শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ
বর্তমান বিশ্ব হচ্ছে একটি ‘গ্লোবাল ভিলেজ’। আর এই গ্লোবাল ভিলেজ পরিবারের সদস্য হিসাবে আমাদের হাতে মোবাইল ফোন থাকবে না, তা কি করে হয়? যতই দিন যাচ্ছে এর উত্তরোত্তর বৃদ্ধি ঘটছে। কিন্তু এই প্রযুক্তি ব্যবহারে যদি ভবিষ্যত প্রজন্মের কোন ক্ষতি সাধিত হয় তাহলে তা চিন্তার কারণ বৈকি!
বর্তমান জীবনে আমরা কোন না কোন প্রয়োজনে সবাই কমবেশী মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা এই মোবাইল ফোনটা এমন ভাবেই ব্যবহার করে থাকি, যা আমাদের শিশুদের নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারে যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে। যদি প্রত্যেক বাবা-মাকে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে তিনি বলবেন, কই নাতো? আমরা তো ঠিক ভাবেই ব্যবহার করে থাকি। আবার কেউ কেউ বলবেন, ও তো একটু-আধটু ব্যবহার করে, তবে সব সময়ের জন্য নয়- ইত্যাদি এমন অনেক প্রশ্ন আসবে। আজকে আমরা জেনে নিই কিভাবে শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ কি কি?
শিশুদের মোবাইল ফোনের প্রতি আকৃষ্টতা:
👉 সবাই হয়তো জানেন যে, শিশুরা অনুকরণ প্রিয় হয়ে থাকে। অর্থাৎ বাবা-মা কি করছে সেদিকে তার খেয়াল থাকে সবথেকে বেশি। ফলে শিশুদের সামনে যদি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়, তাহলে অবশ্যই সেটার প্রতি তার আকৃষ্টতা বাড়বেই।
👉 অনেক সময় নিজের একটু আরাম-আয়েস বা সন্তানকে শান্ত রাখতে আমরা কিন্তু মোবাইল ফোনটা তাদের হাতে দিয়ে দেই।
👉 শিশু খাবার খেতে চাচ্ছে না। অর্থাৎ তাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাওয়ানোর জন্য আমরা মোবাইল ফোনে কোন কার্টুন বা গেম চালিয়ে দিয়ে অল্প সময়েই তাকে খাইয়ে দিই।
👉 শিশুদের খেলাধুলার প্রয়োজন হয়। আমরা অত্যধিক আধুনিক হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কোন মাঠে বা বাইরে না নিয়ে গিয়ে মোবাইল ফোনটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজেদের দায় সারি।
👉 আমি এও দেখেছি, কোন একটা হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ডাক্তারের সিরিয়ালের অপেক্ষা করছি। পাশে এক মহিলা তার ছোট্ট শিশুর হাতে মোবাইল ফোনটা দিয়ে দিয়েছে এবং শিশুটি সেটি নিয়েই এতই ব্যস্ত যে কোনদিকে তাকাবার সময় তার নাই। এতে করে শিশুটির মা হয়তো শিশুটির আবদার, ঝামেলা থেকে অনায়াসেই মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু ফলাফল কোন দিকে যাচ্ছে?
👉 অনেক শিশু তার বাবা-মার কাছ থেকে পযার্প্ত সময় পায় না বলেই মোবাইলের প্রতি আগ্রহ বেড়ে থাকে।
আরও পড়ুন: গরিব-অসবায়দের গোপনে দান করলে যে সওয়াব পাবেন
সুতরাং এসব বিষয়ে আলোচনা করলে এমন অনেক ভুড়ি ভুড়ি সমস্যা আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবে। এখন আমাদের জানতে হবে শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ কি কি?
শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ :
চোখের সমস্যা, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, অলস জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া, খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, যান্ত্রিক টাইপের আচরণ করা, মোবাইলে দেখা গেমগুলোর সাথে নিজেকে মিলিয়ে নেয়া, শিশুদের কল্পনাশক্তি বৃদ্ধিতে ঘাটতি, অতিরিক্ত বসে থাকার কারণে শরীর স্থুলকায় হয়ে যাওয়া, শিশুদের মেধাবিকাশে ঘাটতি ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিভাবে শিশুদের মোবাইল ফোনের আসক্তি কমানো যেতে পারে:
- শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ সম্পর্কে করণীয় হচ্ছে মোবাইল আসক্তি কমাতে শিশুদের বাইরে খেলতে নিয়ে যেতে হবে।
- তাদের সৃজনশীল কাজে উৎসাহ প্রদান করতে হবে। যেমন- ছবি আঁকা, গান শেখা, নাচ শেখা ইত্যাদি। অর্থাৎ শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ যা উত্তোরণের লক্ষ্যে অবশ্যই সৃজনশীল কাজের উৎসাহ প্রদান করতে হবে।
- শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ এর মধ্যে অবশ্যই রাতে ঘুমানোর অন্ততপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে শিশুর হাতে ফোন দেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন: বাচ্চাদের জিহ্বা কিভাবে পরিষ্কার করবেন
- শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ হলো শিশুদের অবশ্যই ভালোবাসা ও স্নেহ দিয়ে মোবাইল আসক্তি দূর করতে হবে।
- শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ সম্পর্কে সচেতন হোন এবং প্রতিদিন সন্তানের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় রাখুন এবং এই সময়ে শিশুর সঙ্গে গল্প করুন, প্রয়োজনে তাকে মজাদার কোন বই পড়ে শোনান।
- শিশু যদি অনলাইনে ক্লাস করে, তা হলে ইন্টারনেটে সে আর কী কী করছে, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ এর মধ্যে অবশ্যই শিশুদের ফলো-আপ করতে হবে।
- আপনার ফোন থেকে আপত্তিকর ওয়েবসাইটগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অর্থাৎ শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ সম্পর্কে সচেতন করতে আপনার মোবাইল ফোনে তথ্যমূলক পোস্টগুলো কিছু রাখুন।
- শিশুর সামনে শুধুমাত্র কাজের প্রয়োজন ছাড়া ফোন ব্যবহার না করাই ভালো। তাই, শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ এর মধ্যে খুব বেশি প্রয়োজন হলে আলাদা রুমে গিয়ে আপনার মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করুন।
শেষ কথা
পরিশেষে শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ বিষয় আলোচনায় আমরা বলতে পারি যে, প্রত্যেক বাবা-মা’দের ইচ্ছায় থাকে আমার সন্তান সুস্থ্য এবং ভালো থাকবে, ভালো কিছু করবে, সবাই তাকে ভালো বলবে, সে অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি। একটু ভাবুন তো, একটা শিশু যখন পৃথিবীতে আসে, তখন সে কোনকিছুই শিখে আসেনা। আমাদের এই বাবা-মা’দের দ্বারাই তার প্রথম শিক্ষা ঘটে। শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ সম্পর্কে একটু ভাবি তাহলে আমরা অবশ্যই আমাদের সন্তানের ভালোর জন্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে পারি, একটু ধৈর্য্য ধারণ, একটু সহ্য এবং সর্বোপরি নিজেদের আরাম-আয়েস, ভালো লাগা, নিজেদের রাগ প্রশমিত করাসহ পরিবেশকে সুন্দর করে তোলা ইত্যাদিতে যদি মনোযোগী হতে পারি, তাহলে ক্ষতি কি? কারণ আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সন্তানকে ভালো রাখা। ব্যস! এটুকু ভাবনাই আপনার জন্য যথেষ্ট হবে।
আরও পড়ুন: রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ
আশা করছি, উপরোক্ত বিষয়গুলি যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ শিশুদের মোবাইল ফোন ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকসমূহ শিরোনামভিত্তিক আলোচনায় আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url