আপনি কি বাচ্চাদের জিহ্বা কিভাবে পরিষ্কার করবেন তা নিয়ে চিন্তিত। বাচ্চাদের
জিহ্বা পরিষ্কার করা কঠিন কাজ। আপনার চিন্তার শেষ করে বাচ্চাদের জিহ্বা
কিভাবে পরিষ্কার করবেন বা বাচ্চাদের জিহ্বা ময়লা হলে করণীয় আমি আপনাকে সহজ ভাবে
জানাবো। বাচ্চাদের জিহ্বা কিভাবে পরিষ্কার করবেন ও বাচ্চাদের জিহ্বা ময়লা
হলে করণীয় জানতে পড়ুন।
বাচ্চাদের দাঁত ব্রাশ করাই কঠিন কিন্তু পিতামাতাদের আরেকটি কঠিন কাজ হল বাচ্চাদের
জিহ্বা পরিষ্কার করা। জিহ্বা পরিষ্কারের গুরুত্ব শিশুদের শেখানো কখনও কখনও আরও
কঠিন কাজ হতে পারে। শিশুদের দাঁত ও মুখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে বড়দের মত তাদেরও
জিহ্বা পরিষ্কার রাখা খুব দরকার। তাহলে নিচে বাচ্চাদের জিহ্বা কিভাবে
পরিষ্কার করবেন এবং বাচ্চাদের জিহ্বা ময়লা হলে করণীয় সম্পর্কে সহজ ভাবে জানতে
পড়তে থাকুন।
সূচিপত্রঃ বাচ্চাদের জিহ্বা কিভাবে পরিষ্কার করবেন
নবজাতক বাচ্চাদের জিহ্বা কিভাবে পরিষ্কার করবেন
একটি নবজাতক শিশুর জিহ্বা এবং মাড়ি পরিষ্কার কর সহজ এবং আপনার অনেক কিছুর
প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র আপনার প্রয়োজন হবে গরম পানি এবং একটি ওয়াশক্লথ। প্রথমে
সাবান ও পানি দিয়ে নিজের হাত ভালো করে ধুয়ে নিন। তারপরে বাচ্চাদের জিহ্বা
পরিষ্কার করা শুরু করার জন্য আপনার বাচ্চাকে আপনার কোলে শুইয়ে দিন এবং তাদের
মাথা আপনার এক হাতে ধরে রাখুন। তারপর বাচ্চাদের জিহ্বা ময়লা হলে করণীয় হলঃ
-
গরম পানিতে কাপড় দিয়ে একটি আঙুল জড়িয়ে নিয়ে পানিতে ডুবিয়ে ভিজিয়ে নিন
-
আলতো করে আপনার শিশুর মুখ খুলুন এবং তারপর সেই কাপড়ে জড়ানো আঙ্গুল ব্যবহার করে
বাচ্চার মুখের বৃত্তাকার গতিতে তাদের জিহ্বাকে হালকাভাবে ঘষুন
-
আপনার শিশুর মাড়িতে এবং তার গালের ভিতরের দিকেও আপনার আঙুলটি আলতোভাবে ঘষুন
-
আপনি আপনার শিশুর জিহ্বা এবং মাড়ি থেকে দুধের অবশিষ্টাংশ আলতো করে ম্যাসেজ এবং
স্ক্রাব করার জন্য আঙুল দিয়ে ব্রাশের মত ব্যবহার করতে পারেন। এভাবে আপনার শিশুর
জিহ্বা দিনে অন্তত দুবার পরিষ্কার করা উচিত।
আপনার শিশুর tongue বা থ্রাশ হলে জিহ্বা যেভাবে পরিষ্কার করবেন
এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনার শিশুর জিহ্বায় সাদা আবরণ সবসময় দুধের
কারণে হয় না। কখনও কখনও এটি থ্রাশ নামক সমস্যার কারণে হয়। দুধের অবশিষ্টাংশ
এবং থ্রাশ দেখতে একই রকম। পার্থক্য হল আপনি দুধের অবশিষ্টাংশ মুছে ফেলতে পারেন।
কিন্তু আপনি থ্রাশ মুছে ফেলতে পারবেন না। ওরাল থ্রাশ হল একটি ছত্রাক সংক্রমণ যা
মুখের মধ্যে বৃদ্ধি হয়।
