ইঁদুরের স্বভাব অবস্থান ও এর বংশবিস্তার - ইঁদুর কী কী রোগের বাহক

স্তন্যপায়ী জীবের মধ্যে ইঁদুর অন্যতম। কেননা এই প্রাণীটি সম্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশী খুবই বিরক্ত। একটি ইঁদুর একাধারে অনেকগুলো সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায়।

যেমন-ঘরের আসবাবপত্র, খাবার-দাবার বা ফসল, দলিল-দস্তাবেজ, অসুখ-বিসুখ কি ক্ষতি/সমস্যা হয়না এই প্রাণীটির দ্বারা। ইঁদুরের ক্ষতিকারক প্রজাতী আছে ২০টি। বাংলাদেশে ১২টি প্রজাতীর মধ্যে খুব বেশি ক্ষতিকারক ৫টি এবং কম ক্ষতিকারক ৭টি প্রজাতী। আজকে আমরা ইঁদুরের স্বভাব অবস্থান ও এর বংশবিস্তার - ইঁদুর কী কী রোগের বাহক ইত্যাদি বিষয়গুলো জানবো।

পোস্ট সূচিপত্র: ইঁদুরের স্বভাব অবস্থান ও এর বংশবিস্তার - ইঁদুর কী কী রোগের বাহক

ইঁদুরের মাধ্যমে যে অসুখগুলো ছড়ায়

ইঁদুর কী কী রোগের বাহক এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়-প্লেগ, টাইফয়েড, জনডিস, আমাশয়, কুষ্ঠ, কৃমি, কিডনীরোগ, চর্মরোগ, ভাইরাস সহ প্রায় ৩০ প্রকার রোগের জীবাণুর বাহক ও বিস্তারকারী এই ইঁদুর। বিশ্বে মহামারী আকারে প্লেগ রোগ হয়েছে প্রায় ৪৪ বার এর মধ্যে ভারতেই হয়েছে প্রায় ৪১ বার।

ইঁদুরের অবস্থান

ইঁদুরের স্বভাব অবস্থান ও এর বংশবিস্তার অর্থাৎ সাধারণ ভাবে ইঁদুরের অবস্থান সর্বত্রই। তবে মানুষ যেখানে বসবাস করে সেটা ছাড়াও মাঠে, গাছে এবং সর্বোপরি মাটিতে গর্ত খুড়েও এরা বসবাস করে থাকে।

ইঁদুরের স্বভাব

ইঁদুরের স্বভাব অবস্থান ও এর বংশবিস্তার হিসেবে এরা দাঁত বড় হয়ে মারা যাবার ভয়ে সবসময়ই দাঁত দিয়ে কিছু না কিছু কাটতেই থাকে। শুধুমাত্র এই  কারণেই আমরা আমাদের বাড়িতে লেপ, তোষক, কাগজ-পত্র সহ অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র ইঁদুর-এর দন্ত প্রাকটিসের কারণে টুকরা-টুকরা পেয়ে থাকি।

আরও পড়ুন: গরিব-অসবায়দের গোপনে দান করলে যে সওয়াব পাবেন

ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী এর রহস্য উদঘাটনে ইঁদুরকেই কেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়-

ইঁদুর এর উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা

ইঁদুর ছোট প্রাণী। এদেরকে খুব সহজেই পরিচালনা ও পরিবহণ করা যায় এবং পরীক্ষা চালিয়ে যেতে সাহায্য করে। ইঁদুরের স্বভাব অবস্থান ও এর বংশবিস্তার - ইঁদুর কী কী রোগের বাহক ইত্যাদি ছাড়াও অন্যান্য বৈশিষ্টের কারণেও এর উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় প্রাণীটিকে বিভিন্ন প্রকার অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে চাপ দেয়া হয় যা হতে পারে অনেক বেশি বিরক্তিকর বা উত্তেজক।

ইঁদুরের উৎপাদন ক্ষমতা দুর্দান্ত। অন্য প্রাণীদের তুলনায় এরা খুব দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এরা খুব কম সময় বেঁচে থাকে। এজন্য খুব কম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন জেনারেশনে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়।

আরও পড়ুন: রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত

মানুষের সাথে ইঁদুরের বৈশিষ্ট্যের উল্লেখযোগ্য মিল পাওয়া যায় বলে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় ইঁদুর ব্যবহার করা হয়। ইঁদুরের স্বভাব অবস্থান ও এর বংশবিস্তার ছাড়াও আশ্চর্যজনক ভাবে সত্য যে মানুষের সাথে ইঁদুরের ৯০% জিনগত মিল পাওয়া যায়। একারণেই মানুষের বিভিন্ন প্রকার জিনের মিথস্ক্রিয়ার প্রকৃতির পরীক্ষার জন্য মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে ইঁদুর। এছাড়াও মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সাথেও ইঁদুরের অঙ্গের বা তন্ত্রের মিল পাওয়া যায়। এজন্যই মানুষের শরীরে বিভিন্ন প্রকার ঔষধের প্রভাব নির্ণয় করা যায়।

