কতিপয় কবিগণের রোমান্টিক কবিতাসমূহ

আমাদের মনটা এমন একটা নরম আবরণ দিয়ে তৈরি যা কাউকে দেখানো, বুঝানো বা ব্যক্ত করা যায় না। এটি সম্পূর্ণ নিজের একান্তই একটা ব্যাপার। সময়ের আবর্তনে যে কোন সময় আমাদের মন খারাপ হতে পারে।
আমরা এই মন ভালো করার জন্য বাইরে ঘুরতে যাই, গান শুনি, কবিতা পড়ি ও শুনে থাকি, অনেক সময় নিভৃতে বসে থাকি, অতীতের স্মৃতিচারণ করে থাকি, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া সহ বিভিন্ন উৎস হতে মন ভালো করার উপাত্ত বা রসদ গ্রহণ করে থাকি। এই মন ভালো করার উপায় হিসেবে অসম্ভব সুন্দর কতিপয় কবিগণের রোমান্টিক কবিতাসমূহ পাঠ করতে পারি :

পোস্ট সূচিপত্র: কতিপয় কবিগণের রোমান্টিক কবিতাসমূহ

যুগে যুগে বিভিন্ন কবিগণ প্রেম, ভালোবাসা ও রোমান্টিকতা দিয়ে তাঁদের কবিতা রচনা করেছেন। তাদের মধ্যে কতিপয় কবিগণের রোমান্টিক কবিতাসমূহ বর্ণিত হলো:

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন

‘অনন্ত প্রেম’ কবিতায়-
তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
শত রূপে শত বার
জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
গাঁথিয়াছে গীতহার,
কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,
নিয়েছ সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার। (আংশিক)

‘প্রথম চুম্বন’ কবিতায় তিনি লিখেছেন-
স্তব্ধ হল দশ দিক নত করি আঁখি–
বন্ধ করি দিল গান যত ছিল পাখি।
শান্ত হয়ে গেল বায়ু, জলকলস্বর
মুহূর্তে থামিয়া গেল, বনের মর্মর
বনের মর্মের মাঝে মিলাইল ধীরে।
নিস্তরঙ্গ তটিনীর জনশূন্য তীরে
নিঃশব্দে নামিল আসি সায়াহ্নচ্ছায়ায়
নিস্তব্ধ গগনপ্রান্ত নির্বাক্ ধরায়। (আংশিক)

আরও পড়ুন: যে ১৫টি কারণে আলা জিহ্বা ফুলে যেতে পারে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘গীতাঞ্জলি ২’ এ লিখেছেন-
মেঘের ‘পরে মেঘ জমেছে,
আঁধার করে আসে,
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
একা দ্বারের পাশে।
কাজের দিনে নানা কাজে
থাকি নানা লোকের মাঝে,
আজ আমি যে বসে আছি
তোমারি আশ্বাসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
একা দ্বারের পাশে। (আংশিক)

সমরেশ মজুমদার লিখেছেন,

তুমি যখন যেভাবেই ফিরে আসো,
তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য আমার নেই।
তুমি আমার রক্তে মিশে গেছো।
আর রক্ত কিভাবে ধুয়ে ফেলতে হয় আমি জানি না।

সুকুমার রায় ‘অন্ধ মেয়ে’ কবিতায় লিখেছেন-

গভীর কালো মেঘের পরে রঙিন ধনু বাঁকা,
রঙের তুলি বুলিয়ে মেঘে খিলান যেন আঁকা!
সবুজ ঘাসে রোগের পাশে আলোর কেরামতি
রঙিন বেশে রঙিন ফুলে রঙিন প্রজাপতি!
অন্ধ মেয়ে দেখছে না তা- নাইবা যদি দেখে-
শীতল মিঠা বাদল হাওয়া যায় যে তারে ডেকে!

তিনি ‘আহ্লাদী’ কবিতায় লিখেছেন-
হাসছি মোরা হাসছি দেখ, হাসছি মোরা আহ্লাদী,
তিন জনেতে জটলা করে ফোকালা হাসির পাল্লা দি।
হাসতে হাসতে আসছে দাদা, আসছি আমি, আসছে ভাই,
হাসছি কেন, কেউ জানে না, পাচ্ছে হাসি হাসছি তাই।
ভাবছি মনে, হাসছি কেন? থাকব হাসি ত্যাগ করে,
ভাবতে গিয়ে ফিকফিকিয়ে ফেলছি হেসে ফ্যাক করে।

জীবনানন্দ দাশ ‘১৩৩৩’ কবিতায় লিখেছেন-

তোমার শরীর-
তাই নিয়ে এসেছিলে একবার-তাপরর-মানুষের ভিড়
রাত্রি আর দিন
তোমারে নিয়েছে ডেকে কোন্ দিকে জানি নি তা-মানুষের ভিড়
রাত্রি আর দিন
তোমারে নিয়েছে ডেকে কোনদিকে জানি নি তা-হয়েছে মলিন
চক্ষু এই-ছিঁড়ে গেছি-ফেঁড়ে গেছি-পৃথিবীর পথে হেঁটে হেঁটে
কত দিন-রাত্রি গেছে কেটে!
কত দেহ এল, গেল, হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে
দিয়েছি ফিরায়ে সব-সমুদ্রের জলে দেহ ধুয়ে
নক্ষত্রের তলে

