সর্দিজ্বর হলে কি করণীয় - কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
আমাদের দেহ নামক যন্ত্রটার হাজারো সমস্যা। এই যন্ত্রটা যেমন ভালো থাকে আবার কারণে-অকারণেও অনেক সমস্যাও তৈরি করে ফেলে, যা আমাদের বুঝে উঠতেই বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়।
আমরা প্রায়ই একটা সমস্যায় ভুগে থাকি তা হলো সর্দি এবং সর্দি হলেই তার সাথে জ্বর। অর্থাৎ সর্দিজ্বর হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি হওয়া রোগগুলোর মধ্যে একটি। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলে, বছরে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ ৪ থেকে ৬ বার এবং শিশুদের ১০ থেকে ১২ সর্দিজ্বর হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নিই এর বিস্তারিত:
পোস্ট সূচিপত্র: সর্দিজ্বর হলে কি করণীয় - কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
- সর্দি কেন হয়
- সর্দিজ্বরের উপশমগুলি কি
- কীভাবে সর্দিজ্বর সংক্রমিত হয়ে থাকে
- কিভাবে সর্দি থেকে দ্রুত উপশম লাভ করা সম্ভব
- চিকিৎসা
- শেষ কথা
সর্দি কেন হয়
সর্দি সাধারণত বছরের যে কোন সময় হতে পারে তবে শীতেই বেশী হয়ে থাকে। কারণ শীতে ভাইরাসগুলো দ্রুত সংক্রমিত হওয়ার মতো পরিবেশ পায় বলে শীতের সময় সর্দি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ পায়। আর সে কারণেই শীতের সময়ই মানুষের বেশি সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন যে মোট সাতটি গোত্রের ভাইরাসের কারণে সর্দিজ্বর হয়ে থাকে। বাস্তবিকপক্ষে জীবদ্দশায় একজন মানুষের ২০০ বারেরও বেশি সর্দি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সর্দিজ্বরের উপশমগুলি কি
নাক বন্ধ হয়ে হওয়া,নাকে সর্দি থাকা, গলা ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, ক্লান্তি, মাংসপেশীতে ব্যাথা, কাশি- হাঁচি, জ্বর, কানে ও মুখে চাপ অনুভব করা এবং স্বাদ ও ঘ্রাণের অনুভূতি কমে আসা, নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া।
কীভাবে সর্দিজ্বর সংক্রমিত হয়ে থাকে
👉 সর্দি সচরাচর বায়ুবাহিত ক্ষুদ্র কণিকা দ্বারা রোগীর নাকের নিঃসৃত রসের সংস্পর্শে এলেই তা সংক্রমিত হয়ে থাকে;
👉 সংক্রামক রোগীর সংস্পর্শে আসা মাত্রই তা সংক্রমিত হয়ে থাকে;
👉 অনেক সময় রোগীর বিছানা ও জামাকাপড় প্রভৃতির সংস্পর্শে এলেও তা সংক্রমিত হয়ে থাকে;
👉 বায়ুবাহিত ক্ষুদ্র কণিকার হাত থেকে হাতে অথবা হাত থেকে বস্তুতে এবং বস্তু থেকে হাতে ছড়ানোর মাধ্যমে তা বেশি তাড়াতাড়ি সংক্রামিত হয়ে থাকে;
👉 আক্রান্ত ব্যক্তির পাশাপাশি স্থানে বসা বা বসে থাকা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে;
👉 রাইনো ভাইরাসজনিত কারণে সর্দি প্রথম দিনে ছড়ায় বেশি
কিভাবে সর্দি থেকে দ্রুত উপশম লাভ করা সম্ভব
ঘুম বা বিশ্রাম : ঘুম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে থাকে, কাজেই ঠান্ডা বা সর্দিজ্বরের সময়ে বিশ্রাম বা বেশি ঘুমালে দ্রুত আরোগ্য লাভ সম্ভব হয়ে ওঠে।
উষ্ণ পরিবেশে থাকা : সর্দিজ্বরের সময় অবশ্যই উষ্ণ পরিবেশে থাকা বা গরম পোশাক পড়ে থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন: দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ
প্রচুর পানি পান করা : প্রচুর পরিমাণে পানি বা ফলের রস পানের মাধ্যমে যদি শরীরের পানিশূন্যতা রোধ করা যায় দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যেতে পারে।
গরম পানির ভাপ : পানি গরম করে তার বাষ্পটি নাক দিয়ে গ্রহণ করার চেষ্টা করুন।
আমলকী বা লেবু খান : সর্দিজ্বর হলে ভিটামিন সি জাতীয় খাদ্য যেমন আমলকী বা লেবু খেতে হবে বেশি পরিমাণে।
তুলসী পাতা ও মধু : তুলসীপাতার রস, মধু বেশ উপকারী।
ঠান্ডাজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন : এ সময়টাতে অবশ্যই কোন ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না।
গরম স্যুপ : মুরগির গরম স্যুপ খাওয়াতে শ্লেষ্মা হয় তরল ও পাতলা, শ্লেষ্মা বেরোয় সহজে ও অবাধে এবং পানি শূন্যতাও রোধ হয়।
চিকিৎসা
- যেসব চিকিৎসা উপসর্গ নিরসনে সহায়তা করে তার মধ্যে ব্যথা কমানো ও জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল দেয়া যেতে পারে।
- বয়স্কদের বেলায় স্বল্প সময়ের জন্য নাকের ড্রপ ব্যবহার করলে সামান্য উপকার পাওয়া যায়।
- এক্ষেত্রে প্রথম এক বা দুই দিন হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ উপসর্গ উপশমে কাজ করে থাকে, তবে দীর্ঘস্থায়ী কোনো উপকার পাওয়া যায় না, বরঞ্চ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসাবে তন্দ্রাচ্ছন্ন বা ঝিমুনিভাব দেখা দেয়।
- বয়স্ক ব্যক্তিদের নাকের ড্রপের মধ্যে সিউডোএফিড্রিন কার্যকর।
আরও পড়ুন: কোমর ব্যথা হলে কি করণীয় - নিরাময় পদ্ধতিগুলি কি কি
- হঠাৎ সর্দি পরিস্থিতির অবনতি ঘটে বা ডায়বেটিস, হৃদরোগ, কিডনি বা ফুসফুসের রোগ থাকলেও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
- টানা সাতদিনের বেশি সর্দিজ্বর থাকলে বা টানা তিনদিনের বেশি সর্দির সাথে উচ্চমাত্রায় জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।
- শিশুদের তিনদিনের বেশি সর্দি থাকলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
শেষ কথা
হঠাৎ ঠান্ডা লাগা বা সর্দিজ্বর হওয়া অনেকের কাছে খুবই সাধারণ একটি বিষয়। তবে ঠান্ডা বা সর্দিজ্বর মানুষকে খুবই সামান্য কারণে যেমন ভোগাতে পারে আবার তা সহজেই সেরেও যেতে পারে। সর্দির কোনো টিকা নেই। এটি প্রতিরোধের জন্য প্রধান কাজ হলো হাত ধোয়া। কারণ হাত না ধুয়ে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না এবং রোগী থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: ঘাড়ে ব্যথা একটা মারাত্মক সমস্যা - সমাধান কি
আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। মাইগ্রেন হলে কি কি সমস্যা হতে পারে - প্রতিকারগুলি কি কি বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url