রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
রিজিক কাকে বলে রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত রিজিকের সূরা রিজিক বৃদ্ধির উপায় রিজিক সম্পর্কে আলোচনা রিজিক নিয়ে আল্লাহর বাণী রিজিক নিয়ে চিন্তা এ সকল বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। তাই যারা এই সকল বিষয়ে জানতে চান তারা আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
পেজ সূচিপত্রঃ রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
- রিজিক কাকে বলে
- রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
- রিজিক বৃদ্ধির উপায়
- রিজিক সম্পর্কে আলোচনা
- রিজিক নিয়ে আল্লাহর বাণী
- রিজিক নিয়ে চিন্তা
- শেষ কথা
রিজিক কাকে বলে
আমরা অনেকেই মনে করে থাকি যে শুধু আমরা যে খাবার খাই এটাই রিজিক। আসলে তা
নয় যে সমস্ত জিনিস দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়ে থাকে সেটাকেই মূলত বলা হয়ে
থাকে রিজিক। যেমন আমরা যেগুলো পোশাক পরিধান করি এগুলো হল
রিজিক।নেককার স্ত্রী এবং সন্তান ও রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। মানে এককথায় বলা
যায় যেগুলো জিনিস আমাদের উপকারে আসে এবং আমাদের প্রয়োজন হয় সে সকল জিনিসই
রিজিক।
আরো পড়ুনঃ দানের ফজিলত সম্পর্কে ২টা ঘটনা
এবং রিজিক এর ৪ টি প্রকার রয়েছে। কিন্তু এই চার প্রকার রিজিক কি কি তা হয়তো আমাদের মধ্যে অনেকেরই অজানা। রিজিকের সর্বনিম্ন স্তর হলো টাকা পয়সা গাড়ি বাড়ি জমি জমা এইগুলো। আর রিজিকের সর্বোচ্চ স্তর হচ্ছে সুস্থতা। এবং তৃতীয় নাম্বার বা সর্বোত্তম রিজিক হল পরিপূর্ণ নেককার স্ত্রী এবং পরিশুদ্ধ নেককার সন্তান। আশা করছি বুঝতে পারলেন রিজিক কাকে বলে। এখন চলুন নিচের অংশে জানা যাক রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও রিজিকের সূরা।
রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত - রিজিকের সূরা
আল্লাহ আমাদের সব রিজিক দান করেছে তা আমাদের জন্য অনেক নিয়ামত পূর্ণ আর আমাদের এ
সকল রিজিকের শুকরিয়া আদায় করা প্রয়োজন। আপনি যত বেশি শুকরিয়া আদায় করবেন তত
আপনার রিজিক বৃদ্ধি হবে। এখন আপনাদের এই অংশে জানাবো রিজিকের সূরা এবং রিজিক
সম্পর্কে কোরআনের আয়াত। রিজিক সম্পর্কে কুরআনে কয়েকটি আয়াত রয়েছে সেগুলো
হলো।
১। পবিত্র আল কুরআনের আল্লাহ পাক ঘোষণা দিয়েছেন সকল প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব শুধুমাত্র আমার। এবং আল্লাহর সকল প্রাণীর বা পৃথিবীতে বিচরণকারী সকল জিনিসের রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন। ( সূরা হুদ আয়াত ৬)
২। আবার রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত এ আরেকটি কথা বলা হয়েছে আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কখনো বা অনাহারে রেখে কখনো বা ভয় ভীতিতে রেখে আবার কখনো বা তোমাদের জান মাল ধন সম্পদের ক্ষতি করে। এবং তোমরা যদি ধৈর্য ধারণ করতে পারো তাহলে তোমাদের জন্য থাকবে চির শান্তির জায়গা জান্নাত। (সূরা বাকারা ১৫৫)
৩। রিজিক সম্পর্কে আরেকটি আয়াত হল আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে সম্পত্তি দান করেন। যাকে ইচ্ছা হয় তাকে বেশি সম্পত্তি দান করেন এবং যাকে ইচ্ছে হয় না বা চান না তাকে কম-সম্পত্তি দান করেন কিন্তু এতে করে আল্লাহর উপর অসন্তুষ্ট হওয়া যাবে না সব সময় আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ এইডস রোগ প্রতিরোধে আক্রান্ত রোগীদের যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে
৪। রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত এ বলা হয়েছে হে বান্দারা তোমরা ধনসম্পদ অর্জনের উত্তম পন্থা অবলম্বন করো এবং আল্লাহকে ভয় করো। রিজিক অবলম্বনে যতই বিলম্ব হোক না কেন নির্ধারিত রিজিক অর্জন না করা পর্যন্ত মৃত্যু হবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত এ আরো অনেক কিছু বলা হয়েছে। তাই আমাদের রিজিক
