স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে

স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে - এমন প্রসঙ্গে প্রথমে বলতেই হয়-দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি। প্রতিদিনই কোন না কোন পণ্যের দাম বাড়ছে। বাজারে গেলে দেখা যায় রসুনের দাম কমেছে তো পিঁয়াজের দাম বেড়েছে, তুলনামূলক ভাবে গরুর মাংস, মুরগির মাংস এগুলোর দাম অনেক বেশি বেড়েছে। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষেরা এগুলো কিনতে পারছে না বললেই চলে।

খেয়াল করবেন, শুধু খাবার জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তাই নয়– ওষুধ, ইলেকট্রনিক্স, ফার্নিচার, কসমেটিক্স, নিত্য ব্যবহার্য্য প্রতিটি জিনিসেরই দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়েছে, কিন্তু বাড়ছে না একটা জিনিস সেটা হলো আয়-রোজগার। এখন খরচের সাথে আয়ের সামঞ্জস্য করা ছাড়া সামনে কোন বিকল্প পথ খোলা নেই।

আজকের আলোচনায়, আমরা স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে সেই বিষয়ে একটি ধারণা লাভ করার চেষ্টা করি:


আরও পড়ুন: রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত 

খুব গভীর ভাবে এবং নিরিবিলি মূল বিষয়টি নিয়ে ভাবুন:

অর্থাৎ নিজের করণীয় সম্পর্কে একটি তালিকা প্রস্তুত করুন এবং ভাবতে থাকুন আপনার কি করা উচিত আর কি করা উচিত না? সবকিছুই একটা কাগজে লিখে ফেলুন এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিক চিহ্ন বা দাগ দিন বা নাম্বারিং করুন। এরপর আপনার চিন্তাগুলোকে একটি কাঠামোতে সাজিয়ে ফেলুন। মানে কোনটা আগে হবে, কোনটা পরে হবে ইত্যাদি। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, একই সময়ে নাকি আমাদের মাথায় চারটি বিষয়কে রাখতে পারি।

আরও পড়ুন: ভিটামিন ডি ও ই একসাথে খাওয়া যাবে কি

স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে অর্থাৎ আয়-ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যতা আনার জন্য কোথায় কোথায় কমবেশি করতে পারবেন তা দেখুন, না হলে প্রত্যেক মাসে আপনাকে ঋণ করতে হবে অথবা গচ্ছিত যে সঞ্চয় আছে তা ভাঙ্গতে হবে। অল্প তেলে রান্না করার অভ্যেস করুন। সুতরাং এভাবে আপনি আপনার মত করে বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করতে পারেন।

উল্লেখ্য, মনোবিজ্ঞানী জর্ডান পিটারসন দেখিয়েছেন যে, সাধারণত শিক্ষার্থীরা একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে তাদের পারফরমেন্স ভালো হয়।

ক্রয়ের আগে অবশ্যই দরদাম যাচাই-বাছাই করুন:

স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে - প্রতিনিয়তই আমরা নিত্য ব্যবহার্য বিভিন্ন মুদিপণ্য বা আসবাবপত্র, পোশাক, ইলেকট্রনিক্স, কসমেটিক্স ইত্যাদি দ্রব্যগুলি ক্রয় করে থাকি। তবে এখন থেকে যে কোন কিছু কেনার আগে অবশ্যই দরদাম করে কেনার চেষ্টা করুন। যেমন ধরুন- আপনি বিশ্বস্ততা/সম্পর্কের কারণে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোন দোকান থেকেই যাবতীয় আসবাবপত্র, ফার্নিচার ইত্যাদি ক্রয় না আর করাই মঙ্গল। একটু কষ্ট হলেও মূল (মেইন) বাজারে যান, দেখবেন সেখানে হয়তো আপনি অনেক কমে কিনতে পারবেন। এরকম প্রত্যেকটা জিনিসের ক্ষেত্রে জেনে বুঝে কিনলে- আপনার খরচ কম হবে।

যাতায়াতের ব্যাপারে সাশ্রয়ী হওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ:

পরিবহন খরচের ব্যাপারে একটু সতর্ক হতে হবে। যেমন যাদের গাড়ি আছে, তাঁদের যে সবসময় নিজের গাড়ি চালিয়েই সব জায়গায় যেতে হবে এমনটি নয়। দরকার হলে গণপরিবহন ব্যবহার করবেন। হয়তো যে দূরত্বে আপনি আগে রিকশায় যেতেন, সেখানে এখন হেঁটে হেঁটে যেতে পারেন। আপনি যখন বাইরে বের হবেন তখন অবশ্যই একসাথে অনেকগুলো কাজ ঠিক করে তারপরে বের হন। এভাবে প্রত্যেকটি বিষয়ই পূর্ব পরিকল্পনা করুন। সুতরাং, এটিও আপনাকে স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে সে বিষয়ে সহায়তা করবে।

নিজের ইচ্ছেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন:

খাবারের ব্যাপারে একটু লাগাম দিন। অর্থাৎ আপনি হয়ত মাসে কয়েকবারই কফি শপে যান, ফ্যামিলি মেম্বারদের নিয়ে ভালো রেস্টুরেন্টে খান। অনেক সময় রান্নার ঝামেলা বা বাচ্চাদের আবদারের ফলে বাইরে থেকে অর্ডার করে খাবার নিয়ে আসেন। এরকম প্রত্যেকটা জিনিসই এখন একটু মূল্যায়ন করতে শিখুন, বাইরের খাবার কমিয়ে দিন। অর্থাৎ স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে এমন বিষয়ের ক্ষেত্রে এটি একটি বাধা। যে দোকানে দাম অনেক বেশি, সেটাকে এড়িয়ে একটু কম দামি দোকানে যান, খরচ কমে যাবে।

