দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ

আমাদের শরীরের অনেক অংশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে দাঁত। দাঁতজনিত সমস্যায় ভুগেন নি এমন মানুষ খুব কমই আছে। আমাদের খামখেয়ালীপনা, অনিয়ম, অবহেলা এবং বয়স অর্থাৎ সবকিছুই একটা সময়ে গিয়ে মিলিত হয় এবং তখন হাজারো সমস্যা বাধে।
কথায় আছে ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা না বোঝা’ ঠিক বাস্তবেও এই কথাটার সত্যটাতা টের পাওয়া যায়। আসলে দাঁতের সমস্যাগুলো আমাদের অভ্যস্ত জীবনের নানা অনিয়মের কারণ। যার মধ্যে অন্যতম উদাসীনতা, গুরুত্ব না দেয়া, সঠিকভাবে দাঁতের যত্ন না নেয়া ইত্যাদি। চলুন আজকে জেনে নিই দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ :

পোস্ট সূচিপত্র: দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ
দাঁত ব্যথার কারণ
দাঁতের ব্যথা কমানোর ঔষধের নামসমূহ
দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ
শেষ কথা

দাঁত ব্যথার কারণ:

সাধারণত বেশীরভাগ মানুষই তাদের দাঁতের সুরক্ষায় মনোযোগ দেন না। টক, মিষ্টি, ঠান্ডা বা গরম জিনিস খাওয়া বা পান করা দুর্বল ক্ষতিগ্রস্ত দাঁতে ব্যথার সৃষ্টি করে। উপযুক্ত ক্যালসিয়ামের অভাবজনিত কারণে বা দাঁত পরিষ্কার না করার কারণেও দাঁতগুলিতে ব্যাকটেরিয়া সংঘটিত হয় এবং এর ফলে দাঁতে ব্যথা সৃষ্টি হয়। উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি- অতিরিক্ত ধুমপান, অ্যালকোহল সেবন, চা খাওয়া, পান খাওয়া, গুল খাওয়া, খৈনী খাওয়া, প্রতিদিন নিয়মিত ব্রাশ না করা, অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাদ্য খাওয়া ইত্যাদি।

দাঁতের ব্যথা কমানোর ঔষধের নামসমূহ:

দাঁতের ব্যথা কমানোর জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবনই যুক্তিযুক্ত। তবে ফ্লব্লাস্ট ট্যাবলেট (Flublast Tablet) খাওয়া যেতে পারে। তবে এই ট্যাবলেটটি ব্যাথা, মাথাব্যাথা, আর্থথ্রিটিস এবং দাঁত ব্যাথা করার ক্ষেত্রে ব্যথা উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও জ্বর এর কারণে সৃষ্ট শরীরের ব্যথা হ্রাস করতেও সাহায্য করে থাকে। তবে এই ঔষধটি প্রায়ই ক্যান্সারে ভোগে এমন রোগীদের বা সার্জারি করা হয় তাদেরকে এই ঔষধ দেয়া হয়ে থাকে।

দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ :

লবণ পানি:
দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ এর মধ্যে সবথেকে সহজ ও দ্রুত কাজ করে লবণ পানি। এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানিতে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করুন। সঙ্গে থুতু ফেলুন। প্রয়োজনে দিনে ৩ থেকে ৪ বার নুন জলে কুলকুচি করতে পারেন।

পেয়ারা পাতা:
পেয়ারা পাতা দাঁত ব্যথায় দারুণ উপকারী। দুটি পেয়ারা পাতা চিবিয়ে ব্যথাওয়ালা দাঁতে চেপে রাখুন। আরাম পাবেন।

বরফ: 
এক টুকরা বরফ তুলা বা কাপড়ে মুড়ে ব্যথাজনিত দাঁতে চেপে রাখুন, ব্যথা কমতে থাকবে। অর্থাৎ দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ হিসেবে আমাদের বরফ ব্যবহার করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন: অ্যাভোক্যাডো ফলের উপকারিতা ও গুনাগুণ

