হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য দলিল সহকারে নিচে উল্লেখ করা হবে। আর তাই, হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান সম্পর্কে যদি বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে চান, তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন। আসুন জেনে নেয়া যাক, হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
পেজ সূচিপত্র: হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান
উপস্থাপনা
প্রতি মাসে নারীদের নির্দিষ্ট সময়ে হায়েজ বা ঋতুস্রাব হবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। ইসলামের বিধান অনুসারে নারীরা ঋতুবতী হলে নির্দিষ্ট কিছু কাজকর্ম থেকে তাদেরকে বিরত থাকতে হয়। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, ঋতুবতী নারীদেরকে যে সকল কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে সেই বিষয়গুলো নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে।
অনেকের মনেই এই ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক হয় যে, হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান কি? অর্থাৎ হায়েজ অবস্থায় কোরআন পাঠ করা যাবে কিনা। আপনি যদি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামদের মাঝে মতপার্থক্য বিদ্যমান। কোন কোন ওলামায়ে কেরাম মনে করেন যে, হায়েজ অবস্থায় কোরআন পড়া যাবে না। আবার কিছু কিছু ওলামায়ে কেরামের মতামত হলো হায়েজ অবস্থায় কোরআন পড়া যাবে। যারা হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিপক্ষে মতামত পেশ করেন তাদের পক্ষেও হাদিস রয়েছে।
আবার যারা হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার পক্ষে মতামত প্রদান করেন তাদের পক্ষেও হাদিস রয়েছে। নিচে উভয় পক্ষের দলিল তুলে ধরা হবে। তাই আপনি যদি নিম্ন বর্ণিত তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়েন, হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান তাহলে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারবেন।
যে সকল উলামায়ে কেরাম মনে করেন যে, হায়েজ অবস্থায় কুরআন পাঠ করা বৈধ হবে না, তারা নিম্ন বর্ণিত হাদীসটি দলিল হিসেবে বেশ করে থাকেন। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা:) ইরশাদ করেছেন "ঋতুবতী মহিলা এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি কোরআন পড়বে না।" (সুনানে তিরমিযী)
আবু সাঈদ খুদরী (রা:) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা:) বলেছেন "মহিলারা হায়েজা অবস্থায় নামায পড়তে পারে না, এবং রোযাও রাখতে পারে না।" (সহীহ বুখারী) উপর উল্লেখিত হাদীস দ্বয় থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, হায়েজ অবস্থায় কুরআন পাঠ করা সমীচী নয়।
পক্ষান্তরে, যে সকল ওলামায়ে কেরাম মনে করেন যে হায়েজ অবস্থায় কুরআন পাঠ করা যাবে, তাদের দলিল হলো: রাসূল (সা:) আয়েশা (রা:) ঋতুবতী অবস্থায় যাবতীয় কার্যক্রম করার অনুমোদন দিয়েছেন শুধুমাত্র কাবাঘর তাওয়াফ করতে নিষেধ করেছেন। যেহেতু হজ্জের যাবতীয় কার্যক্রমের মাঝে কুরআন তেলাওয়াতও অন্তর্ভুক্ত তাই ঋতুবতী অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করাতে কোন বাধা নেই।
তবে অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম মনে করেন, হায়েজ অবস্থায় কুরআন বৈধ হবে না। যাইহোক উপরে হায়েজ অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করার বিধানসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। উপরে উভয় পক্ষের মতামত ও দলিল উল্লেখ করা হয়েছে। তাই আপনি এখন নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন যে, হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে কিনা?
