জাম ফলের যত অজানা তথ্য

জাম একটি পরিচিত ফল আমাদের সকলের কাছে। গ্রীষ্মকাল অর্থাৎ গরমকালে অন্যান্য ফলের মত জামও হয়ে থাকে। জামেরে ইংরেজি শব্দগুলো-Java plum, Jambul, Malabar plum এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো Syzygium cumini, Myrtaceae পরিবারভুক্ত একটি ফল।

জাম শব্দটি বিশেষ্য পদ। অর্থাৎ জম্বু ফল বা গাছবিশেষ (গাঢ় বেগুনী রঙের) কালজাম। জাম ফল দেখতে ১ থেকে ২.৫ সেন্টিমিটার লম্বা, প্রায় আয়তাকার। আজকে আমরা জাম ফলের যত অজানা তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো:

পোস্ট সূচিপত্র: জাম ফলের যত অজানা তথ্য

জামের নানারকম নামকরণ:

জাম ফলের যত অজানা তথ্য বলতে এই ফলটি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানান নামে পরিচিত। যেমন-জাম্বুল, জাম্ভুল, জাম্বু, জাম্বুলা, জাভা প্লাম, জামুন, কালোজাম, জামব্লাং, জাম্বোলান, কালো প্লাম, ড্যামসন প্লাম, ডুহাট প্লাম, জাম্বোলান প্লাম, পর্তুগিজ প্লাম ইত্যাদি। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এই জামের নামকরণ বিভিন্ন রকম। যেমন-তেলুগু ভাষায় একে বলা হয় নেরেদু পান্ডু, তামিল ভাষায় নাভা পাজহাম, মালায়ালাম ভাষায় বলে নাভাল পাজহাম, কন্নড় ভাষায় নেরালে হান্নু এবং ফিলিপাইনে এই জামকে বলা হয় ডুহাট। নিম্নে আমরা জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর মধ্যে তার উপকারিতা সম্পর্কে জানবো।

জামের খাদ্য উপকারিতা সমূহ:

টক মিষ্টি সুস্বাদু এই ফলটি সকলেরই কাছে বেশ জনপ্রিয়। জাম ফলের যত অজানা তথ্য বলতে এই ফলটি বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কবিরাজী বা হেকিমী চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং চীন-এ এর ব্যবহার প্রচলনটা বেশী।

জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর মধ্যে জামের বীজ দিয়ে নানান রোগের আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা করা হয়, যেমন-বহুমুত্র। ইউনানী এবং চৈনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাতেও এর ব্যবহার রয়েছে।

জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর আলোকে জানা যায়, হজমের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, মাড়ির প্রদাহ ইত্যাদি রোগে জামের বীজ, ছাল ও পাতা ব্যবহৃত হয়।

জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর মধ্যে জাম থেকে মদ ও সিরকা তৈরি করা যায়।

জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জামে বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ এবং সি আছে।

আরও পড়ুন: কলার মোচায় যা যা আছে - মহৌষধ কলার মোচা

এ ছাড়াও জাম গাছের গুঁড়ি থেকে যে কাঠ পাওয়া যায় তা দিয়ে দরজা জানালার ফ্রেম আসবাবপত্র তৈরি করা সম্ভব।

জাম ফলের যত অজানা তথ্য বলতে যাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন কম, তাদের জন্য জাম খাওয়াটা খুবই উপকারী। শরীরে জামে থাকা মিনারেলস হিমোগ্লোবিন বাড়ায় এবং সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে থাকে।

প্রায়ই দেখা যায় যে অনেকে খাবারে রুচি থাকেনা। জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর মধ্যে উপকারী বিষয়টি হচ্ছে, অবশ্যই তারা এ ফলটি খাদ্য তালিকায় সংযোজন করতে পারেন। জামের মধ্যে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি থাকায় তা মুখের রুচি ফেরাতে যথেষ্ট কার্যকরী।

