গরিব-অসহায়দের গোপনে দান করলে যে সওয়াব পাবেন
গরিব-অসহায়দের গোপনে দান করলে যে সওয়াব পাবেন, সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। গরিব-অসহায়দের গোপনে দান করলে যে সওয়াব পাবেন, তা জানার জন্য নিম্ন বর্ণিত তথ্য গুলো মনোযোগের সাথে পড়তে থাকুন। চলুন দেখে নেয়া যাক, গরিব-অসহায়দের গোপনে দান করলে যে সওয়াব পাবেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত।
পেজ সূচিপত্র: গরিব-অসহায়দের গোপনে দান করলে যে সওয়াব পাবেন
উপস্থাপনা
প্রকাশ্যে এবং গোপনে উভয়ভাবেই দান করার বিধান রয়েছে। আপনি যেভাবে চান সেভাবেই দান করতে পারেন। তবে গোপন দান করলে বিশেষ কিছু ফজিলতের কথা হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ করে গরিব দুঃখীদেরকে গোপনে দান করেন সেক্ষেত্রে অশেষ ছাওয়াবের অধিকারী হতে পারবেন।
গরিব-অসহায়দের গোপনে দান করলে যে সওয়াব পাবেন, সে বিষয়গুলো সম্পর্কে এই আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। তাই গোপনে গরিব অসহায়দেরকে দান করার ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।
গরিব-অসহায়দের গোপনে দান করলে যে সওয়াব পাবেন
গোপনে দান করলে লোক দেখানোর কোনো সম্ভাবনা থাকে না। আর যখন আপনি প্রকাশ্যে দান করবেন তখন হতে পারে যে সেই দান সুনাম কুড়ানোর জন্য করেছেন। অর্থাৎ প্রকাশ্যে দান করার ক্ষেত্রে যদি সামান্য পরিমাণ লোক দেখানোর ইচ্ছা থাকে তাহলে কিন্তু কখনোই তার দান হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না বরং তা হবে রিয়া।
বর্তমানে অনেকেই সামান্য কিছু দান করার বিনিময়ে ফটোশুট করে তার ফলাও করে প্রচার করে থাকে। আবার অনেকেই সামাজিকভাবে নিজের ইমেজ বৃদ্ধি করার জন্য ঘোষণা দিয়ে সামান্য কিছু দান কর। এই ধরনের দাম কখনোই আপনার উপকারে আসবেনা। নিঃস্বার্থভাবে দান করার মন মানসিকতা ছাড়া উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে দান করলে তাহলে রিয়া।
রিয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, মাহমুদ ইবনে লাবিদ (রা:) বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (স:) বলেছেন "আমি যে বিষয়টি তোমাদের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই, তা হলো শিরকে আসগর (ছোট শিরক)। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! শিরকে আসগর কী? তিনি বলেন, রিয়া বা লোক দেখানো আমল। কেয়ামতের দিন যখন মানুষকে তাদের কর্মের প্রতিফল দেওয়া হবে, তখন মহান আল্লাহ তাদের বলবেন, তোমরা যাদের দেখাতে তাদের কাছে যাও, দেখো তাদের কাছে তোমাদের পুরস্কার পাও কি না!" (মুসনাদে আহমদ)
তাই দান করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে, সঠিক নিয়ত করতে হবে। যাইহোক, রিয়া থেকে বাঁচার জন্য একমাত্র উপায় হল গোপনে দান করা। আপনি যখন গোপনে দান করবেন তখন দুনিয়াবী কোন স্বার্থ থাকবে না একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই সেই দান পরিমাণিত হবে। কেননা আপনি যে দান করছেন তা আপনি এবং যাকে দান করছেন সে ব্যতীত অন্য কেউ জানেনা। তাহলে এখানে রিয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। এ কারণেই গোপনে দান করা অধিক উত্তম।
গোপনে দান করার ফজিলত
গরিব-অসহায়দের গোপনে দান করলে যে সওয়াব পাবেন সেই বিষয় সম্পর্কে নিচে আরো বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। গোপনে দান করার ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন, তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো ভালো। আর যদি গোপনে দান করো এবং অভাবগ্রস্তকে দাও তা তোমাদের জন্য অধিক ভালো। (সুরা আল বাকারা: ২৭১)।
সুতরাং উপর লিখিত আয়াত থেকে বোঝা গেল প্রকাশ্যে দান করা যায় তবে গোপনে দান করার অধিক উত্তম। যেহেতু গোপনে দান করলে তা শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই হয় দুনিয়ার কোন উদ্দেশ্য থাকে না তাই গোপনে দান করা অধিক উত্তম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই আপনি যদি, দান করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চান সেক্ষেত্রে গোপনে দান করতে পারেন।
আরো পড়ুন: দানের ফজিলত সম্পর্কে ২টা ঘটনা
