বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান
বয়ঃসন্ধিকাল এমন একটা বিষয়, যা একটা নির্দিষ্ট সময়ে সকল ছেলেমেয়েদের মধ্যেই এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সাধারণত ছেলেদের ক্ষেত্রে ১০-১৭ বছর এবং মেয়েদের তা ৯-১৪ বছর ধরা হয়ে থাকে। অর্থাৎ শৈশব থেকে কৈশোরে উত্তরণের সময় উভয়েরই শারীরিক কিছু পরিবর্তন ঘটে। এ সময়টাতেই শরীর দ্রুত বদলায়।
ছেলেদের মাংসপেশি দৃঢ় হয়, গোঁফ-দাড়ি গজায়। পাশাপাশি মেয়েদেরও স্তন, নিতম্ব আকারে বাড়ে, ভারী হয় এবং ঋতুস্রাব শুরু হয়। ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই উচ্চতা বাড়ে, কণ্ঠস্বর বদল হয় এবং এ সময় শরীরের নানা অঙ্গে রোম গজায়। শারীরিকভাবে এই বদলের প্রভাব কিন্তু মানসিক ভাবেও অনেকটা প্রভাব ফেলে থাকে। এই সময়ে তাদের মনে নানারকম প্রশ্ন সৃষ্টি হয়, ভয়-ভীতি এবং উদ্বেগের সঞ্চার ঘটে। এ ছাড়াও অজানাকে জানার বা অচেনাকে চেনার আগ্রহ বাড়তে থাকে, ঠিক তেমনই নানারকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সূত্রপাত কিন্তু এ সময়েই হয়ে থাকে।
ঠিক এমনি একটা সময় বিভিন্ন শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন ছাড়াও অনেকেরই ত্বকে দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা। যেমন- হঠাৎ করেই ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যাওয়া, মুখে ব্রণ ওঠা, কারো কারো আবার ত্বক রুক্ষ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তাই, আজকে আমরা বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান কি কি হতে তা নিয়ে আলোচনা করবো:
বেশির ভাগ ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজ-প্রাইভেট, কোচিং ছাড়াও বিভিন্ন দরকারি প্রয়োজনে বাইরে বের হতেই হয়। ফলে সূক্ষ্ম ধূলাবালি ত্বকে জমে, এছাড়াও রোদের তাপে ত্বকে ও মাথায় ঘাম জমে এবং এর ফলে ত্বক ও চুল হয়ে যায় রুক্ষ। অর্থাৎ বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান এর ক্ষেত্রে ভারী কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করে পানিযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। সারা দিন সুযোগ না থাকলে অন্তত রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। আর দিনের বেলা অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুন: মানুষ একাকীত্বে ভোগে কেন - কখন মানুষ একাকীত্ব বোধ করে
বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান এর ক্ষেত্র হিসাবে অনেকেরই একটি অভ্যাস অছে, মুখে অ্যাকনে বা পিম্পল হলেই তা খুঁটে ফেলা। এতে মুখে দাগ বা ত্বকের ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। অর্থাৎ অ্যাকনে হলে কোনো অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল লোশন, মেডিকেটেড সোপ বা নানা ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে. তবে এর বাইরে মুখে অন্য কিছু না লাগানোই সবচেয়ে ভালো হবে।
বয়ঃসন্ধিকালে অনেকেরই মুখে ব্রণ বের হয় এবং এটি অনেকের কাছেই একটি বিরক্তের ব্যাপার। বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান হিসেবে নিমপাতা ঠাণ্ডা পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে তারপর তা ফুটাতে হবে। এরপর এই ফোটানো পানি ছেঁঁকে হালকা ঠাণ্ডা করে নিয়ে মুখ ধোয়ায় ব্যবহার করতে হবে।
বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান মনে করে কেউ যদি টাটকা চন্দনবাটা পরিষ্কার ত্বকে অর্থাৎ অ্যাকনের বা ব্রণের উপর লাগিয়ে বেশ খানিকক্ষণ বা সারারাত রেখে দিয়ে পরের দিন নিমপাতা ফোটানো পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেললে মুখের ব্রণ কমে যাবে।
