স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার

একটা বিষয়ে প্রায়ই আমাদের সাথে ঘটে থাকে তা হলো ভুলে যাওয়া, অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া। যেমন অনেকদিন পর কাউকে দেখে তার নামটাই স্মরণে না আসা, কি দিয়ে ভাত খেয়েছি তাই ভুলে গেছি, ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, বাবা-মা হয়তো কিছু আনতে বলেছিলেন তা ভুলে যাওয়া। যতই দিন যাচ্ছে এই ভুলে যাওয়া বা স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া যেন আমাদের নিত্য সঙ্গী হয়ে যাচ্ছে?

বাস্তবে নানান কারণে মানুষের এই স্মৃতিশক্তিগুলো লোপ পেয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি, যেমন-অনিদ্রা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, খাদ্যাভাস, হৃদরোগ, বদভ্যাস, অত্যধিক মানসিক চাপ ইত্যাদি। চলুন জেনে নেয়া যাক স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার :

পোস্ট সূচিপত্র: স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার
মানুষের স্মৃতিশক্তি কত প্রকার হতে পারে
কিভাবে স্মৃতি মনে রাখা যায়?
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার
শেষ কথন

মানুষের স্মৃতিশক্তি কত প্রকার হতে পারে:

স্মৃতিশক্তি হলো মানুষের তথ্য সংরক্ষণ এবং পুনরুদ্ধার করার ক্ষমতা। মানুষের চারটি সাধারণ স্মৃতি হল- সংবেদনশীল, স্বল্পমেয়াদী, ওয়ার্কিং মেমরি এবং দীর্ঘমেয়াদী মেমরি।

কিভাবে স্মৃতি মনে রাখা যায়?

আমদের ছোটবেলায় এমন কিছু অভ্যন্তরীণ সংকেত জমা হয়ে থাকে, যা কোন একটা কারণের ফলে স্মৃতিটি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। কিন্তু যখন আমরা বড় হই, তখন আমরা একটি শব্দ বা চিত্রের মতো স্মৃতিগুলি পুনরুদ্ধার করার জন্য বাহ্যিক সংকেতের উপর বেশি নির্ভর করি।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার :

সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের এই স্মৃতিশক্তিগুলোও গাঢ়ো রং থেকে ফিকে রং হতে থাকে। এ ছাড়াও জীবনে চলার পথে এমন কিছু অভ্যাসের জন্ম আমরা হয়তো জেনে অথবা না জেনে দিয়ে থাকি, যার ফল একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর মারাত্মক আকারে ভোগ করতে হয়।

অনিদ্রা: স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার এর মধ্যে মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঘুম। অর্থাৎ একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম হওয়াটা জরুরি। কিন্তু অনেকরই সেটা হয়না, আবার দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের ঘাটতিও হয়ে থাকে। ফলাফল হিসেবে আমাদের শরীরে বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ সহ দীর্ঘ সময় অনিদ্রার কারণে স্মৃতিশক্তিও কমতে থাকে। আসলে ঘুম মস্তিষ্কের কোষগুলোর বন্ধনকে শক্তিশালী করে, যা আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। যদি পর্যাপ্ত ঘুম না হয় সেক্ষেত্রে মস্তিষ্ক স্মৃতি ধরে রাখতে পারে না। অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার হিসেবে আমাদের নিয়মানুযায়ী ঘুমাতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ: বর্তমান সময়ে হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ যেন আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে এই উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কের ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ফলে এটি স্ট্রোকের মতো অন্যান্য অবস্থারও কারণ হতে পারে। সুতরাং স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার হিসেবে উক্ত বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

