনের বেশ মিল থাকায় গবেষণার প্রাথমিক ধাপে সাদা অ্যালবিনো প্রজাতির ইঁদুরের বেশ চাহিদা রয়েছে। বায়োলজিক্যাল ও বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সের যে কোনো গবেষণা কাজের প্রাথমিক ধাপে পরীক্ষার জন্য সুইচ অ্যালবিনো প্রজাতির ইঁদুর ব্যবহার করা হয়।

ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী এর মধ্যে অন্যতম ইঁদুর দ্বারা আমাদের সমস্যা বা ক্ষতি সাধিত হওয়া :


ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী এর আলোকে বলা যায় যে ইঁদুর এমন একটি ক্ষতিকারক প্রাণী যার দ্বারা লোহা, পাথর বাদে প্রায় সকল বস্তুরই ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে। এর ক্ষতির মুখ থেকে কাপড়-চোপড়. বইপত্র, দলিল, দস্তাবেজ, ঘরবাড়ী বা আসবাবপত্র, নদীর বাঁধ, সেচনালা ইত্যাদি কোনটিই রেহাই পাইনা।

ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী এর আলোকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ :

ইঁদুর মাঠে ফসলের প্রায় ১২% পর্য্যন্ত এবং ঘরে গুদামে শস্যের প্রায় ৫% নষ্ট করতে পারে। ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী জানতে গেলে এর দ্বারা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। যেমন-বাংলাদেশে ইঁদুর বছরে প্রায় ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন খাদ্য শষ্য নষ্ট করতে পারে, যার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকার মত। তবে এই হিসাব প্রায় আশির দশকের প্রথম দিকের।
The Daily Star বাংলা (May 2024) পত্রিকায় জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান-২০২৩ এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়-
“২০২২ সালে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৫৮ হাজার ৯২৯টি ইঁদুর মেরে প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৪২ মেট্রিকটন ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এই পরিমাণ ফসলের বাজারমূল্য প্রায় ৪৯৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।”
এর আগে ২০২১ সালে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫১৮টি ইঁদুর নিধন করে ১ লাখ ১ হাজার মেট্রিকটন ফসল বাঁচানো সম্ভব হয়।


যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর ২০১০ সালে বিশ্বব্যাপী ইঁদুরের উৎপাত নিয়ে করা এক গবেষণার তথ্য অনুসারে তারা বলেছেন, বিশ্বের অন্যতম ইঁদুর উপদ্রুত এবং বংশবিস্তারকারী এলাকা হচ্ছে গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এখানকার উপকূলীয় লোনা ও মিঠা পানির মিশ্রণের এলাকাগুলো ইঁদুরের বংশবিস্তারের জন্য বেশ অনুকূল। অর্থাৎ তাঁরা ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী এর আলোকে বলেছেন এখানকার ফসলের মাঠ ছাড়াও এই অববাহিকায় অবস্থিত হাট-বাজার ও শিল্পাঞ্চলগুলোতেও ইঁদুরের দাপট বেশি।
আবার আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র (ইরি) ইঁদুরের উৎপাতের কারণে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ১১টি দেশকে চিহ্নিত করেছে। তারা বলছে, বাংলাদেশের অর্ধেক জমির ফসল ইঁদুরের আক্রমণের শিকার হয়। ইরির আরেকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রায় ১০ শতাংশ ধান-গম ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগের পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান জানাচ্ছেন, বাংলাদেশে ইঁদুরের আক্রমনে বছরে উৎপাদিত আমন ধানের শতকরা ৫ থেকে ৭ ভাগ, গমের ৪ থেকে ১২ ভাগ, গোল আলুর ৫ থেকে ৭ ভাগ ও আনারসের ৬ থেকে ৯ ভাগ নষ্ট করে। সবমিলিয়ে ইঁদুর গড়ে মাঠ ফসলের ৫ থেকে ৭ শতাংশ ও গুদামজাত শস্যের ৩ থেকে ৫ শতাংশের ক্ষতি করে। নষ্ট করে ৭ থেকে ১০ ভাগ সেচনালা।

ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী এর আলোকে একে দমন করার কিছু পদ্ধতিসমূহ :

ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী এর মধ্যে খুবই কঠিন কাজ হলো ইঁদুর দমন করা, তাই কৌশল অবলম্বন করতে হয়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, ইঁদুরের দৃষ্টিশক্তি বেশ দুর্বল, তবে শ্রবণ শক্তি ও স্মৃতিশক্তি বেশ প্রখর। সুতরাং ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী এর কারণে এদের মারতে বা দমন করতেও অনেকগুলি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে-
    • ফাঁদ পেতে মারাই বেশ উত্তম। 
    • তবে ফাঁদ পেতে না মারতে পারলে এদের আশ্রয়স্থল এবং মজুদ খাদ্য ও বাসস্থান নষ্ট করে দিতে হবে, এ ছাড়াও এদের যদি তাড়া করা যায় তাহলে তারা ঐ এলাকায় অন্ততঃ ৩ সপ্তাহ আসবেনা। 
    • বিশ টোপ দিয়ে মারা বেশ কষ্টকর। বিষ দিয়ে মারলে হলে প্রথম দু’দিন বিষ ছাড়া একই খাবার দিতে হবে। কারণ প্রথম দু’দিন তারা পরিবেশিত খাদ্যগুলি একটু খেয়ে পরীক্ষা করবে যে তাদের শরীরে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না? যদি শরীরে কোন প্রতিক্রিয়া না হয়. তবেই তৃতীয় দিন তারা ঐ খাবার পেট ভরে খাবে এবং বাচ্চাদেরও খাওয়াবে। আর যদি প্রথম দু’দিন খাবার খেয়ে শরীরে কোন প্রতিক্রিয়া হয়, তবে ঐ খাবার আর খাবেনা এবং ঐ খাবারের আশে-পাশে প্রস্রাব করে দিবে, এতে করে অন্য ইঁদুররা ঐ প্রস্রাবের গন্ধ পেলে তারা আর খাবারের আশ-পাশে যাবে না। অন্য কোন ইঁদুর আর ঐ খাবার খাবেনা। 
    • মাঠে ইঁদুর দমনের জন্য পেঁচা বসার সুবিধা করে দিলে পেঁচা ইঁদুর ধরে এদের বংশ নিয়ন্ত্রণ করবে। 
    • বাসায় বা গুদামে বিড়াল পুষলে বিড়াল এদের বংশ নিয়ন্ত্রণ করবে। জেনে রাখা ভালো যে, বিড়াল ইঁদুর ধরতে/খেতে পছন্দ করে। তবে বাসায় বিড়াল পুষলে বিড়ালের গায়ের গন্ধে এবং কণ্ঠস্বরের কারণে ইঁদুর আর বাইরে বের হয়না।
    • রাতে এদের চলাফেরার পথে যদি মোটা রশি কিম্বা কলা পাতার বোঁঠা সাপের মত করে ফেলে রাখলে সাপ মনে করে ইঁদুর ঐ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাবে।

বি:দ্রঃ সাবধান! ইঁদুর মারার জন্য বিষ ব্যবহার করলে গৃহপালিত প্রাণীও মারা যেতে পারে, এমনকি ছোট বাচ্চা ও মানুষেরও ক্ষতি হতে পারে।


ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী সম্পর্কে আপনাদের বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত। আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে সেই পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন সম্ভব হলে অন্যদের সাথে তা শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url