নিত্য ব্যবহার্য্য জিনিসপত্রের প্রতি যত্নশীল হউন:

পুরনো কাপড়চোপড় এবং ফার্নিচারের প্রতি যত্নশীল হওয়াটা যৌক্তিক। আপনার যে ফার্নিচারটি আছে সেটা একেবারেই না বদলালেও চলে কি-না, এখন নতুন কাপড় না কিনলেও চলে কি-না। সবথেকে বড় কথা হচ্ছে, যদি একান্তই ফার্নিচার কিনতে হয়, তবে পুরনো অনেক সুন্দর সুন্দর ফার্নিচার কিনতে পাওয়া যায়, সেদিকেও মনোযোগ দিতে পারেন। এভাবে স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে তা অনুসরণ করতে পারেন।

মানসিক প্রশান্তি অর্জন করতে শিখুন:

আমরা অনেক সময় আমাদের বাসায় যে পুরনো (অনেক দিন ধরে পড়ে আছে) কাপড়চোপড়, আসবাবপত্র, বাসনপত্র ইত্যাদি এমনই অনেক জিনিস আছে যা সচরাচর ব্যবহার করা হয়না, সেগুলো কোন মানুষকে দান করে দিন। দেখবেন এতে করে আপনার উপকার হবে সর্বেোপরি মানসিক প্রশান্তি ঘটবে। মোটকথা স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে এর ক্ষেত্রেও এটি একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে।

খরচ কমিয়ে আনন্দ উপভোগ:

টাকা খরচ না করে কিভাবে আনন্দ করা যায়-সেটা খুঁজুন। অর্থাৎ, স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে তা মেনে চলার পরিবর্তে, যদি আপনার মন খারাপের কারণে আপনি চলে যেতে পারেন কোন রিসোর্টে কিংবা কক্সবাজার বা অন্য কোথাও। আপনি তা করতেই পারেন। কিন্তু স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে শর্তে আপনাকে ভাবতে হবে আমি টাকা খরচ করবো না, কিন্তু মজা করবো। বাচ্চাদের সবাইকে নিয়ে যদি পার্কে যান, দেখবেন ভালো লাগছে। সকালে উঠে একটু হাঁটতে বের হন, মুক্ত বাতাসে একটু হাঁটুন। আপনার আনন্দ হবে, কিন্তু খরচ কম হবে।

বাড়তি খরচ এড়ানোর চেষ্টা করুন:

এমন জিনিস ক্রয় করুন, যা আপনার খুবই দরকার, না কিনলেই নয়। তবে কোন জিনিস কেনার আগে নিজেকে কয়েকটি প্রশ্ন করুন: যেমন-জিনিসটি আপনি কেন কিনবেন? জিনিসটি কি আপনাকে কিনতেই হবে? জিনিসটি  কি না কিনে পারা যায় না? সিদ্ধান্ত নিন, কি করবেন। লক্ষ্য করবেন, এমন অনেক জিনিস আছে যা না কিনলেও চলে। সুতরাং উক্ত খরচগুলো আপনি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে তা নির্ভার করে আপনার একান্ত চাহিদা ও মনোযোগের উপর, বাড়তি চাহিদার ওপরে মনোযোগ কমিয়ে দিন। তাতে আপনার খরচ সাশ্রয় হবে। 

কিছু কিছু কাজ নিজে শিখে নিতে চেষ্টা করুন:

স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে ধারায় জীবন যাপন করতে চাইলে আপনাকে কিছু কিছু কাজ শিখে নিতে হবে। যেমন ধরুন- পানির ট্যাপে সমস্যা হয়েছে, লাইট বদলাতে হবে, বাথরুমের সাবান কেস ভেঙ্গে গেছে ইত্যাদি, এ রকম টুকিটাকি অনেক সমস্যা হয়েছে। উক্ত কাজগুলি নিজে শিখে নিলে অযথা বাইরের লোককে বাড়তি টাকা দেয়া লাগছেনা।

আয় বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারেন:

স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে জীবনযাত্রায় আপনি বাড়তি আয়ের চেষ্টা করতে পারেন। যেমন ধরুন- এখন যে কাজ করছেন তার বাইরে অতিরিক্ত কিছু কাজ করা যায় কিনা সে বিষয়ে ভাবুন, যারা ছাত্র তারা ফ্রিল্যান্সিং বা নিজের পছন্দ মতো যে কোন কাজ করতে পারেন। যাঁরা  গৃহকার্যের মত বিশাল ডিপার্টমেন্ট সামাল দেন, তারা অনলাইনে অনেক কিছু করার মাধ্যমে সংসারে বাড়তি আয় করতে পারেন। নিজের মধ্যে সুপ্ত সম্ভাবনাগুলি খুঁজে দেখুন এবং তার যথাযথ প্রয়োগ করে আপনি ঘরে বসেই অনেক অর্থ  উপার্জন করতে পারেন।

আরও পড়ুন: অনলাইনে অর্থ উপার্জনের ৫টি বৈধ উপায়সমূহ

সুতরাং, স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে নামক আলোচনায় আপনি যদি নিজের মত করে দেখে থাকেন– তাহলে দেখবেন আপনার জীবনের মান বেশি কমছে না বরং একটা সুন্দর স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন করতে পারছেন। পরিশেষে স্বল্প আয়ে কীভাবে মিতব্যয়ী জীবনযাপন করা যেতে পারে আলোচনাটি থেকে নতুন কিছু জেনে থাকেন তাহলে তা অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করবেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url