বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট

ভ্রমণ আমাদের জীবনে একটি অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার। কারণ এই ভ্রমণের সাথে বিভিন্ন সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ইতিহাস, রীতিনীতি ইত্যাদি এমন অনেক শব্দ জড়িয়ে থাকে। অনেকেই আছেন, যারা বিভিন্ন উপলক্ষ বা বিশেষ কোন দিন নির্বাচনের মাধ্যমে ভ্রমণ করে থাকেন।

ভ্রমণ বা বিখ্যাত স্থানসমূহ দর্শন যাই বলেন না কেন, এটা কিন্তু জীবনের ক্লান্তি, অবসাদ, একঘেয়েমি জীবন-যাপন প্রণালী সবকিছুই ছাপিয়ে এক অনাবিল মানসিক শান্তি, সুখ, জ্ঞান বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি সবার সাথে সবার একটা মানসিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের মধ্যেই অনেক অনেক পর্যটন কেন্দ্র (ট্যুরিস্ট স্পট), ঐতিহাসিক স্থান সর্বোপরি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এখানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট সমূহের তথ্যাদি বর্ণিত হলো:

কক্সবাজার (চট্টগ্রাম)

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট এর মধ্যে দর্শনীয় স্থান বা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রথমেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নাম উল্লেখযোগ্য। বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত এই কক্সবাজার। অপরূপ সৌন্দর্য, নীল জলরাশির শোঁ শোঁ গর্জনের মনোমুগ্ধকর আওয়াজ এবং সর্বোপরি সমুদ্রের বিশালতা যার মাঝে নিজেকে হারিয়ে যাওয়া। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশাপাশি এখানে ভ্রমণের জন্য আরও অনেক স্পট রয়েছে। যেমন- লাবণী পয়েন্ট, হিমছড়ি, ইনানী বিচ ইত্যাদি। কক্সবাজার ৩টি উপায়ে যাওয়া যায়, যেমন-সড়কপথ, রেলপথ, আকাশপথ।

সুন্দরবন (খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট)

বাংলাদেশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান বা পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে সুন্দরবন। সুন্দরবন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অখণ্ড বনভূমি বা ম্যানগ্রোভ অঞ্চল। সুন্দরবনের সৌন্দর্য সুন্দরী গাছ ছাড়াও রয়েছে গরান, বাইন গেওয়া এবং প্রাণীর ভিতর রয়েছে বাঘ, সিংহ, হরিণ, হাতি, কুমির ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ

সুন্দরবন দেখার পাশাপাশি এখানে রয়েছে আরও দর্শনীয় স্থান। যেমন-জামতলা সৈকত, মান্দার বাড়িয়া সৈকত, হিরন পয়েন্ট, দুবলার চর ইত্যাদি। সুন্দরবন যাওয়ার জন্য বাস, ট্রেন এবং লঞ্চ এই তিন উপায়ে যাওয়া যায়। সুতরাং বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট সমূহের মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম।

রাঙ্গামাটি (পার্বত্য চট্টগ্রাম)

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট সমূহের মধ্যে রাঙ্গামাটি জেলার ঝুলন্ত ব্রিজ! ৩৩৫ ফুট লম্বা বিশিষ্ট এই ব্রিজটি কাপ্তাই হ্রদের উপর নির্মিত। এই ঝুলন্ত ব্রিজটি কাপ্তাই লেকের দুই পাড়ের পাহাড়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে দিয়েছে। এই ব্রিজটিকে ‘সিম্বল অফ রাঙ্গামাটি’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।

ঝুলন্ত ব্রিজের ভিডিও দেখতে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন

এই ঝুলন্ত ব্রিজ দর্শনের পাশাপাশি আরও অন্যান্য অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেমন-শুভলং ঝর্ণা, কাপ্তাই লেক, উপজাতীয় জাদুঘর, রাইক্ষ্যং পুকুর, রাজস্থলী ঝুলন্ত সেতু, রাজবন বিহার, ঐতিহ্যবাহী চাকমা রাজবাড়ি, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র ইত্যাদি। রাঙামাটিতে  বাস, ট্রেন এবং আকাশপথ এই তিন উপায়ে যাওয়া যায়।

সেন্টমার্টিন (কক্সবাজার)

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ হিসেবে পরিচিত। সারি সারি প্রচুর পরিমাণে নারিকেল গাছ থাকায় একে নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই সারি সারি নারিকেল গাছ এবং প্রবাল দ্বীপের কারণে ভ্রমণ পিয়াসী মানুষকে দুর্নিবার আকর্ষনে কাছে টেনে নেয়। ফলে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট এর মধ্যে একটি হচ্ছে সেন্টমার্টিন।

সাজেক ভ্যালি (রাঙামাটি)

সাজেক ভ্যালিতে ২৪ ঘন্টা অবস্থান করলেই প্রকৃতির তিনটা রূপই অবলোকন করা যায়। যেমন-কখনো প্রচন্ড গরম এবং হঠাৎ করেই বৃষ্টি বা তার আগে পিছে চারিদিকে মেঘে ঢেকে যাওয়া। মোট কথা বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট এর মধ্যে সাজেক ভ্যালিতে যাওয়ার সুবাদে এখানে দেখার মতো আরও রয়েছে, যেমন-কমলক ঝর্ণা, হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত (পটুয়াখালী)