আরও পড়ুন: চিনি খেলে যেসব সমস্যা হতে পারে

এ ছাড়ও ‘অঘ্রাণ প্রান্তরে’ তিনি লিখেছেন-
‘জানি আমি তোমার দু’চোখ আজ আমাকে খোঁজে না আর পৃথিবীর’ পরে-
বলে চুপ থামলাম, কেবলি অশত্থ পাতা পড়ে আছে ঘাসের ভিতরে
শুকনো মিয়োনো ছেঁড়া;- অঘ্রান এসেছে আজ পৃথিবীর বনে;
সে সবের ঢের আগে আমাদের দুজনের মনে
হেমন্ত এসেছে তবু; বললে সে, ‘ঘাসের ওপরে সব বিছানো পাতার
মুখে এই নিস্তব্ধতা কেমন যে-সন্ধ্যার আবছা অন্ধকার
ছড়িয়ে পড়েছে জলে; কিছুক্ষণ অঘ্রাণের অস্পষ্ট জগতে
হাঁটলাম, চিল উড়ে চলে গেছে-কুয়াশার প্রান্তরের পথে

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘অকরুণ পিয়া’ তে লিখেছেন-

আমার পিয়াল বনের শ্যামল পিয়ার ওই বাজে গো বিদায়বাঁশি,
পথ-ঘুরানো সুর হেনে সে আবার হাসে নিদয় হাসি।
পথিক বলে পথের গেহ
বিলিয়েছিল একটু স্নেহ,
তাই দেখে তার ঈর্ষাভরা কান্নাতে চোখ গেল ভাসি।

এ ছাড়াও তিনি ‘অ-নামিকা’য় লিখেছেন-
তোমারে বন্দনা করি
স্বপ্ন-সহচরী
লো আমার অনাগত প্রিয়া,
আমার পাওয়ার বুকে না-পাওয়ার তৃষ্ণা-জাগানিয়া!
তোমারে বন্দনা করি...
হে আমার মানস-রঙ্গিণী,
অনন্ত-যৌবনা বালা, চিরন্তন বাসনা-সঙ্গিনী!
তোমারে বন্দনা করি..
নাম-নাহি-জানা ওগো আজো-নাহি-আসা!
আমার বন্দনা লহ, লহ ভালবাসা...

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় লিখেছেন-

কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি
ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল
শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে
তারপর কত চন্দ্রভুক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী
আর এলোনা
পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি।

তিনি ‘তুমি যেখানেই যাও’ কবিতায় বলেছেন-
তুমি যেখানেই যাও
আমি সঙ্গে আছি
মন্দিরের পাশে তুমি শোনোনি নিঃশ্বাস?
লঘু মরালীর মতো হাওয়া উড়ে যায়
জ্যোৎস্না রাতে

হেলাল হাফিজ ‘তোমাকেই চাই’ কবিতায় লিখেছেন-

আমি এখন অন্য মানুষ ভিন্ন ভাবে কথা বলি
কথার ভেতর অকথিত অনেক কথা জড়িয়ে ফেলি।
এবং চলি পথ বেপথে যখন তখন।

এ ছাড়াও তিনি ‘অনির্ণীত নারী’তে লিখেছেন-
নারী কি নদীর মতো
নারী কি পুতুল,
নারী কি নীড়ের নাম
টবে ভুল ফুল।

নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন ‘নাম দিয়েছি ভালবাসা’

আমরা মিশিনি ভালবেসে সব
মানুষ যেভাবে মেশে,
আমরা গিয়েছি প্রাজ্ঞ আঁধারে
না-জানার টানে ভেসে।
ভাসতে ভাসতে আমরা ভিড়িনি
যেখানে নদীর তীর,
বুনোবাসনার উদবেল স্রোতে
আশ্লেষে অস্থির।

শেষ কথা

সময়ের আবর্তে প্রকৃতি তার রূপ, রঙ বদলিয়ে থাকে। ঠিক তেমনি আমরা আমাদের এই মন নামক বস্তুটাকে ভালো বা হাসিখুশি রাখতে কতিপয় কবিগণের রোমান্টিক কবিতাসমূহ এর শরণাপন্ন হতে পারি। আসলে রোমান্টিক কবিতাসমূহ একটি অপূর্ব মাধ্যম যা আমাদের সাহিত্যে প্রেমের মাধুর্যের দুনিয়া উপস্থাপন করে।

আরও পড়ুন: রাসেল ভাইপার একটি আতঙ্কের সাপ

আশা করছি, কতিপয় কবিগণের রোমান্টিক কবিতাসমূহ পাঠ করে আপনাদের মন ভালো হলেই  আমাদের প্রচেষ্টা স্বার্থক হবে। আপনাদের উপকারে আসবে। কতিপয় কবিগণের রোমান্টিক কবিতাসমূহ বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এ রকম আরো কতিপয় কবিগণের রোমান্টিক কবিতাসমূহ এর তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ কতিপয় কবিগণের রোমান্টিক কবিতাসমূহ পাঠে আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url