ইঁদুর জিনগত ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। এদের নির্দিষ্ট জিনকে বন্ধ করে বা খুলে রাখা যায় এবং এর ফলে কি পরিবর্তন হয় তা পর্যবেক্ষণ করা যায়। বিপরীত জিন সম্বলিত এই প্রকার ইঁদুরকে ’নকআউট ইঁদুর’ বলা হয়। কিভাবে নির্দিষ্ট জিন নির্দিষ্ট রোগের জন্য দায়ী তা নির্ণয়ে এই প্রকার ইঁদুর ভীষণ ভাবে কাজে দেয়। ইঁদুরের স্বভাব অবস্থান ও এর বংশবিস্তার - ইঁদুর কী কী রোগের বাহক হিসেবেও একে পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে।

আরেক ধরণের ইঁদুর আছে যাদের ট্রান্সজেনিক ইঁদুর বলা হয়। বাহির থেকে DNA এদের শরীরে প্রবেশ করানোর পরে প্রজনন করানো হয়। মানুষের যন্ত্রণাদায়ক রোগের ম্যাপিং মডেল তৈরিতে সাহায্য করে এই ইঁদুর।

ইঁদুরের বংশ বিস্তার

ইঁদুরের স্বভাব অবস্থান ও এর বংশবিস্তার ইত্যাদি কারণে এদেরকে অনেক বুদ্ধিমান প্রাণী বলা হয়ে থাকে। বিশেষ করে নিরাপদ আশ্রয় এবং ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য খাদ্য মজুদ করতে না পারলে সাধারণত এরা গর্ভধারণ করেনা, কিম্বা করলেও মজুদ খাদ্যের পরিমানের উপর ভিত্তি করেই গর্ভধারণের সময় বাচ্চার সংখ্যা বেশ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এদের বংশ কমে গেলে বেশি বাচ্চা এবং বংশধর বেড়ে গেলে কম বাচ্চা নেওয়ার ক্ষমতাও বেশ আয়ত্ত করতে পারে যা মানব জাতিকে হার মানায়।

ইঁদুরের স্বভাব অবস্থান ও এর বংশবিস্তার করানোর ক্ষেত্রে এরা মাত্র ৩ মাসের একটি ইঁদুর গর্ভধারণ করতে পারে এবং একসাথে ১৫টি পর্যন্ত বাচ্চা নিতে পারে। এদের গর্ভধারণকাল ১৯-২২ দিন। বাচ্চা প্রসবের পর অনুক‚ল পরিবেশ পেলে ৪৮ ঘন্টা পর পুনরায় গর্ভধারণ করতে পারে। অনুক‚ল পরিবেশ পেলে এক জোড়া ইঁদুর থেকে বছরে প্রায় ৩০০০ বংশধরের বিস্তার ঘটানো সম্ভব।

আরও পড়ুন: হায়েজ অবস্থায় কুরআন পড়ার বিধান

সুতরাং, ইঁদুরের স্বভাব অবস্থান ও এর বংশবিস্তার - ইঁদুর কী কী রোগের বাহক আলোচনায় বলা যেতে পারে, মানুষের সাথে এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যের মিল থাকার কারণে একদিকে যেমন এটি আমাদের জন্য ক্ষতিকারক প্রজাতী আবার অন্যদিকে চিকিৎসার গবেষণা সংক্রান্ত কাজে এটি অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এর প্রভাব থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যেতে পারে, যেমন-বাসায় অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র একসাথে স্তুপ করে না রাখা, বাড়ির আশেপাশে ঘন ঝোপ-জঙ্গল না রাখা, বই-খাতাপত্র যেখানেই রাখা হোক না কেন, তা যেন পরিস্কার করার মত ফাঁকা জায়গা রাখা, খাবার-দাবার উন্মুক্ত না রেখে তা যথাস্থানে এবং ঢেকে রাখা ইত্যাদি। আসলে আমরা সবাই জানি তবুও একটু সচেতন হলে এর থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ মিলতে পারে। ইঁদুরের স্বভাব অবস্থান ও এর বংশবিস্তার - ইঁদুর কী কী রোগের বাহক বিষয়টি থেকে যদি কিছু উপকার বা জানার ভান্ডারে নতুন কিছু সংযোজন ঘটে, তাহলে অবশ্যই তা অন্যদের মাঝে শেয়ার করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url