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট এর মধ্যে কুয়াকাটা দর্শনার্থীদের নিকট অত্যন্ত আকর্ষণীয়। মূলত সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার জন্য ভ্রমণ পিপাসুগণরা ছুটে আসেন কুয়াকাটায়। অর্থাৎ কুয়াকাটায়  একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখতে পাওয়া যায়। কুয়াকাটা ভ্রমণের পাশাপাশি এর আশেপাশেও যে দর্শনীয় স্থানগুলি রয়েছে, সেগুলি হলো-শুঁটকি পল্লী, ক্রাব আইল্যান্ড, গঙ্গামতির জঙ্গল, কুয়াকাটা কুয়া, সীমা বৌদ্ধ মন্দির, কেরানিপাড়া।

মহাস্থানগড় (বগুড়া)

এক সময় বাংলার রাজধানী হিসেবে পরিচিত মহাস্থানগড় একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি এবং ইতিহাসে পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট এর মধ্যে একটি।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার (নওগাঁ)

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট এর একটি পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে তালিকাভুক্ত করে। রাজা ধর্মপাল ৯ম শতকে এই বৌদ্ধ বিহার তৈরি করেন। এটি প্রায় ৩০০ বছর ধরে বৌদ্ধদের ধর্মচর্চার কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত ছিল।

আহসান মঞ্জিল (ঢাকা)

ঢাকা শহরের প্রথম ইট-পাথরের তৈরি স্থাপত্য নিদর্শন হিসাবে আহসান মঞ্জিলকে ধরা হয়ে থাকে। নওয়াব আবদুল গনি ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ এর নামানুসারেই এর নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল। এতে রয়েছে রংমহলের ২৩টি কক্ষে ৪ হাজার ৭৭টি নিদর্শন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট এর মধ্যে একটি আহসান মঞ্জিল।

ষাট গম্বুজ মসজিদ (খুলনা)

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট এর মধ্যে ষাট গম্বুজ মসজিদ অন্যতম। খান-ই-জাহান আলী ১৫০০ শতাব্দীতে ষাট গম্বুজ মসজিদটি নির্মাণ করেছেন বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। এটি ৮১টি গম্বুজ বিশিষ্ট হলেও একে ষাট গম্বুজ মসজিদ নামে নামকরণ করা হয়। ষাট গম্বুজ মসজিদ এর পাশাপাশি অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো: যেমন-বাগেরহাট জাদুঘর, খান জাহান আলীর মাজার, মংলা বন্দর, নয় গম্বুজ মসজিদ।

শ্রীমঙ্গল (সিলেট)

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট এর একটি হচ্ছে শ্রীমঙ্গল। মূলত চা বাগানের জন্য বিখ্যাত এই শ্রীমঙ্গল। এখানে মোট ৪০টি চা বাগান রয়েছে। শ্রীমঙ্গল দেখার পাশাপাশি এখানে আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, মাধবপুর লেক, রাবার বাগান, হরিণছড়া গলফ কোর্ট, ডলু বাড়ি টিপরা পল্লী, উচু-নিচু পাহাড়, মাগুরছড়া গ্যাসকূপ, হরিণছড়া গলফ কোর্ট, ডলু বাড়ি টিপরা পল্লী ইত্যাদি । সিলেটের বুজির বন এর ভিডিও দেখতে চাইলে এই লিংকে ক্লিক করুন।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর (ঢাকা)

লর্ড কারমাইকেল জাতীয় জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা। এই জাদুঘরে ৪৪টি প্রদর্শনী কক্ষ বা গ্যালারি রয়েছে এবং এই সাথে আরও রয়েছে একটি সংরক্ষণাগার, মিলনায়তন, গ্রন্থাগার, আরকাইভ, সিনেস্কেইপ এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনালয়।

শেষ কথা

ভ্রমণ করতে গেলে যেমন দরকার হয় একটি সঠিক পরিকল্পনার, ঠিক তেমনই দরকার হয় অর্থেরও। আর এই অর্থের মাপকাঠিতেই নির্ধারিত হয় ভ্রমণটি কোথায় করবো। যেমন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত সহ অনেক দেশেই এমন অনেক পরিবার আছে, যারা সারা বছর অর্থ জমিয়ে ধর্মীয় কোন ছুটি বা বিশেষ কোন দিনে ভ্রমণ করে থাকেন। অর্থাৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলিতে আমরা কি করি, নতুন জামা-কাপড় নেয়া, ভালো-মন্দ খাবার খাওয়া, আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। মনে করুন, সবাই এবার ঈদের ছুটিতে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট দর্শন করবেন। তাহলে বিষয়টি দাড়ায় এই যে, আগে পরিবারের সবার সাথে আলোচনা, মতামত, দিনক্ষণ, পরিকল্পনা ইত্যাদি ঠিক করা এবং সেই অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করা।

আরও পড়ুন: ভালোবাসা আর প্রেম কী একই বিষয় না আলাদা, ভালোবাসা ও প্রেমের মধ্যে পার্থক্য কি?

আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় ১২টি ট্যুরিস্ট স্পট বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url