জাম ফলের যত অজানা তথ্য বলতে গেলে জাম খেলে পেট ঠান্ডা থাকে এবং সর্বোপরি হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। জাম বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়ার মতো সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন: কলার থোড় স্বাস্থ্যের জন্য আশীর্বাদ - সস্তায় অধিক স্বাস্থ্যগত উপকার

গরমের মৌসুমে ত্বকে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন ধরুন-ত্বক রুক্ষ বা শুষ্ক হয়ে যাওয়া, সানবার্ন হওয়া ইত্যাদি। জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি জাম খেলে এসব সমস্যার সমাধান হয়ে থাকে। জামের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ত্বকের জ্বালাপোড়া বা ব্রনের মত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এবং এটি আপনার ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।

সাধারণত গরমের আবহাওয়াজনিত কারণে জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি হতে পারে। জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর মাধ্যমে জানা যায় যে, এ সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে জাম খেলে এই রোগগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ জামে থাকা ভিটামিন সি এবং অন্যান্য উপাদান মৌসুমের আবহাওয়া অনুযায়ী শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

জাম খাবারের পূর্বে যে সতর্কতাগুলি খেয়াল রাখতে হবে:

জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর মধ্যে অবশ্যই জানতে হবে জাম খাবারের আগে বা জাম খাওয়ার সময় অথবা পরে কী কী নিয়মাদি রয়েছে, যেগুলি না মানলে নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে-

খালি পেটে কখনোই জাম খাওয়া উচিত নয়। কারণ খালি পেটে জাম খাওয়ার কারণে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দেয়া দেয়, যেমন-বদহজম, অম্বল, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি।

জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর আলোকে পুষ্টিবিদরা বলেন, যদি অন্য কোন খাবারের সঙ্গে জাম খাওয়া হয়, তাহলে তা, শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। যেমন জাম ও হলুদ খুবই মারাত্মক জুড়ি। এই দুইটা জিনিস কখনোই একসঙ্গে খাওয়া যাবে না। লক্ষ্যণীয় যে, জাম খাওয়ার পর হলুদ দিয়ে তৈরিকৃত কোনো খাবার অবশ্যই এড়িয়ে যেতে হবে।

জাম খেলে পিপাসা লাগেই। তবে অবশ্যই জাম খাওয়ার আগে পানি পান করতে চেষ্টা করুন। এতে জামের পুষ্টিগুণ অটুট রাখতে এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় থাকবে। একান্তই যদি পানি পান করতে হয় তাহলে অন্তত আধঘণ্টা অপেক্ষা করুন।

আরও পড়ুন: পাসপোর্ট চেকিং করার নিয়ম - পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পাসপোর্ট চেক

চিকিৎসকেরা বলেছেন, জাম খাওয়ার পর অবশ্যই দুধ, পনির বা দইয়ের মতো দুগ্ধজাত খাবার যেন খাওয়া না হয়, এতে  শরীরের জন্য বিপদজনক হতে পারে। তাই জাম খাওয়ার পর কখনোই এসব খাবার খাওয়া উচিত নয়।

কখনোই খালিপেটে জাম খাবেন না। অর্থাৎ জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর আলোকে অবশ্যই জাম খাওয়ার আগে দেখে নিতে হবে যে জামটি পাকা না আধা পাকা। যদি আধাপাকা মনে হয় তাহলে না খাওয়াই ভালো।নখাবার পরপরই ভরাপেটে জাম খেলে অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।

সাধারণত কিডনি রোগীদের জাম খেতে নিষেধ করা হয়ে থাকে, তবে একান্তই যদি তারা এ ফলটি খেতে চান, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।

পরিশেষে, জাম ফলের যত অজানা তথ্য সম্পর্কে জেনে আমাদের জ্ঞানের ভান্ডারে যদি কিছু সংযোজিত হয়, তাহলে অবশ্যই তা অন্যদেরকে শেয়ার করবেন এবং সাথেই থাকবেন, যাতে করে অমরা জাম ফলের যত অজানা তথ্য এর মত আরও অনেক বিষয়ের তথ্য আপনাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url