শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ - উত্তোরণের উপায় কি
Mithu Sarker
24 Jun, 2024
আমাদের অনেকেরই মেদ বা ভুড়ি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে, ভিন্ন ভিন্ন কাল, পাত্র, স্থান ভেদে বেশ অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হয়। সত্যি কথা বলতে কি, এই বাড়তি মেদ বা ভুড়ি নিয়ে অনেকেই অনেক রসিকতা, কপুটতা, কদুর্যপূর্ণ ভাষা প্রয়োগ করে থাকে।
আর সবথেকে বড় যে সমস্যাটা হয়ে থাকে, তা হলো নিজের স্বাচ্ছন্দ্যময় চলাফেরা বাধাগ্রস্ত, একান্তই নিজের কাজগুলো সঠিক ভাবে সম্পন্ন হয়ে উঠেনা, ছোট-খাট অনেক বিষয়েই কারো না কারো সাহায্য নিতেই হয়। অনেকেই আবার বাড়তি মেদ বা ভুড়ি নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট থাকেন। মূল কথা হলো, মেদ বা ভুড়ি নিয়েই পৃথিবীতে কেউ জন্মগ্রহণ করেনা, এই ধরণীতে আসার পরই সবকিছুরই পরিবর্তন হয়ে থাকে। যাক, অনেক ফালতু প্যাঁচাল পারলাম, এবার জেনে নিই শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ - উত্তোরণের উপায় কি ?
পোস্ট সূচিপত্র: শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ - উত্তোরণের উপায় কি
শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ বিষয়ে গবেষকগণ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গবেষণা করেছেন।বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলিকে আমরা শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ হিসেবে ধরে নিতে পারি।
শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ হলো অলসতা। আমরা অনেক সময় আরাম ও অলসতার কারণে নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিয়ে থাকি, আবার সামান্য একটু হাঁটার পরিবর্তে কোন না কোন যানবাহন ব্যবহার করে থাকি। উত্তোরণের উপায় কি হিসেবে আমাদের অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে। বাড়িতে যদি শরীরচর্চা করার সময় না পান, তবে অন্তত হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করুন। আপনার অলস বসে থাকার চেয়ে বরং এটি ভালো। তবে সবগুলো একসঙ্গে না করে ধীরে ধীরে শুরু করুন, এতে আপনার শরীরে তা মানিয়ে যাবে।
👉 মানসিক চাপ
মানসিক চাপ শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ । যদি নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব হয়, তখন সেটা মানসিক চাপ বা স্ট্রেস তৈরি করতে পারে। এই স্ট্রেস আবার বিভিন্নভাবে বাড়তি ওজন এবং মেদ জমার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উত্তোরণের উপায় কি হিসেবে অবশ্যই আপনার মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাটা জরুরি। সেইসঙ্গে জরুরি পর্যাপ্ত ঘুম। অর্থাৎ প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। ঘুম কম হলে তা আপনার কর্টিসলকে স্পাইক করতে পারে এবং উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবারের জন্য আপনার আকাঙ্ক্ষা বাড়াতে পারে, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে পেটের চর্বি বৃদ্ধি পায়। সুতরাং নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, পছন্দের কাজ করা, মেডিটেশন ও প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে মানসিক চাপকে মোকাবেলা করতে হবে।
👉 খাদ্যাভাস
অতিরিক্ত খাওয়া এড়াতে ছোট প্লেটে খাবার নিন। খাবার প্লেটে নেওয়ার সময় পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখবেন। সৌজন্যতাবোধ থেকে বেশি খাবেন না, আনমনে খাওয়া পরিহার করুন। অর্থাৎ, শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ হিসেবে যেসব খাবার বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, সুতরাং এর থেকে উত্তোরণের উপায় কি তা, মাথায় রেখে, কী পরিমাণ খাবার খাবেন সেটি ঠিক করে নিন। কর্টিসল নামক প্রকার হরমোন আমাদের শরীরে ওজন বাড়াতে বিশেষ করে পেটের মেদ বাড়াতে তিনটি কাজ করে থাাক। যেমন-পিঠ, উরু ও নিতম্বের চেয়ে পেটে চর্বি জমতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘সেন্ট্রাল অ্যাডিপোসিটি’ বলা হয়। এ ছাড়াও গ্রেলিন নামের একটি হরমোনকে বাড়িয়ে দেয়। এই হরমোন বেশি বেশি ক্ষুধা অনুভব করার পেছনে দায়ী এবং লেপটিন নামের আরেক হরমোন নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। লেপটিন আমাদের পেট ভরে আছে এমন অনুভব করায়। ফলে এই হরমোনের কারণে সহজে পেট ভরে না, বারবার ক্ষুধা লাগে এবং বেশি খেয়ে ফেলার কারণে যে চর্বিটা তৈরি হয় সেটি শরীর মেদ হিসেবে জমিয়ে রাখে।
একবেলার খাবার আরেক বেলায় খাবেন না, এতে করে বাড়তি খাবার বা অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এর থেকে উত্তোরণের উপায় কি হিসাবে অবশ্যই বাইরের খাবার পরিহার করতে হবে। খেয়াল রাখবেন, ট্রান্স ফ্যাট দুটি উপায়ে অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবে এবং কৃত্রিমভাবে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। প্রাকৃতিকভাবে চর্বি আসে মাংস থেকে এবং দুধের তৈরি পণ্য থেকে। আর কৃত্রিমভাবে যে ট্রান্স ফ্যাট আমাদের শরীরে আসে তা থেকেই সমস্যা বেশী সৃষ্টি করে। যেমন: কেক, হিমায়িত পিজ্জা, প্যাকেটের বিস্কুট ইত্যাদি। আসলে ট্রান্স ফ্যাট খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) বাড়িয়ে ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) কমিয়ে দেয়।
