অ্যাভোক্যাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ

অ্যাভোক্যাডো (ইংরেজি: Avocado) একটি চমৎকার ফল। আবার এই অ্যাভোকাডোকে মাখনফলও বলা হয়ে থাকে। যাই হোক মাখনফল বা অ্যাভোকাডো (বৈজ্ঞানিক নাম: Persea americana) হচ্ছে মেক্সিকো এবং মধ্য আমেরিকার স্থানীয় উদ্ভিদ, যেটি লরেসি পরিবারের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ।

এই ফলটির খোসা কুমিরের গায়ের মত অমসৃণ হওয়ায় এটা কুমির নাশপাতি হিসেবেও কেউ কেউ বলে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফল বিজ্ঞানী উইলসন পোপেনোর মতে, অ্যাভোকাডো হচ্ছে পৃথিবীর মানুষের জন্য ঈশ্বরের সৃষ্টি একটি বড় উপহার। সুতরাং আজকে আমার জেনে নিই অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ সম্পর্কে:

পোস্ট সূচিপত্র: অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ

অ্যাভোক্যাডো ফলের খাদ্যগুণ:

১। আপাতঃদৃষ্টিতে অ্যাভোক্যাডো চর্বি সমৃদ্ধ খাবার বলে মনে হলেও এই চর্বি আমাদের শরীরের জন্য হিতকর। অ্যাভোক্যাডোর এই অসাধারণ চর্বি তিন প্রকারের হয়ে থাকে, যেমন-

ক) ফাইটোস্টের: অ্যাভোক্যাডো ফলের চর্বির বেশির ভাগই ফাইটোস্টেরল। অ্যাভোক্যাডো ফল চর্বিতে বিভিন্ন ফাইটোস্টেরলের সমন্বয় ঘটায় ফলটি প্রদাহ নিরাময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। খ) পলিহাইড্রওক্সিল্যাটেড ফ্যাটি অ্যালকোহল (PFA): যদিও এই উপাদানটি সামুদ্রিক গাছেই সচারাচর পাওয়া যায় কতিপয় স্থলজ উদ্ভিদেও এটা বিদ্যমান। ফাইটোস্টেরলের মত PFA ও প্রদাহ নিরোধে সহায়তা করে। অ্যাভোক্যাডো ফলে এই উপাদানটি যথেষ্ট পরিমাণে থাকায় ফলটির মান অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। গ) অলেইক (oleic) এসিড: অ্যাভোক্যাডো বা মাখনফলে প্রচুর পরিমানে অলেইক (oleic) এসিড থাকায় এই ফলটি ওজন, হৃদরোগ এবং স্ট্রোক এর ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

২। মাখনফলে পটাশিয়ামের পরিমাণ মাত্রাধিক্য থাকায় ফলটি হৃৎপিণ্ড সবল ও সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে।

৩। এছাড়াও মাখনফলে রয়েছে প্যান্টোথেনিক এসিড, ডাইটারি ফাইবার, তামা, ফলিক এসিড, ভিটামিন B6, ভিটামিন K এবং ভিটামিন C এর ভাল উৎস।

ফলের আকার-আকৃতি:

অ্যাভোক্যাডো ফলের আকার এবং রঙ বিভিন্ন রকমের হয় – নাশপাতি আকৃতির থেকে গোলাকার এবং সবুজ থেকে কালো পর্যন্ত হতে পারে। এগুলি ৮ আউন্স (২২০ গ্রাম) থেকে ৩ পাউন্ড (১.৪ কেজি) পর্যন্তও হতে পারে। এই ফলের অভ্যন্তরীণ হলুদ-সবুজ মাংসল অংশ খাওয়া হয়, তবে খোসা এবং বীচি সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়। তবে মজার বিষয় হচ্ছে অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ এতটাই বেশি যে ২০ রকমের ভিটামিন এবং খনিজ সহ বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদান রয়েছে এই ফলের মধ্যে।

অ্যাভোক্যাডো ফলের উপকারিতা:

অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ সম্বলিত তথ্য নিম্নে বর্ণিত হলো:

👉 হার্ট ভালো থাকে

অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ হিসেবে বলা যায়, প্রতিটি অ্যাভোকাডো ফলে রয়েছে ১০০ গ্রাম বিটা-সিটোস্টেরল নামক এক প্রকার প্রাকৃতিক উদ্ভিদ স্টেরলের ৭৬ মিলিগ্রাম বিশ্বস্ত উৎস (মিলিগ্রাম) রয়েছে। শরীরের জন্য নিয়মিতভাবে বিটা-সিটোস্টেরল এবং অন্যান্য উদ্ভিদ স্টেরল খাওয়া স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে এবং সেটি হার্টের জন্য ভালো।

👉 দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে

অ্যাভোকাডোতে দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্যারোটিনয়েড উপাদান থাকে, যথা-লুটেন এবং জেক্সানথিন। লুটেইন এবং জেক্সানথিন উভয়ই চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ এর কারণে চোখে ছানিও পড়ে না।

👉 উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ:

অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ বলতে এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যার ফলে শরীরে ওজন হ্রাসে সহায়তা ছাড়াও রক্তে শর্করার স্পাইকগুলি হ্রাস করে এবং সেইসাথে আরো অনেক রোগের ঝুঁকি কমায়।