অর্জনের জন্য উত্তম পন্থা অবলম্বন করতে হবে এবং আল্লাহ কে স্মরণ করে সকল কাজ করতে
হবে তাহলে মহান আল্লাহ আমাদের রিজিক বৃদ্ধি করে দিবেন। এখন চলুন নিচের অংশে জানা
যাক রিজিক বৃদ্ধির উপায়।
রিজিক বৃদ্ধির উপায়
রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত এ অনেক কিছু বলে দেওয়া হয়েছে কিভাবে আপনি রিজিক বৃদ্ধি করতে পারবেন। আপনি যদি এই আয়াতগুলো ভালোভাবে পড়েন তাহলে আপনি রিজিক বৃদ্ধির উপায় জানতে পারবেন। এখন আপনাদের এই অংশে জানাবো রিজিক বৃদ্ধির উপায় গুলো।
১। রিজিক বৃদ্ধির উপায় হলো আল্লাহর উপর তাকওয়া এবং তাওয়াক্কুল রাখা। আপনি যদি আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখেন তাহলে আল্লাহ আপনার রিজিক বৃদ্ধি করে দিবেন।
২। রিজিক বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়তে হবে এবং আল্লাহর জিকির করতে হবে। তাহলেই আমাদের রিজিক বৃদ্ধি পাবে।
৩। রিজিক বৃদ্ধি করার জন্য বেশি বেশি দান সদকা করতে হবে। আপনি যত বেশি অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে পারবেন তত আপনার রিজিক বৃদ্ধি করে দিবেন আল্লাহ।
৪। আল্লাহ আমাদের যে সকল নেয়ামত দিয়েছেন সেই সকল নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আপনি যদি আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারেন তাহলে আল্লাহ আমাদের রিজিক আরও বৃদ্ধি করে দিবেন।
৫। রিজিক বৃদ্ধির উপায় এর ভেতর আরেকটি হল আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। আপনি যদি আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেন তাহলে এতে করে আল্লাহ খুশি হবেন এবং আপনার রিজিক বৃদ্ধি করে দিবেন।
৬। পৃথিবীর বৃদ্ধি করার আরেকটি উপায় হল পিতা মাতার আনুগত্য অর্জন করা। আপনি আপনার পিতা-মাতার সাথে যদি ভাল ব্যবহার করেন এবং তাদের সাথে সুন্দর আচরণ করেন তাহলে এতে করে আল্লাহ আপনার রিজিক বৃদ্ধি করে দিবেন।
এবং রিজিক বৃদ্ধি করার জন্য আপনাকে বেশি বেশি নামাজ-কালাম পড়তে হবে। আল্লাহর যত
এবাদত রয়েছে সকল এবাদত পালন করতে হবে। এগুলো যদি আপনি করতে পারেন তাহলে অবশ্যই
আপনার রিজিক বৃদ্ধি পাবে। আর আপনি যদি আল্লাহর এত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়
না করেন তাহলে আপনার রিজিক কেড়ে নেওয়া হবে।
রিজিক সম্পর্কে আলোচনা
রিজিক সম্পর্কে একটি ঘটনা রয়েছে এখন আপনাদের সেই ঘটনাটি জানাবো। আপনি যদি
রিজিক সম্পর্কে আলোচনা টি শুনেন তাহলে অবশ্যই আপনার ভালো লাগবে এবং রিজিক
সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে যাওয়া যাক রিজিক
সম্পর্কে আলোচনা।
একদিন এক সাহাবী সফরে বের হলেন এবং খাবার হিসেবে তার সাথে একটি ছোট রুটি নিয়ে গেলেন। কিছু দূর যাওয়ার পরে একটা গাছের ছায়ার নিচে বসলেন এবং রুটি টা বের করে রুটি দুই ভাগ করলেন এবং এক ভাগ খেলেন আর একভাগ পাশে রাখলেন একটু পরে খাবেন বলে। ওই মুহূর্তে একটি কাক উড়ে আসলো এবং সেই রুটিটি মুখে করে নিয়ে উড়ে চলে গেল। কখনোই ওই সাহাবী কাকের পেছন পেছনে গেলে এবং একসময় দেখলেন ওই কাকটি উড়ে গিয়ে একটি গাছের উপরে বসলো।
তখন ওই সাহাবী গাছের নিচে দাঁড়িয়ে বললেন দেখি তুই কিভাবে এত বড় রুটি খাস। তখন কাকটি তার পা দিয়ে রুটি দিয়ে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে নিচের দিকে ফেলতে লাগলো। এটা দেখে সাহাবীটি বলল রুটি খাওয়া বাদ দিয়ে রুটি নিয়ে সে যেন ফেলছে তখন তিনি ওই সোজা গেলেন এবং দেখলেন যেখানে রুটিটি ফেলা হচ্ছে সেখানে একটি কূপ এবং সেই কূপের মধ্যে একজন মানুষ পড়ে রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ রোজমেরি তেলের উপকারিতা - রোজমেরি তেল ব্যবহারের নিয়ম