আরও পড়ুন: অ্যাভোক্যাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ

খাদ্যাভাস: আমাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে খাদ্যাভাস। অর্থাৎ প্রতিদিন আমরা যা খেয়ে থাকি, তাতে কি পুষ্টি আাছে কিনা, ফাইবার সমৃদ্ধ কিনা, স্নেহ-চর্বি আছে কিনা সর্বোপরি খাবারটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বিবেচনা না করেই খেয়ে ফেলি। অস্বাস্থ্যকর খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যা পরবর্তী সময়ে স্মৃতিশক্তি কমাতে সাহায্য করে ও ডিমেনশিয়াসহ মস্তিষ্কের নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার হিসেবে আপনার সামর্থ অনুযায়ী ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য, শাক-সবজি, আমিষ জাতীয় খাদ্য, বাদাম, ফলমূল ইত্যাদি খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।

বদভ্যাস: স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার হিসেবে আমরা জীবন চলার পথে অনেকেই প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে হোক কিছু বদভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি। যেমন ধরুন-ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন সহ নানাজাতীয় নেশা দ্রব্যাদি এবং হাই পাওয়ারের ঔষুধ সেবন। এই অভ্যাসগুলি আমাদের শরীরের বিশেষ বিশেষ অংগগুলো সংকুচিত করে ফেলে এবং পরবর্তীতে তা চিন্তা ও মনে রাখতে বাধা প্রদান করে থাকে। তাই স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার হিসেবে এই অভ্যাসগুলি বাদ দিতে হবে।

আরও পড়ুন: অতিরিক্ত তামাক গ্রহণ কি ফুসফুসের ক্যান্সারের জন দায়ী

বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের স্মৃতিশক্তিও লোপ পেতে পারে। আলঝেইমার হলো ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ রূপ। সাধারণত ৬৫ বছরের পরে প্রতি ৫ বছরে যা দ্বিগুণ হয়। এরকম সমস্যা দেখা দিলে জীবনধারণে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। অর্থাৎ স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার হিসেবে আপনি সঠিক সময়ে সঠিক খাবার গ্রহণ, শরীরচর্চা, সামাজিক জীবন ও ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা ইত্যাদি।

শারীরিক কসরত: নিয়মিত ব্যায়াম স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়। যারা এরই মধ্যেই ডিমেনশিয়ায় ভুগছেন, তাদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে ম্যারাথন দৌড় বেশ উপকারী হতে পারে। স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার হিসেবেও আপনি প্রতিদিন অন্ততপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা, প্রয়োজনে সাঁতার কাটা ইত্যাদি শারীরিক কাজগুলো করে যেতে পারেন।

আরও পড়ুন: মানুষ একাকীত্বে ভোগে কেন - কখন মানুষ একাকীত্ব বোধ করে

অত্যধিক মানসিক চাপ বা উদ্বেগ: আপনি যদি সবসময় উদ্বিগ্ন বা হতাশাগ্রস্ত থাকেন, তবে বিভিন্ন বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া আপনার জন্য কঠিন হতে পারে। হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি অনকটাই বেশি থাকে, যদিও বিজ্ঞানীরা এখনও ঠিক জানেন না কেন এটি ঘটে। তাই অতিরিক্ত উদ্বেগ বা হতাশায় ভুগলে দ্রুত ডাক্তার বা থেরাপিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করলে তারা স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার হিসেবে আপনাকে সঠিক উপদেশ প্রদান করবে।

শেষ কথন:

আশা করছি, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। আসলে আমাদের সমস্যাগুলো হলো, আমরা অনেক কিছুই জানি, কিন্তু মানি না। আর এই না মানা বা গায়ের জোর দেখানোর ফলাফল হয় চিকিৎসকদের নিকট ধরণা দেয়া এবং মোটা অংকের অর্থ গচ্চা দেয়া। তাই কথায় কথায় ডাক্তারের নিকট না গিয়ে যদি আমরা একটু নিয়মমাফিক বুঝে চলার চেষ্টা করি তাহলে নিজেকে সুস্থ্য রাখতে পারবো, পাশাপাশি অন্যান্য কাজেও সহযোগিতা করতে পারবো।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার সম্পর্কিত আলোচনায় আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url