এটি ওরাল ক্যানডিডিয়াসিসের কারণে হয় এবং জিহ্বা, মাড়ি, গালের ভিতরে সাদা দাগ
পড়ে। থ্রাশের সংক্রমণ থেকে মুক্তি পেতে একটি অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ দিয়ে
চিকিত্সা করার প্রয়োজন হতে পারে। তাই যখন আপনি আপনার বাচ্চার জিহ্বা পরিষ্কার
করার পর ও সাদা দাগ না ওঠে তাহলে আপনার বাচ্চার জন্য শিশু বিশেষজ্ঞের সাথে
যোগাযোগ করুন। এখান থেকে মুখে ছত্রাকের আক্রমণ হলে বাচ্চাদের জিহ্বা
কিভাবে পরিষ্কার করবেন তা জানতে পারেন।
৬ মাস বয়সের পর বাচ্চাদের জিহ্বা কিভাবে পরিষ্কার করবেন
একবার আপনার শিশুর বয়স ৬ মাস বা তার বেশি হয়ে গেলে এবং তার প্রথম দাঁত উঠলে,
আপনি টুথপেস্টের সাথে একটি নরম এবং বাচ্চাদের টুথব্রাশ ব্যবহার করতে পারেন। যে
কোন দাঁত পরিষ্কার করতেও এটি ব্যবহার করতে পারেন।
আপনি আপনার শিশুর জিহ্বা এবং মাড়ি আলতোভাবে ঘষতে নরম টুথব্রাশ ব্যবহার করতে
পারেন, অথবা বাচ্চাদের জন্য আঙুলের ব্রাশ, গজ বা ওয়াশক্লথ ব্যবহার করা যেতে
পারে যতক্ষণ না তারা একটু বড় হয়। বড় হলে ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করলে কোনো
সমস্যা হবে না।
কমপক্ষে ৬ মাস বয়সী একটি শিশুকে টুথপেস্ট দেওয়ার সময় আপনার খেয়াল রাখতে হবে
যেন বেশি পরিমাণ না দেন। একটি চালের দানার পরিমাণ টুথপেস্ট দিতে হবে বাচ্চাদের।
কারণ টুথপেস্ট মিষ্টি হওয়ার কারণে বাচ্চারা এটি খেয়ে ফেলতে পারে। একবার আপনার
সন্তানের বয়স কমপক্ষে ৩ বছর হয়ে গেলে আপনি পরিমাণটি আর একটু বাড়িয়ে দিতে
পারেন।
আপনার বাচ্চাকে শেখান কিভাবে তাদের জিহ্বা ব্রাশ করতে হয় এবং পরিষ্কার করতে
হয়
বেশিরভাগ ছোট বাচ্চারা তাদের নিজের দাঁত পরিষ্কার করতে পারে না তাই তাদের বয়স
৬ থেকে ৯ বছরের মধ্যে না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে তাদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।
কিন্তু যদি মনে হয় এই বয়সের আগেই আপনার বাচ্চা এই কাজ শিখতে পারবে তাহলে আপনি
তাদের শেখানো শুরু করতে পারেন কিভাবে সঠিকভাবে তাদের নিজের দাঁত ও জিহ্বা ব্রাশ
করতে হয়। বাচ্চাদের জিহ্বা কিভাবে পরিষ্কার করবেন তা তাদেরও শিখান।
-
শুরু করতে একটি ভেজা টুথব্রাশে সামান্য টুথপেস্ট চেপে নিন।
-
প্রথমে আপনার নিজের টুথব্রাশ দিয়ে আপনার নিজের দাঁত ব্রাশ করে
বাচ্চাদের দেখিয়ে দিন।
-
এরপরে আপনার সন্তানের দাঁত ব্রাশ দিয়ে তাদের দাঁত মাজুন। আপনি ব্রাশ করার
সাথে সাথে আপনার ধাপ গুলো ব্যাখ্যা করুন। আপনি কীভাবে তাদের দাঁতের সামনে
এবং পিছনে ব্রাশ করছেন তা ভালোভাবে দেখিয়ে দিন।
-
এটা দেখানোর পর আপনার বাচ্চাকে একবার চেষ্টা করে দেখতে দিন।
-
