কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার
কলা সারা বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় ফল। কলার খোসাকে ব্রিটিশরা ইংরেজিতে ব্যানানা স্কিন বলেছেন, কলার খোসা ফলের বাইরের আবরণ। এই কলার খোসা নানা জায়গায়, নানাভাবে ব্যবহার হয়ে থাকে। কলার খোসা খেলে বাজে কোলেস্টেরল কমে, চোখ ভালো থাকে। এ ছাড়া এটি হজম প্রক্রিয়াতেও সাহায্য করে। কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে আমরা তা জানবো।
এ ছাড়াও পশুদের খাদ্য হিসেবে, রান্নার একটি উপাদান হিসেবে, জল বিশুদ্ধকরণে, বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক দ্রব্য তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন কৌতুক ও হাস্যকর পরিস্থিতিতেও কলার খোসা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তো চলুন, আজকে আমরা কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানবো ও শিখবো।
আরও পড়ুন: ভিটামিন ডি ও ই একসাথে খাওয়া যাবে কি
তথ্যে যা যা রয়েছে : কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার
কলার খোসা সম্পর্কে তথ্যাবলী:
কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার হিসেবে ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা বিশ্বব্যাপী কলা এবং কলাগাছের উৎপাদন ছিল বার্ষিক ১৭৯ মিলিয়ন টন, যার নেতৃত্বে ছিল ভারত এবং চীন। বিশ্বব্যাপী মোট কলা উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৬%। অন্যান্যের মধ্যে উগান্ডা, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, নাইজেরিয়া এবং ইকুয়েডর। একবার খোসা ছাড়ানো হলে, ফলটি কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া যায় এবং খোসা সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার হিসেবে এই কলার খোসা অপসারণের ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জৈব বর্জ্য তৈরি হয়।
গবাদি পশুর খাদ্য প্রণালী:
কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার এর উপাদান অনুযায়ী কলার খোসা সাধারণত গবাদি পশু, ছাগল, শূকর, বানর, হাঁস-মুরগি, খরগোশ, মাছ, জেব্রা এবং অন্যান্য প্রজাতির জন্য ফিডস্টক হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কলার খোসায় থাকা ট্যানিনের প্রভাব নিয়ে কিছু উদ্বেগ রয়েছে যা প্রাণীদের সেবন করে। এ ছাড়াও কলার খোসা পানি বিশুদ্ধকরণের জন্যও ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ইথানল , সেলুলেস, ল্যাকেস উপাদানগুলি সার হিসেবে এবং কম্পোস্ট তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে । অপরদিকে কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার হিসাবে আরও বলা যায় তা হলো-কলার খোসা ও পিঁয়াজ রসুন চোকা দিয়ে তরল সার তৈরি করা যায়।
কলার খোসার পুষ্টিগুণ :
কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার হিসেবে প্রথমেই আমরা জানবো এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে ।কলার খোসার পুষ্টিগুণ এর পরিপক্কতা এবং চাষের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কলার খোসায় ডেজার্ট কলার খোসার চেয়ে কম ফাইবার থাকে এবং পাকার সাথে সাথে লিগনিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় (৭ থেকে ১৫% শুষ্ক পদার্থ)। গড়ে, কলার খোসায় ৬-৯% প্রোটিন এবং ২০-৩০% ফাইবার থাকে ( NDF হিসাবে পরিমাপ করা হয় )। সবুজ কলার খোসায় ৪০% স্টার্চ থাকে যা পাকার পর শর্করায় রূপান্তরিত হয়। সবুজ কলার খোসায় অনেক কম স্টার্চ (প্রায় ১৫) থাকে যখন কলার খোসার তুলনায় সবুজ থাকে, পাকা কলার খোসায় ৩০% পর্যন্ত ফ্রি শর্করা থাকে। সুতরাং উপরোক্ত কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার বিধিতে এর শুধু পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলাম। এবার জানবো এর উপকারিতা:
কলার খোসার উপকারিতা :
- কলার খোসার মধ্যে রয়েছে ট্রাইপটোফেন। এটি একটি প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড। এটি মস্তিষ্কের সুখী হরমোন বাড়াতে সাহায্য করে।
- এর মধ্যে রয়েছে সলিউবল ও ইনসলিউবল আঁশ। গবেষণায় বলা হয়, সলিউবল আঁশ শরীরের লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন, অর্থাৎ বাজে কোলেস্টেরলকে কমাতে সাহায্য করে।
- কলার খোসার মধ্যে থাকা আঁশ হজমে সাহায্য করে। এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। এটি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
- কলার খোসার মধ্যে থাকা ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- এ ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম। এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা ম্যাগনেশিয়াম শরীরে শক্তির জোগান দেয়।
- কলার খোসায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- সর্বোপরি কলার খোসাতে রয়েছে লুটেইন, যা চোখের ছানি প্রতিরোধ করে। চোখকে ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে সুরক্ষিত রাখে।
কলার খোসা দিয়ে চমৎকার বিভিন্ন সুস্বাদু রান্না:
কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার করার আরেকটি ধাপ হলো তা রান্না করেও খাওয়া হয়ে থাকে। যেমন- দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়, ভারতীয় এবং ভেনিজুয়েলার রান্নায় কলা এবং কলাগাছের খোসা রেসিপিতেও ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুন: অতিরিক্ত তামাক গ্রহণ কি ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য দায়ী
চলুন কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার অর্থাৎ কীভাবে কলার খোসা খাওয়া যেতে পারে বা রন্ধন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা যেতে পারে তার কিছু ধারণা নেয়া যাক:
সর্বেোপরি কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ বা মত পার্থ্যকও দেখা যায়। ইতিমধ্যে কলার খোসা খাওয়া নিয়ে কিন্তু অনেক বিতর্কও রয়েছে। যেমন-করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড লেভিটস্কি বলেন, মানুষ সব সময় জাদুকরি খাবার খোঁজে। খাবার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে এটি কোনো কিছুর জাদুকরি উত্তর নয়। কলার খোসার মধ্যে অনেক স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। তবে এটি যদি হজম করতে পারেন, তখনই খাওয়া ভালো।
জেনে রাখা ভালো:
পরিশেষে কলার খোসার পুষ্টিগুণ উপকারিতা ও ব্যবহার বিধি নানাভাবে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। তবে সাবধান! বর্তমানে বাজারের অধিকাংশ ফলেই পেস্টিসাইড ব্যবহার করা হয়। এটি দেহের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। তাই, যদি কলার খোসা খেতেই চান, তাহলে এতে যেন পেস্টিসাইড বা কীটনাশক না থাকে—সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন। তথ্যগুলি ভালো লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন। এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য প্রকাশিত।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url