তখন সেই সাহাবী টি মানুষটিকে কূপ থেকে তোলার জন্য আরো কিছু মানুষদের ডাকলেন এবং তারপরে সেই মানুষটিকে কূপ থেকে তুললেন এরপরে তাকে জিজ্ঞেস করলেন ঘটনাটি। তখন সেই ব্যক্তিটি বললেন আমি এ রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম এবং বুঝতে না পেরে আমি হঠাৎ করে কূপের মধ্যে পড়ে যাই। আমি দুইদিন যাবত এই কূপের মধ্যে রয়েছে কিন্তু আশেপাশে কেউ না থাকায় কেউ বুঝতে পারেনি এবং আমাকে উঠাতে পারেনি।
আর আমার আল্লাহর উপর ভরসা ছিল। তাই আল্লাহ আমাকে এই কাকের মাধ্যমে রিজিক দিয়েছেন।তাহলে ঠিকই আপনারা কি বুঝতে পারলেন আপনি যদি আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন এবং আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেন তাহলে যে কোন পরিস্থিতিতে আল্লাহ আপনার সাহায্য করবেন।সেজন্য আমাদের এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। আশা করছি রিজিক সম্পর্কে আলোচনা টি আপনাদের ভাল লেগেছে।
রিজিক নিয়ে আল্লাহর বাণী
রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত এ আল্লাহু কিছু বাণী দিয়েছেন। কিন্তু আমরা সেগুলো হয়তো জানিনা। তাই আমাদের জানা প্রয়োজন রিজিক নিয়ে আল্লাহর বাণী গুলো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক রিজিক নিয়ে আল্লাহর বাণী।
১। আল্লাহ বলেন এই পৃথিবীতে বিচরণকারী সকল জীবজন্তুর রিজিকের দায়িত্ব আমার।
২। রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাই রিজিকের জন্য একমাত্র আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে।
৩। আল্লাহ যার উপর সন্তুষ্ট হন তার রিজিক বৃদ্ধি করে দেন এবং যার উপর অসন্তুষ্ট হন তার রিজিক সংকুচিত করে দেন।
৪। তোমাদের কাছে যতই ধন-সম্পদ এবং রিজিক থাকুক না কেন তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত সেগুলো গ্রহণ করতে পারবে না যতক্ষণ না তা মহান আল্লাহ চাইবেন।
৫। তোমরা মহান আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় কর তাহলে তোমাদের রিজিক বৃদ্ধি করে দেয়া হবে।
রিজিক নিয়ে চিন্তা
আমাদের সমাজে অনেক মানুষ হয়েছে যারা রিজিক নিয়ে অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ে। অনেকে চিন্তা করে থাকেন আজকে খেলাম কিন্তু কালকে কিভাবে খাব। এগুলো চিন্তা করার মাধ্যমে তারা আল্লাহকে স্মরণ করা ভুলে যায়। কিন্তু এগুলো অহেতুক চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই কারণ যতদিন পর্যন্ত আপনার বরাদ্দ করা এই পৃথিবীতে রয়েছে ততদিন পর্যন্ত আপনার রিজিকের কোনো অভাব হবে না।
এবং রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাই রিজিক নিয়ে চিন্তা না করে আল্লাহর উপর
ভরসা রাখতে হবে। আপনি যদি আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন এবং আল্লাহর নেয়ামতে
শুকরিয়া আদায় করতে পারেন তাহলে আপনার নিয়ে কোন চিন্তা থাকবে না। আপনার রিজিকের
ব্যবস্থা তিনিই করবেন যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ আমাদের ইসলামের
সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমরা যেন আল্লাহর পথে থাকতে পারি।
রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াতঃ শেষ কথা
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনারা জানতে পারলেন রিজিক কাকে বলে রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত রিজিকের সূরা রিজিক বৃদ্ধির উপায় রিজিক সম্পর্কে আলোচনা রিজিক নিয়ে আল্লাহর বাণী রিজিক নিয়ে চিন্তা এ সকল বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে তাই যারা এই সকল বিষয়ে। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে আসবে। আজকের আর্টিকেল পড়ার পরে এই বিষয়ে যদি আরো কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এবং এরকম আরো তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ। ২৩৩৫৭
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url