ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে চেনেন না বর্তমানে এমন কাউকে পাওয়াই মুশকিল। যুগে যুগে তাঁর অমরকৃতি সর্বজন স্বীকৃত। আজকে আমরা এই মহান কীর্তিমান মানুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য জানতে চেষ্টা করবো।
বিদ্যাসাগর মহাশয় একাধারে ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক, বিধবা বিবাহ ও স্ত্রী শিক্ষার প্রচলনকারী, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক অভিশাপগুলিকে সমাজ থেকে দূরীকরণে তার অক্লান্ত পরিশ্রম, সংগ্রাম যা আজও স্বর্ণাক্ষরে আলোচিত হয়ে থাকে সর্বদাই শ্রদ্ধার সঙ্গে। ঊনবিংশ শতকের একজন বিশিষ্ট বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার হিসেবে তাঁর সমধিক পরিচিত ছিল ।
পোস্ট সূচিপত্র: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর ছোটবেলা
- শিক্ষাজীবন
- পেশাগত জীবন
- বিধবা বিবাহ আইন পাস
- বিদ্যাসাগরের উল্লেখযোগ্য সাহিত্য
- প্রেস আবিষ্কার করেন?
- শেষ কথা
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য :
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য বলতে তিনি ২৬ সেপ্টেম্বর ১৮২০ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে একটি হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। পিতার নাম ছিল ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতার নাম ছিল ভগবতী দেবী। বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রয়াত হন ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই, রাত্রি দুটো আঠারো মিনিটে তার কলকাতার বাদুড়বাগানস্থ বাসভবনে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর ১০ মাস ৪ দিন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর ছোটবেলা :
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য এর মধ্যে ছোটবেলা থেকেই ঈশ্বরচন্দ্র তাঁর মায়ের মতই পেয়েছিলেন এক নরম মন , আর বাবা ঠাকুরদাসের কাছ থেকে পেয়েছিলেন পড়াশুনোয় বিপুল আগ্রহ-উদ্দীপনা।আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে শীর্ষ ১০টি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
পড়াশুনার তাগিদে কলকাতায় যাবার পথে ঘটল একটা মজার ঘটনা। আগে রাস্তার ধারের পাথরের উপরে ইংরেজিতে লেখা থাকতো মাইলের সংখ্যা। ব্যস, হয়ে গেলো, ঈশ্বরচন্দ্র সেগুলি দেখিয়ে তাঁর বাবাকে বার বার প্রশ্ন করে জেনে নিলেন ইংরেজি এক থেকে দশ পর্যন্ত সংখ্যাগুলি। তিনি বন্ধুদের সঙ্গে লাঠি খেলতে, কবাডি খেলতে, কুস্তি লড়তে ভালোবাসতেন। তাঁর মাথাটা বড় ছিল বলে বন্ধুরা তাঁকে ঠাট্টা করে ‘যশুরে কৈ’নামে ডাকত। যেহেতু তৎকালীন সময়ে যশোর জেলার কৈ মাছের মুড়ো খুব বড় হতো! মজার বিষয় হলো কিন্তু এত ঠাট্টা-মশকরা করা সত্ত্বেও তিনি পরীক্ষাতে প্রতিবছর বৃত্তি পেতেন। সুতরাং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে।
শিক্ষাজীবন:
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য এর মধ্যে তাঁর মাত্র চার বছর নয় মাস বয়সে পিতা ঠাকুরদাস ঈশ্বরচন্দ্রকে গ্রামের সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন। ১৮২৮ সালের নভেম্বর মাসে মাত্র আট বছর বয়সে পাঠশালার শিক্ষা সমাপ্ত করে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর বাবার সঙ্গে কলকাতায় যান। এরপর ১৮২৯ সালের ১ জুন সোমবার কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি।আরও পড়ুন: বয়ঃসন্ধিকালে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান
ব্যাকরণ পড়ার সময় ১৮৩০ সালে সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি শ্রেণিতেও ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র। ১৮৩৪ সালে তিনি ইংরেজি ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য ৫ টাকা মূল্যের পুস্তক পারিতোষিক হিসেবে পান। ১৮৩৬ সালে অলংকার পাঠ শেষ করেন। ১৮৩৮ সালে সমাপ্ত করেন বেদান্ত পাঠ। ১৮৩৯ সালের ২২ এপ্রিল হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষা দেন ঈশ্বরচন্দ্র। ১৮৪০-৪১ সালে ন্যায় শ্রেণিতে পঠনপাঠন করেন ঈশ্বরচন্দ্র।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য এর আলোকে বলা যায়, অসম্ভব মেধাসম্পন্ন এই মহান ব্যক্তি সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৩৯ সালে বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি ছিল তার। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সহজপাঠ্য করে তোলেন। এ ছাড়াও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য এর বিষয় বলতে গেলে বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার তিনিই। তাকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী বলে অভিহিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি রচনা করেছেন যুগান্তকারী শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয়-সহ একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা। নারীমুক্তির আন্দোলনেও তার অবদান উল্লেখযোগ্য।
পেশাগত জীবন:
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য সম্পর্কে বলা যায়, তিনি ১৮৪১ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সেরেস্তাদার (প্রধান পন্ডিত) পদে যোগদান করেন। এরপর তিনি ১৮৪৬ সালে সহকারী সম্পাদক পদে সংস্কৃত কলেজে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি আবারও ১৮৪৯ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের হেড রাইটার ও কোষাধ্যক্ষ পদে যোগ দেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর 'ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা' নামে নিজ নাম স্বাক্ষর করতেন৷বিধবা বিবাহ আইন পাস:
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীনকাল সময়ে তৎকালীন ভারতের গভর্ণর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির সহায়তায় দ্য হিন্দু উইডো'স রিম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৮৫৬ আইনটি ২৬ জুলাই ১৮৫৬ এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ আইনের বলে ভারতবর্ষের সকল বিচার ব্যবস্থায় হিন্দু বিধবাদের পুনর্বিবাহ বৈধ করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, এই আইনটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী করে তোলে।বিদ্যাসাগরের উল্লেখযোগ্য সাহিত্য:
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য সম্পর্কে বলতে গেলে তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যগুলোর মধ্যে কথামালা, বোধোদয়, আখ্যান মঞ্জরী, বেতাল পঞ্চবিংশতি, সীতার বনবাস, মেঘদূত, বর্ণপরিচয়, আখ্যানমঞ্জরী ব্যাকরণ কৌমুদী, শকুন্তলা, বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (২ খণ্ডে), বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব (২ খণ্ডে), অতি অল্প হইল(১৮৭৩), আবার অতি অল্প হইল (১৮৭৩), ব্রজবিলাস(১৮৮৪)। এছাড়াও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আত্মজীবনীমূলক বর্ণনাধর্মী অসমাপ্ত রচনার নাম 'আত্মচরিত' । এ গ্রন্থে তিনি তাঁর শৈশব জীবনের কথা, পিতা, পিতামহ ও জননীর কথা বর্ণনা করেছেন।প্রেস আবিষ্কার করেন?
সংস্কৃত প্রেস অ্যান্ড ডিপোজিটরি ১৮০৭ সালে বাবুরাম দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি পূর্ব বাংলার হরিরাম কলেজের শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও মদন মোহন তর্কালঙ্কার ৬০০ টাকা ঋণ নিয়ে উন্নত যন্ত্রপাতি ও কর্মপরিবেশ দিয়ে তা হালনাগাদ করেন। অর্থাৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য বলতে তিনি প্রেস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
শেষ কথা:
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মানেই আমাদের মনের পর্দায় ২টা বিষয় ভেসে উঠে তা হলো-মায়ের প্রতি ভালোবাসা, আত্মত্যাগ এবং বিধবা বিবাহ আইন। অর্থাৎ সেই কবে পড়েছি তার মায়ের প্রতি ভালোবাসার কারণে ঝড়-বৃষ্টি, উত্তাল নদী অন্ধকারে সাঁতরিয়ে মায়ের কাছে যাওয়া যা আজও শ্রদ্ধায় মাথা নুইয়ে যায়। আর অপরটি হচ্ছে তথাকথিত সনাতন ধর্মাবলম্বীর বিধবা বিবাহ আইন। অর্থাৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য যা জানাটা অত্যন্ত জরুরী।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর মৃত্যুর পর ১৮৯১ সালের সেপ্টেম্বরে তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিদ্যাসাগর চরিত প্রকাশ করেন পুত্র নারায়ণচন্দ্র বিদ্যারত্ন।
আরও পড়ুন: অনলাইনে অর্থ উপার্জনের ৫টি বৈধ উপায়সমূহ
আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url