👉 বিষন্নতা ঝুঁকি হ্রাস

অ্যাভোকাডো হল ফোলেটের একটি ভাল উৎস হিসেবে কাজ করে, যা আমাদের সামগ্রিক খাদ্য তালিকাগত স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ এতটাই বেশি যে, এতে সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং নোরপাইনফ্রাইনের উৎপাদনের সাথে অতিরিক্ত হোমোসিস্টাইনকে যুক্ত করেছে, যা আমাদের মেজাজ ও ঘুম এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে থাকে।

আরও পড়ুন: জাম ফলের যত অজানা তথ্য

👉 অ্যাভোক্যাডো ওজন কমাতে দারুণ কাজ করে

অ্যাভোক্যাডো হলো ওজন কমানোর উপযোগী খাবার। অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ হিসেবে যদি আপনার ডায়েটে অ্যাভোক্যাডো ফল অন্তর্ভুক্ত করেন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই এটি আপনাকে কম ক্যালোরি খেতে সহায়তা করবে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত করে তুলবে। অ্যাভোক্যাডো ফল উচ্চ ফাইবার এবং নিম্ন কার্বস বিশিষ্ট হয়ে থাকে, যার ফলে এটি ওজন হ্রাসের প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে।

👉 কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড স্তরকে কমিয়ে দেয়

বর্তমানে বিশ্বে সর্বাধিক মৃত্যুর সাধারণ কারণ হলো হৃদরোগ। কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডস এবং উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের প্রধান কারণ। অ্যাভোক্যাডো – (১) কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে; (২) ২০% পর্যন্ত রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড হ্রাস করে; (৩) এলডিএল কোলেস্টেরল ২২% পর্যন্ত কমিয়ে আনে এবং (৪) এইচডিএল (ভালো) কোলেস্টেরল ১১% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ হিসেবে কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড স্তরকে কমিয়ে তা শরীরকে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে।

👉 হজমের উন্নতি

অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ বর্ণনায় বলা যায়, আপনি যদি প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অ্যাভোকাডো ফল রাখেন তাহলে আপনার খাবার খুব ভালোভাবে হজম হবে এবং সেই সাথে কোষ্ট্যকাঠিন্যের মত সমস্যাও দূর হবে। একটি অ্যাভোকাডোতে ১০ গ্রামের মত ফাইবার থাকে।

আরও পড়ুন: জামরুল ফল এর পুষ্টিগুণ ও খাবারের উপকারিতা

👉 ভ্রূণের স্বাস্থ্যগত কাজে সহায়তাকরণ

অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ হিসেবে ফোলেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা একজন গর্ভাবস্থাকালীন নারীর জন্য খুবই দরকারি। অর্থাৎ একজন গর্ভাবস্থাকালীন নারীর জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০ মাইক্রোগ্রাম (mcg) ফোলেটের উৎস গ্রহণ করা উচিত। তবে, সাধারণত একটি অ্যাভোকাডো ফলে ১৬০ mcg পর্যন্ত থাকতে পারে। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হয় তাহলে গর্ভপাত এবং নিউরাল টিউব অস্বাভাবিকতার ঝুঁকি হ্রাস করে।

👉 ঘুম ভালো হয়

অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ এর মধ্যে অ্যাভোকাডোতে যে ম্যাগনেসিয়াম থাকে তা শরীরের ক্লান্তি দূর করে এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে।

👉 চুল ও ত্বকের যত্নে

পেন্টোথেনিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি ৫) প্রায় প্রতিটি ত্বক এবং চুলের যত্নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রসাধনীতে  ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অর্থাৎ অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ এর মধ্যে থাকা প্যান্টোথেনিক অ্যাসিডের ৪৫% আরডিএ থাকে। যা ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতে সহায়তা করে এবং ত্বকে লাবণ্য আনতে সাহায্য করে।

অ্যাভোকাডো ফল খাওয়ার ঝুঁকিসমূহ:

ইংরেজিতে একটি কথা আছে, Excess Everything is very Bad! অর্থাৎ পরিমিত পরিমাণে অ্যাভোকাডো ফল খাওয়ার ঝুঁকি কম। কিন্তু অনেক সময় আমরা হঠাৎ করেই অনেক কিছু বেশি খেয়ে ফেলি। সেক্ষেত্রে যদি এটি অতিরিক্ত মাত্রায় খেয়ে ফেলি তাহলে তার ফলাফল খারাপের দিকে নিয়ে যেতে পারে। যেমন উদাহরণস্বরূপ-অ্যাভোকাডোতে উচ্চ চর্বিযুক্ত উপাদান রয়েছে, তাই ডায়েটে প্রচুর পরিমাণে যোগ করলে অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন বৃদ্ধি ঘটতে পারে। এ ছাড়াও অ্যাভোকাডোতে ভিটামিন কে রয়েছে, যা ওয়ারফারিনের মতো রক্ত ​​পাতলাকারীরা কীভাবে কাজ করে তা প্রভাবিত করতে পারে।

শেষ কথা

অ্যাভোক্যাডো হলো পুষ্টিতে ভরপুর একটি চমৎকার ফল, যা আধুনিক ডায়েটের সকল ধরনের পুষ্টির অভাব পূরণ করতে সহায়তা করে। এই ফলটি আমাদের অনেকের কাছে নতুন হলেও ধীরে ধীরে এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাবারের প্রতি।

আরও পড়ুন: স্ট্রবেরি ফলের পুষ্টিগুণ ও এর উপকারিতা

আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। অ্যাভোকাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url