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে কি
আপনি যদি উপরে উল্লেখিত তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই এতক্ষণে জানতে পেরেছেন যে, হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে কি না? কেননা হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান সম্পর্কে ইতিমধ্যেই উপরে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। যেহেতু ইতিমধ্যেই এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তাই এখানে উপর লিখিত তথ্যসমূহ পুনরায় উল্লেখ করা অর্থহীন।
যাইহোক, আপনি যদি এক কথায় জানতে চান যে, হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে কি না? তাহলে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া কঠিন। তবে অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতামত হলো হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে না। উপরে, এর স্বপক্ষে দলিল পেশ করা হয়েছে। চাইলে আপনি উপর থেকে তা দেখে নিতে পারেন।
হায়েজ অবস্থায় আমল
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হয়েছে। আর্টিকেলটির এই অংশে হায়েজ অবস্থায় যে সকল আমল করা যেতে পারে, সেই বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হবে। হায়েজ অবস্থায় অযথা সময় নষ্ট না করে বিশেষ কিছু আমল রয়েছে এই আমলগুলো করতে পারেন।
কেননা আপনি যদি এই আমলগুলো করেন তাহলে অনেক সাওয়াবের অধিকারী হতে পারবেন। হায়েজ অবস্থায় যে সকল আমল করা যেতে পারে সেই আমল সমূহের তালিকা নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। তো আসুন জেনে নেয়া যাক, হায়েজ অবস্থায় আমল সম্পর্কে বিস্তারিত।
জিকির করার অনেক ফজিলত রয়েছে। আবু মুসা আশয়ারি (রা:) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স:) বলেন, "যারা আল্লাহর জিকির করে এবং যারা আল্লাহর জিকির করে না, তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো" (সহিহ বুখারি)
ইস্তেগফার পাঠ করা: নিজের গুনাহ মাফ করে নেওয়ার এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার আর একটি মাধ্যম হলো ইস্তেগফার পাঠ করা। ঋতুবতী অবস্থায় সারাদিনের অবসর সময় অযথা হেলায় খেলায় নষ্ট না করে, এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে আপনি ইস্তেগফার পাঠ করতে পারেন। এতে করে, আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা আপনার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
ইস্তেগফারের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) ইরশাদ করেছেন, "যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগ্ফার পাঠ করে, আল্লাহতায়ালা তাকে সর্বপ্রকার বিপদাপদ হতে মুক্ত করবেন, সবরকম দুশ্চিন্তা হতে রক্ষা করবেন এবং তার জন্য এমন স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারেন না।" (সুনানে আবু দাউদ)
জান্নাত এবং জাহান্নামেকে স্মরণ করা: কোন ব্যক্তি যদি জান্নাতের নাজ নেয়ামত এবং জাহান্নামের শাস্তির সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে তাহলে সে কখনোই খারাপ কাজে লিপ্ত হতে পারবে না। হায়েজ অবস্থায় যেহেতু আপনার হাতে প্রচুর পরিমানে সময় থাকে। তাই এই সময়টিতে আপনি জান্নাত এবং জাহান্নামের বিষয়গুলো স্মরণ করতে পারেন। এতে করে আপনার মন পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং আপনার মন থেকে যাবতীয় শয়তানি ওয়াসওয়াসা দূরীভূত হয়ে যাবে।
দরুদ পাঠ করা: দরুদ পাঠ করা অত্যাধিক ছাওয়াবের কাজ। আপনি যদি দরুদ পাঠ করেন তাহলে অশেষ ছাওয়াবের অধিকারী হতে পারবেন। দরুদ পাঠ করার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, মহানবী রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, "যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পড়ে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন।" (সহিহ মুসলিম)।
দোয়া করা: যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে বারবার চায় আল্লাহ তায়ালা তাকে পছন্দ করেন। এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। আর এ কারণেই মুসলমানদের উচিত হলো সর্বদা আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং দোয়া করা। সাহাবীগণ জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে সবকিছু আল্লাহর কাছে চাইতেন। এমনকি তাদের জুতার ফিতা যদি ছিড়ে যেত সেটাও তারা আল্লাহতালার কাছে চাইতেন।
দোয়া করার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়, সালমান ফারসি (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল (সা:) বলেছেন, "নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালার সত্তার ভেতর অনেক বেশি লজ্জাশীলতার গুণ রয়েছে। তিনি না চাইতে অনেক বেশি দানকারী। যখন মানুষ চাওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালার সামনে হাত ওঠায়, তখন সেই হাতগুলো খালি ও ব্যর্থ হিসেবে ফিরিয়ে দিতে তার লজ্জা হয়।" (তিরমিজি)
উপসংহার
হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান সম্পর্কে উপরের যে সকল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে যদি আপনি সেই তথ্যগুলো মনোযোগের সাথে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই জানতে পেরেছেন যে, হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়া যাবে কি না? গুরুত্বপূর্ণ এই আর্টিকেলটি আপনি আপনার বন্ধু বান্ধব সহ সকলের সাথে শেয়ার করতে পারেন। তাহলে তারাও উপকৃত হতে পারবে। ১৬৪১৩
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url