👉 অ্যালকোহল
শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ এর ক্ষেত্রে অবশ্যই অ্যালকোহল বা কোমল পানীয় পরিহার করতে হবে। অর্থাৎ অনেকেই বিশেষ কোন দিন উপলক্ষে অ্যালকোহল গ্রহণ করে আবার কেউ কেউ এটিকে একটি অভ্যাসে পরিণত করেছে। সুতরাং শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ হিসেবে ওজন ও ভুড়ি কমাতে চাইলে একবারে না পারলে ধীরে ধীরে চেষ্টা করে বন্ধ করতে হবে। শরীরকে ঠিক রাখতে চাইলে অবশ্যই এই কোমল পানীয়গুলো পরিহার করতে হবে, কারণ এগুলোর মধ্যে যে সকল উপদান আছে, তা শরীরের চর্বি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে থাকে। উপরোক্ত বিষয়টি উত্তোরণের উপায় কি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
👉 চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য
শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ হিসেবে চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্যসমূহকে দায়ী করা হয়ে থাকে। কারণ চিনিতে ফ্যাট থাকে যা শরীরের চর্বি বৃদ্ধিতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে যাদের স্বাস্থ্য স্থুলতার দিকে রয়েছে তাদের মিষ্টি জাতীয় খাদ্য গ্রহণে বেশী খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ উত্তোরণের উপায় কি হিসাবে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাবেন বলে ঠিক করেন, তাহলে অন্যান্য খাবারগুলো পরিমিত পরিমাণে বা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে সামান্য কম খাবেন।
👉 সঠিক পরিমাণে প্রোটিন না খাওয়া
প্রোটিন খুব গুরুত্বপূর্ণ মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তাই মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বাদাম, ভেষজ প্রোটিন পুষ্টির ভালো উৎস। স্ট্রেইন্থ ট্রেইনিংয়ের পাশাপাশি এগুলো খাওয়া ওজন কমিয়ে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
👉 জিনগত কারণ
অনেক সময় ভুঁড়ি জিনগত কারণ হিসেবেও কাজ করতে পারে। গবেষণা সংস্থার বর্ণনানুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু জিন লেপটিনের ক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। লেপটিন হলো এমন একটি হরমোন যা ওজন এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ জিনগত কারণে শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ্য।
নারীদের পেটের মেদ কমানোর উপায়:
বয়স বাড়ার সাথে সাথে নারীদের পেশিগুলো হ্রাস পায় এবং সেখানে মেদ জমতে থাকে। মূলত তাদের ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কম হওয়ার কারণে পেটে মেদ জমে। নারীদের সাধারণত কোমড়ের অংশে বাড়তি মেদ হয়। অধিকাংশ সময় কম নড়াচড়া করা এর কারণ। উত্তোরণের উপায় কি হিসাবে নিয়মিত কার্ডিও করা অর্থাৎ, অ্যারোবিক অনুশীলন পেটের মেদ কমাতে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। দেহের নানান অসুস্থতার জন্য দায়ী পেটের মেদ। এ ছাড়াও কার্ডিও অনুশীলনের নানান উপায় রয়েছে। সবথেকে ভালো হলো বন্ধুরা মিলে একসাথে সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচদিন ব্যায়াম করলে সময়ও ভালো কাটে।
শেষ কথা
শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ - উত্তোরণের উপায় কি বলতে অবশ্যই কায়িক পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আপনি যদি বেশিরভাগ সময়ই আরাম-আয়েস ও অলসতা পছন্দ করেন তবে ভুঁড়ি কমানো আপনার জন্য প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রে উত্তোরণের উপায় কি হিসেবে খাদ্য তালিকায় আপনি ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন, গ্রিন-টিতে আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা পেটের মেদ কমাতে খুব বেশি কার্যকর, ঝাল খাবার খান, পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে, কাঁচা রসুনের কয়েক কোয়া সকালবেলা চুষে খান।
অর্থাৎ, শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ - উত্তোরণের উপায় কি হিসেবে আহার-নিদ্রা-পরিশ্রম সময়মত এবং সচেতনতার সাথে পালন করলে আমরা অনেক ঝুঁকিই থেকে মুক্তি পেরে পারি এবং সুস্থ্য থাকতে পারি।
বিঃদ্রঃ- শরীরে মেদ ভুড়ি বা চর্বি বাড়ার কারণ - উত্তোরণের উপায় কি টপিকটি শুধুমাত্র সচেতনার জন্য প্রকাশিত, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসাপত্র সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনি আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করবেন।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url