গোপনে দান করার ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। যেমন একটি হাদিসে বিশ্বনবী (সা:) বলেন, "কেয়ামতের দিন যখন আরশের ছায়া ছাড়া কোন ছায়া থাকবে না, আল্লাহ তায়ালা সাত শ্রেণির মানুষকে তাঁর আরশের নিচে আশ্রয় দেবেন। তাদের মধ্যে একজন হলো ওই ব্যক্তি, যে এতো গোপনে দান করত যে, তার ডান হাতের দান বাম হাতও টের পেত না।" (বুখারি, মুসলিম)
- গোপনে দান করলে, আল্লাহ আপনার প্রয়োজন পূরণ করবেন: রাসূলুল্লাহ(সা:) বলেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। (বুখারী)
- গোপনে দান করলে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়: রাসূলুল্লাহ(সা:) বলেন, " তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করো যদিও তা একটি খেজুর দান করার মাধ্যমেও হয়" (বুখারী, মুসলিম)
- গোপনে দানকারীর মর্যাদা আল্লাহ বাড়িয়ে দেন: রাসূলুল্লাহ(সা:) বলেন, দান কোন ভাবেই সম্পদ কমায় না এবং যে বান্দা ক্ষমা করে, আল্লাহ তার সম্মান বাড়িয়ে দেন। আর যে নম্রতা প্রদর্শন করে, আল্লাহ তাকে (মানুষের মধ্যে) মর্যাদায় উন্নীত করেন।" (মুসলিম)
- গোপনে দান করলে নফস পরিষ্কার হয়: এই ব্যাপারে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, তোমরা কখনো সওয়াব অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না ব্যয় করবে তা থেকে, যা তোমরা ভালবাস। আর যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত। ( সূরা আল ইমরান ৯২)
- গোপনে দান করলে আল্লাহ সম্ভাব্য ক্ষতি থেকে রক্ষা করে: রাসূলুল্লাহ(সা:) বলেন,"তোমরা বিলম্ব না করে সদকা কর, কেননা তা বিপদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।" (তিরমিজি)
গোপনে দান করার হাদিস
গোপনে দান করার ফজিলত সম্পর্কিত অসংখ্য অগণিত হাদিস রয়েছে। গোপনে দান করা খুবই মহৎ একটি কাজ। গোপনে দান করলে তার সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর উদ্দেশ্যেই দান করা হয় এতে দুনিয়াবি কোন স্বার্থ থাকে না। এছাড়া যাকে, দান করা হয় তার নাম পরিচয়ও গোপন থাকে এর ফলে সামাজিকভাবে সে প্রতিপন্নের শিকার হয় না। এক কথায় গোপনে দান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। যাইহোক আসুন দেখে নেই, গরিব-অসহায়দের গোপনে দান করলে যে সওয়াব পাবেন।
বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেন, "প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দানকারীকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (বুখারি, মুসলিম)
অন্য একটি হাদিসে গোপনে দান করার ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়, "নিশ্চয় গোপন সদকা রবের ক্রোধকে প্রশমিত করে "(তাবারানি)। এছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রা:) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "দান-খায়রাত আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টি কমিয়ে দেয় এবং অপমানজনক মৃত্যু রোধ করে।" (তিরমিজি)
উপরে উল্লেখিত হাদিসগুলো থেকে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে, গরিব অসহায়দেরকে দান করলে তা কতটা মর্যাদাপূর্ণ একটি ইবাদত। গরিব-অসহায়দের গোপনে দান করলে যে সওয়াব পাবেন, সে বিষয় সম্পর্কে আরো অনেক হাদিস রয়েছে। সে হাদিসগুলোর একটি আর্টিকেলের মধ্যে তুলে ধরা সম্ভব নয়। গোপনে দান করার মর্যাদা সম্পর্কিত পবিত্র কুরআনের আয়াত এবং বিশেষ বিশেষ হাদিস সমূহ ইতিমধ্যেই উপরে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
উপসংহার
গরিব-অসহায়দের গোপনে দান করলে যে সওয়াব পাবেন, আশা করি সেই বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। গোপনে গরিব দুঃখীদেরকে দান করলে সওয়াব পাওয়া যায়, সেই বিষয়ে সম্পর্কে ইতিমধ্যেই উপরে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি উপরে উল্লেখিত তথ্য গুলো আপনার জীবনে পরিবর্তন ঘটাবে। তথ্যবহুল এই আর্টিকেলটি আপনি সকলের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এতে করে তারা দান করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হতে পারবে। ১৬৪১৩
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url