আপনার বাচ্চাদের দেখাতে হবে কিভাবে টুথব্রাশ ব্যবহার করে তাদের জিহ্বা
আস্তে আস্তে পরিষ্কার করতে হয়। এছাড়াও বাচ্চাদের মনে করিয়ে দিন যেন
টুথপেস্ট গিলে না খায়। ব্রাশ করার পরে অতিরিক্ত থুথু ফেলতে শেখান।
বাচ্চাদের জিহ্বা পরিষ্কারের গুরুত্ব
আপনার শিশুর দাঁত দেখা যাওয়ার আগেই নিয়মিত ভাবে তাদের মুখের যত্ন করতে হবে
এবং শিশুরা চার মাস বয়সের কাছাকাছি হলে দাঁত উঠা শুরু হয়। জিহ্বা আমাদের
প্রতিদিনের এমনকি প্রতি মিনিটের জন্য অপরিহার্য অংশ। কিন্তু নবজাতকদের মধ্যে
তাদের দাঁত এবং জিহ্বা পরিষ্কার করা খুব কঠিন হতে পারে।
নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ এবং ব্যাকটেরিয়া জমে থাকা এড়াতে নিয়মিত জিহ্বা পরিষ্কার
করা অপরিহার্য। এটা ছোট বড় সবার ক্ষেত্রেই একই কথা। নিয়মিত জিহ্বা পরিষ্কার
করলে মুখের সংক্রমণ এবং মাড়ির রোগের ঝুঁকি কমে যায়। তাই বাচ্চাদের জিহ্বা
কিভাবে পরিষ্কার করবেন বা বাচ্চাদের জিহ্বা ময়লা হলে করণীয় ভালোভাবে জেনে নিন।
আপনি যদি বুকের দুধ জিহ্বায় কয়েকদিন ধরে তাদের মুখের মধ্যে রেখে দেন তবে আপনার
শিশুর চিনিযুক্ত লালার কারণে খারাপ ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে
ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। মায়ের বুকের দুধ খাওয়ার পর শিশুদের সাদা জিহ্বা
একটি সাধারণ জিনিস। এর কারণ হল দুধের অবশিষ্টাংশ তাদের জিভের সাথে লেগে থাকে।
তাই এটা প্রতিদিন নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
আপনার যদি সন্দেহ হয় আপনার শিশুর ছত্রাক সংক্রমণ হয়েছে যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে
পারে। এরকম হলে শিশুদের অস্বস্তি ও জ্বালাপোড়ার কারণে খেতে অসুবিধা হয়। বুকের
দুধ খাওয়ানো মায়ের বুকেও সংক্রমিত হতে পারে। তাই যদি বাচ্চাদের জিহ্বা
পরিষ্কার করতে গিয়ে দেখেন সেটা পরিষ্কার হচ্ছে না তাহলে দ্রুত ডাক্তার দেখান।
বাচ্চাদের জিহ্বা কিভাবে পরিষ্কার করবেন - শেষ কথা
বাচ্চাদের আপনি ছোট থেকে যেভাবে চলতে শিখাবেন বাচ্চাদের সেই অভ্যাস গড়ে উঠবে। তাই
আপনি যদি ছোট থেকেই তাদের মুখের যত্ন ভালোভাবে নেন তাহলে তারাও সেটাই শিখবে।
যাইহোক যেহেতু বাচ্চারা নিজেরা তাদের যত্ন নিতে পারে না তাই আপনাকেই আপনার
বাচ্চাদের যত্ন নিতে হবে। এর মধ্যে বড়দের মত বাচ্চাদেরও জিহ্বা পরিষ্কার করা খুব
গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাচ্চাদের জিহ্বা কিভাবে পরিষ্কার করবেন বা বাচ্চাদের
জিহ্বা ময়লা হলে করণীয় জেনে নিয়মিত তাদের জিহ্বা পরিষ্কার করে দিবেন। [জব
আইডি=২২৪৯৮]
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url