চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে

চিনি (Sugar) একটি খাদ্য, যা আমাদের প্রতিনিয়তিই দরকার হয়ে থাকে। চিনির রাসায়নিক নাম সুক্রোজ এবং রাসায়নিক সংকেত C12H22O11। চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে বা যারা বেশি মিষ্টি খায় তাদের টাইপ-টু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং মরণব্যধি ক্যান্সরের ঝুঁকি থাকে বেশি বা বেড়ে যেতে পারে। আসলে চিনি একটি শর্করা জাতীয় খাদ্য।

চিনির স্বাদ মিষ্টি, কিন্তু এটি শরীরে প্রবেশের পর মিষ্টি আচরণ না-ও করতে পারে। কারণ চিনি খাওয়ার ফল অনেকের কাছেই তিক্ত আবার অনেকের কাছেই অত্যন্ত আনন্দ বা ভালোলাগার বিষয়। চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে তা হলো রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে এটি শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীর মধ্যে চর্বি জমিয়ে হৃদরোগের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে চিনিতে এমন কিছু উপাদান আছে যা শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়। চলুন জেনে নেয়া যাক চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে -


অতিরিক্ত চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে বা রোগ হয়ে থাকে:

ডায়াবেটিস: চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হলো-ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চিনি খাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ফলে হৃদরোগ, কিডনীজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি চিনি বা মিষ্টি খাবার একেবারেই খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।

ইনসুলিনের প্রতিরোধ: বেশি চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে তা হলো আমাদের অগ্ন্যাশয় আরও ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারে। ফলে শরীরে উপস্থিত কোষগুলি ইনসুলিনের প্রতিরোধ শুরু করে।

এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো ডায়াবেটিস ও অতি বিশাল দেহের অধিকারী (স্থুলকায় দেহ) ব্যক্তিদের খাবার ও পানীয়তে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। অর্থাৎ চিনি বা মিষ্টি খাবারের পরিমাপ রাখতে হবে সঠিক।

শরীরের জন্য চিনি কি ক্ষতিকর?

চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে অর্থাৎ এটি শরীরে প্রবেশ করায় সরাসরি রক্তে মিশে যায়। ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। হার্টেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়, হার্টের কর্মক্ষমতা তো কমেই, সেই সঙ্গে স্ট্রোক এবং হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকিও প্রায় ৬৫ শতাংশ বাড়ে। পাশাপাশি রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে।

চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে মনে করে বলা যেতে পারে যে চিনি কী একেবারেই খাওয়া যাবে না? অবশ্যই যাবে, তবে যে খাবারগুলিতে প্রাকৃতিক চিনি আছে তা খাওয়া যেতে পারে। যেমন-শাক-সব্জি, ফল-মূল, বিভিন্ন তরিতরকারী ইত্যাদি।

আরও পড়ুন: গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুনাগুণ

চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে এমন বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ দিনে ৯ চামচ এবং একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী দিনে ৬ চামচ চিনি খেতে পারবেন। তবে অবশ্যই এর থেকে কমিয়ে আনতে পারলে আরও ভালো।

একটি জরিপ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালে একেকজন ইসরায়েলি গড়ে ৬০ কেজি করে চিনি খেয়েছিলেন, প্রতিদিনের হিসাবে যার পরিমাণ ১৬৫ গ্রাম।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি চিনি ব্যবহারকারী দেশ:

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি চিনি খাওয়া দেশের তালিকার শীর্ষ পাঁচের মধ্যে আছে মালয়েশিয়া, বার্বাডোস, ফিজি এবং ব্রাজিল। আর সবচেয়ে কম চিনি গ্রহণকারী দেশের মধ্যে আছে উত্তর কোরিয়া।

তবে সবচেয়ে বেশি চিনি ব্যবহার করেছে ভারত। ২০১৮ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৫.৩৯ মিলিয়ন মেট্রিকটন- যা পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্যবহার করা চিনির চেয়েও বেশি।

যদি চিনি না খায় তাহলে কি হবে?

এক মাস চিনি না খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল হবে সেইসঙ্গে ইনসুলিন প্রতিরোধ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পাবে অনেকাংশে। সবথেকে বড় কথা চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে এর বিপরীতমুখী বক্তব্যতে বলা যায়, চিনি না খেলে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটতে পারে এবং গহ্বর এবং মাড়ির রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। এ ছাড়াও চিনি খাওয়া বন্ধ করলে ত্বকের স্বাস্থ্য আরও উন্নত হবে।

শেষ কথা

চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে তার মধ্যে বলা যেতে পারে আসলে চিনি খাওয়া অনেকটা নেশার মত বলা যায়। বারবার খেতে ইচ্ছে করে। যারা মিষ্টি পছন্দ করেন তারা তো মিষ্টি না খাওয়ার ব্যাপারে ঘোর বিরোধী। চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে জেনেও অনেকে মিষ্টি পছন্দ করেন। আর বাঙালী হলে তো কথায় নেই। তদুপরি চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে জেনেও আমরা প্রতিদিন চিনি নানাভাবে খেয়ে থাকি, যেমন-চা, কফি, আচার, টক রান্নায়, কোন তরকারিতে চিনি, লেবু দিয়ে চিনির শবরত, বিভিন্ন ধরনের মোরব্বা (বেল, গাজর), লাবড়া এমন অনেক খাদ্য সামগ্রী আছে যেখানে চিনি না হলেই নয়।

আরও পড়ুন: হাঁপানি রোগ হলে কি কি সমস্যা হতে পারে

অনেকে যারা ধুমপান করেন, তারা চায়ের সাথে কড়া করে চিনি মিশিয়ে চা খেয়ে থাকেন। আসলে মিষ্টি বা চিনি কোথায় নাই বলতে পারেন? মায়ের বুকের দুধ মিষ্টি, গরুর দুধ মিষ্টি, অনেক সব্জি, ফলমূল আছে, যাদের অধিকাংশই মিষ্টি। এমনকি করলা যা অত্যধিক তিতা তাতেও মিষ্টি আছে। এটা হলো তিতা মিষ্টি। সুতরাং পান থেকে চুন পর্যন্ত সবকিছুতেই মিষ্টি আছে।

চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে মনে করে একেবারেই মিষ্টি খাওয়া বাদ দিয়ে দেন তাহলে শরীরে প্রোটিন/এনার্জির স্বল্পতা দেখা দিতে পারে। অবশ্য ডায়াবেটিস/স্থুলকায় ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আলাদা। যেমন ধরুন-কোন কারণে একদিন সারাদিন কোন কিছুই আপনার খাওয়া হয়নি/ভাগ্যে জোটেনি। এ রকম মুহুর্তগুলোতে যদি আপনি বুদ্ধি করে দিনের কোন একটা সময়ে কিছু মিষ্টি খেয়ে নিতে পারেন তাহলে দেখবেন সারাদিনের কাজের এনার্জির ঘাটতি কম হচ্ছেনা এবং ক্ষুধাও কমে গেছে। 

আরও পড়ুন: মাইগ্রেন হলে কি কি সমস্যা হতে পারে - প্রতিকারগুলি কি কি

তবে অতিরিক্ত চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে তাতো খারাপ তা আমরা জানি। আর মিষ্টির ক্ষেত্রে তো কোন প্রশ্নই উঠেনা। সজাগ থাকতে হবে যাতে কাঁচা চিনি না খাওয়া, ধীরে ধীরে পরিমাণমত তা কমিয়ে আনা এবং প্রাকৃতিক চিনি বেশী করে খাওয়া। যেমন-শাক-সব্জি, ফলমূল ইত্যাদি।

আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url