রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ

বর্তমানে রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ। প্রতিদিনই আমরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাই যে, সাপের কামড়ে কারও না কারো মৃত্যু। বিশেষ করে কৃষকের মৃত্যু। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং কষ্টেরও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


আপনি জানেন কি ৪টি বিষধর সাপের মধ্যে একটি এই রাসেল ভাইপার, যাকে বাংলায় চন্দ্রবোড়া বা উলু বোড়া নামে ডাকা হয়ে থাকে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii। চলুন জেনে নেয়া যাক এই বিষাক্ত সাপের আদ্যপান্ত...।


কিভাবে হলো এই রাসেল ভাইপার এর নামকরণ:

১৭৯৬ সালে প্যাট্রিক রাসেল তাঁর “অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ ইন্ডিয়ান সারপেন্টস, কালেক্টেড অন দা কোস্ট অফ করোমান্ডেল” বইয়ে প্রথম এই সাপের বর্ণনা করেন। পরবর্তীতে তারই নামানুসারে এই সাপটির নামকরণ করা হয় রাসেল ভাইপার। পরবর্তীতে এই রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ হিসেবেও সমধিক পরিচিতি অর্জন করে।

রাসেল ভাইপারের বিস্তার:

জানলে অবাক হবেন যে, এই সাপটি একসময় শুধুমাত্র বাংলাদেশের রাজশাহী অঞ্চলে রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ বা বিষধর সাপ হিসেবে দেখা যেত। এবং সেই কারণেই এটিকে বরেন্দ্র অঞ্চলের সাপ বলেই পরিচিত ছিল। বর্তমানে পদ্মা অববাহিকা ধরে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জেলায় এই সাপের বিস্তৃতি ঘটেছে। বিশেষ করে রাজশাহী, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, হাতিয়া, ভোলাসহ আরও অনেক জেলাতেও বর্তমানে এই সাপের বিচরণ দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ জেলায়, বিশেষ করে নদীয়া, বর্ধমান, উত্তর চব্বিশ পরগনা ও বাঁকুড়া জেলাতে রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ হিসেবে সমধিক পরিচিত।

রাসেল ভাইপারের প্রজনন বৃদ্ধি:

রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ তা আমরা জানবো এর প্রজনন বৃদ্ধিজনিত ঘটনা দেখে। আমরা জানি যে, সাপ সাধারণত ডিম পাড়ে। কিন্তু মজার বিষয় কি জানেন, রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া কিন্তু ডিম পাড়ার পরিবর্তে সরাসরি বাচ্চা প্রস্রব করে। এর ফলে অধিকাংশ বাচ্চা বেঁচে থাকার সম্ভাবনাটা বেশি হয় এবং বছরের যে কোনো সময়ই এরা প্রজনন ঘটাতে পারে। তবে মে মাস থেকে পরের তিন মাস এদের প্রজনন সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে। অবাক বিস্ময় হলো, একটি স্ত্রী সাপ ২০টি থেকে ৪০টি পর্যন্ত বাচ্চা দিয়ে থাকে এবং ক্ষেত্রবিশেষে কোনো কোনো চন্দ্রবোড়া ৮০টি পর্যন্ত বাচ্চা জন্ম দেয়ার রেকর্ড আছে।

রাসেল ভাইপার সাপের বৈশিষ্ট্য:

রাসেল ভাইপার বৈশিষ্ট্যগুলি হল এর মাথা ত্রিভুজাকার এবং থুতুর ডগায় 'V' আকৃতির সাদা রেখার মিলন। শরীরের পৃষ্ঠতল বাদামী এবং বৃত্তাকার বা ডিম্বাকৃতির গাঢ় চিহ্নের তিনটি অনুদৈর্ঘ্য সারি রয়েছে । এর দেহ মোটাসোটা এর লেজ ছোট ও সরু। একটি প্রাপ্তবয়স্ক সাপের দেহের দৈর্ঘ্য সাধারণত এক মিটার এবং সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য ১.৮ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এই সাপের মাথা চ্যাপ্টাকৃতি, ত্রিভুজাকার এবং ঘাড় থেকে আলাদা। থুতনি ভোঁতা, গোলাকার এবং উত্থিত। নাসারন্ধ্র বড়ো।

রাসেল ভাইপার এর বাসস্থান:

চন্দ্রবোড়া সাধারণত ঘাস, ঝোপ, বন, ম্যানগ্রোভ ও ফসলের ক্ষেতে, বিশেষত নিচু জমির ঘাসযুক্ত উন্মুক্ত ও কিছুটা শুষ্ক পরিবেশে এরা বসবাস করে। রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ কারণ এটি স্থলভাগের সাপ হলেও পানিতে খুব দ্রুতগতিতে চলতে পারে। ফলে বর্ষাকালে কচুরিপানার সঙ্গে বহুদূর পর্যন্ত ভেসে এরা নিজের স্থানান্তর ঘটাতে পারে। এরা নিশাচর। খাদ্য হিসেবে এরা ইঁদুর, ছোট পাখি, টিকটিকি ও ব্যাঙ ভক্ষণ করে।সাধারণত বসতবাড়ির আশেপাশেই এর খাবার বেশি থাকায় খাবারের খোঁজে চন্দ্রবোড়া অনেক সময় লোকালয়েও চলে আসে।

এই সাপের আচার-আচরণ:

অন্যান্য সাপের মতোই রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাধারণত মানুষকে এড়িয়েই চলে। এরা কখনই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আক্রমণ করে না, কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রান্তের পরও তাকে বিরক্ত করলে প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। প্রতিবছর পৃথিবীতে যত মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়, তার উল্লেখযোগ্য একটি অংশই এই চন্দ্রবোড়ার মরণ কামড়। তাই রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ এমনটিও অনেকে বলে থাকেন।

আরও পড়ুন: ইঁদুরের বিচিত্র জীবন সম্পর্কিত তথ্যাবলী

এই সাপ মানুষকে তেড়ে এসে কামড়ায়-এ কথা শুধু গুজব মাত্র। এরা মূলত ওত পেতে থাকে শিকার ধরার জন্য এবং সেই কারণে এক জায়গায় চুপ করে পড়ে থাকে। মানুষ বা বড় কোন প্রাণী সামনে এলে S আকৃতির কুণ্ডলী পাকিয়ে খুব জোরে জোরে হিস্ হিস্ শব্দ করতে থাকে। তারপরও যদি তাকে বিরক্ত করা হয়, তবেই অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছোবল মেরে থাকে। রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ কারণ এরা ছোবল দেওয়ার সময় শরীরের সামনের দিকটা ছুঁড়ে দেয় বলে অনেকে বলে থাকেন যে, তেড়ে এসে কামড়ায়।

রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ কি না তা এর বিষের প্রভাব লক্ষ করা যেতে পারে:

চন্দ্রবোড়ার বিষ হেমোটক্সিক, রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ কেননা এই সাপ কামড় দিলে লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হয়, রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না সর্বোপরি বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি চন্দ্রবোড়ার বিষ ফুসফুস ও কিডনি নষ্ট করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। উল্লেখ্য যে, চন্দ্রবোড়া সাপের কামড়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে ক্ষতস্থান ফুলে যায়।

আরও পড়ুন: হেঁচকি ওঠে কেন - হেঁচকি থামানোর ঘরোয়া উপায়গুলি কি কি

রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ কি না তা একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, ৩১ (৭৯.৫%) রাসেলের ভাইপার কামড়ের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ৩১ জনের মধ্যে পেটে ব্যথা পরিলক্ষিত হয়েছে, যা পদ্ধতিগত এনভেনমিং দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে এবং শুধুমাত্র ৩ (২৫%) ব্যক্তিদের শুধুমাত্র স্থানীয় বিষক্রিয়া ছিল। কামড়ের পরে ৫ থেকে ২৪০ মিনিট (মানে ৭১ মিনিট) ব্যথার বিকাশ ঘটে এবং কামড়ের পরে ২য় (৪০.৭%) বা ৩য় দিন (১৮.২%) পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

শেষ কথা:

রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া এর আক্রমণ থেকে আমরা বাড়ির আশে-পাশের ঝোপ-জঙ্গল ইত্যাদি পরিস্কার রাখাটাই উত্তম, কেননা ইঁদুর, ব্যাঙ এ রকম জাতীয় প্রাণীগুলির উপস্থিতি যাতে বেশী না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় অমরা বিনোদনের জন্য নদীর ধারে বেড়াতে যাই, সেক্ষেত্রে রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ মনে করতে হবে এবং উক্ত বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যেন সন্ধ্যা বা রাতের সময় না হয়। সর্বোপরি কোন কারণে আক্রান্ত হলে নিকটস্থ হাসপাতালের শরণাপন্ন হওয়াটা অত্যন্ত বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

আরও পড়ুন: অনলাইনে অর্থ উপার্জনের ৫টি বৈধ উপায়সমূহ

আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ আলোচ্য বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ এর আলোচ্য বিষয়ে আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url