এ ছাড়াও নতুন ব্রণ ওঠলে একটি বা দুটি লবঙ্গ থেঁতলে সেখানে লাগিয়ে রাখলে প্রথমে একটু জ্বলবে তবে ব্রণ কমে যাবে। বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান হিসেবে এটি জীবাণু বিনাশে বেশ সহায়ক।
বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান এর লক্ষ্যে আবার কেউ যদি সামান্য হলুদ গুঁড়া ও দারুচিনি গুঁড়া একটি বাটিতে নিয়ে তাতে অল্প পরিমাণে মধু ও পাতি লেবুর রস মিশিয়ে যদি এটি ব্রণের উপর লাগাতে পারেন তাহলে ব্রণ কমে যাবে।
আরও পড়ুন: আবেগ কী অভ্যন্তরীণ না বাহ্যিক ও ভালোবাসা আর প্রেম কী আবেগেরই একটি অংশ
অর্থাৎ বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান হিসেবে আপনি যদি এককোয়া রসুন খোসা ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে মাথার অংশ কেটে অ্যাকনে বা ব্রণের উপর ঘষুন। হালকা জ্বালাভাব হতে পারে, তবে তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ব্রণে যদি পূর্বে থেকে কোন ক্ষত থাকে, সেক্ষেত্রে রসুন বা দারুচিনি ব্যবহার না করাই শ্রেয়।
যদি দেখেন আপনার ব্রণ শুকিয়ে গেছে, তাহলে কমলালেবুর খোসা গুঁড়া করে তা দিয়ে হালকা হাতে স্ক্রাবিং করুন। এই কাজটি খুবই মৃদুভাবে ত্বকের উপর ঘষবেন যাতে ত্বকে প্রেশার না পড়ে। এর ফলে ত্বকে অ্যাকনের বা ব্রণের দাগ বসবে না। বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান হিসেবে উপরোক্ত কাজটিও করতে পারেন।
অনেকের মূখে রেডনেস দেখা যায়। অর্থাৎ রেডনেস মূলত ইনফ্ল্যামেশনের চিহ্ন। বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান এর লক্ষ্যে রেডনেস কমাতে সবচেয়ে উপকারী উপাদান হলো পুদিনাপাতা এবং অ্যালোভেরা জেলের মিশ্রণ। পুদিনাপাতার রস অ্যালোভেরা জেলে মিশিয়ে সরাসরি রেডনেসের উপর ব্যবহার করতে পারেন।
বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান হিসেবে পুদিনাপাতা এবং অ্যালোভেরা জেলের মিশ্রণ জমিয়ে বরফ করে তা মুখে ঘষুন অবশ্যই উপকার পাবেন। এছাড়া ঠাণ্ডা গ্রিন টি ব্যাগ, শসার রস ইত্যাদিও ত্বক ঠাণ্ডা রাখতে এবং ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করে।
বয়ঃসন্ধিকালে অনেক সময় ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়। ফলে মুখের জেল্লা কমে গিয়ে অনেকের মুখে কালচে ছোপ পড়ে। সুতরাং বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান এর লক্ষ্যে যদি কমলালেবুরর খোসা ছাড়াও টোমাটো ও পাকা পেঁপে এই ধরনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
বয়ঃসন্ধিকালগুলোতে মেকআপের প্রতি সবারই একটি আকর্ষণ থাকে। তবে হরহামেশাই এগুলো ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে। তদুপরি মেকআপ প্রডাক্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু লিমিট রাখা ভালো। মোটকথা বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান হিসেবে কোন মেকআপ ব্যবহার না করাই ভালো।
আরও পড়ুন: হেঁচকি ওঠে কেন - হেঁচকি থামানোর ঘরোয়া উপায়গুলি কি কি
বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান এর ক্ষেত্রে অন্তত ১৫ বছর বয়সের পর থেকে বিউটি পার্লার বা সৌন্দর্যচর্চাকেন্দ্রে গিয়ে শুধু ত্বক পরিষ্কার করে আসতে পারেন।
আপনি যদি বাড়িতে বসে রূপচর্চা করতে চান, তাহলে মুলতানি মাটি, চন্দন, কাঁচা হলুদ বা মধু দিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত একদিন এই প্যাক লাগানো প্রয়োজন। বাইরে বের হলে প্রতিদিন মৃদু ক্ষারের শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান এর লক্ষ্যে আসল কথা হলো, হাত, পা, চুল—সব পরিষ্কার রাখলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতা আরও বাড়ে।
পরিশেষে
আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান আলোচনায় আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url