পেঁয়াজ:
দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ এর মধ্যে দাঁত বা মাড়িতে ব্যথা হলে পেঁয়াজ টুকরা টুকরো করে চেপে রাখুন, তাতে দাঁতের ব্যাথা থেকে মুক্তি পাবেন।

নিম ও লবণ:
দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ হিসেবে নিমপাতা ফোটানো অল্প পরিমাণে উষ্ণ জলের মধ্যে লবণ যোগ করে এটি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন, দেখবেন তাতে দাঁতের ব্যাথা থেকে আরাম পাবেন।

আদা:
দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ হিসেবে জলের সাথে আদা গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট করুন। এই পেস্টটি দাঁতে প্রয়োগ করলে মিনিটের মধ্যে ব্যথা হ্রাস পাবে। তবে যদি আপনি এটা করতে না চান, তাহলে আদা চিবিয়ে খান। এ ছাড়াও আদার জীবাণুমুক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো ছোটখাটো অনেক ক্ষত, সংক্রমণ এবং জ্বালা খুব দ্রুত ঠিক করে।

লবঙ্গ:
লবঙ্গ ব্যথা নিরসনে অত্যন্ত কার্যকরী উপায়। অর্থাৎ দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ হিসেবে আপনি দাঁতের নীচে লবঙ্গ চাপা দিয়ে রাখার অভ্যাস করুন। এছাড়াও তুলোয় লবঙ্গ তেল মাখিয়ে বেদনাদায়ক দাঁতের নীচে চেপে ধরুন। আবার কিছু লবঙ্গ এক গ্লাস জলে উষ্ণ করে যখন এর চতুর্থাংশ জল থাকে তখন এই জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন, আপনার দাঁতের ব্যাথা নিরাময় হবে।

রসুন:
শুধু রসুনের সঙ্গে লবঙ্গ গুঁড়ো করে তাতে এক চিমটে নুন মিশিয়ে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত দাঁতে লাগিয়ে নিন। দরকার হলে দিনে ২-৩ বার এই প্রতিকার করতে পারেন। দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ এর প্রাকৃতিক সমাধান রসুন।

আরও পড়ুন: জামরুল ফল এর পুষ্টিগুণ ও খাবারের উপকারিতা

আলু:
মনে রাখবেন আলু শুধু খাবার নয়, দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ এর টোটকা হিসেবেও আলু অত্যন্ত ভালো কাজ করে। আলু কেটে যেখানে যন্ত্রণা সেখানে চেপে রাখুন, দেখবেন ব্যথা কমে যাবে।

ফিটকিরি:
দ্রুত ব্যথা কমাতে ফিটকিরি খুবই কার্যকরী। দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ এর মধ্যে ফিটকিরিতে দাঁতব্যথা দূর করার শক্তি আছে। যখন আপনার দাঁতের ব্যথা করবে তখন একটু ফিটকিরি লাগিয়ে রাখুন আপনার দাঁতে, দেখবেন মুহূর্তেই ব্যথা কমে যাবে।

পুদিনা পাতা:
দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ হিসেবে পুদিনা পাতার রসে তুলো ভিজিয়ে মাড়িতে লাগান, আক্কেল দাঁতের ব্যথায় আরাম পাবেন। গরম গরম পুদিনা পাতা দেওয়া চা পান করলেও সুফল মিলবে।

শেষ কথা:

দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ হিসেবে আমরা অনেকেই সামান্য দাঁত ব্যাথার কারণে ডেন্টিস্টের কাছে গিয়ে থাকি। আবার অনেকেরই ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়ার সামর্থ্য থাকে না। অনেক সময় এমনও হয় যে ডেন্টিস্ট এর সময়ানুযায়ী নিজের সময় না হওয়া ইত্যাদি। ফলে এরকম মুহুর্তগুলোতে ব্যাথা সহ্য করার ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না। কিন্তু আমরা যদি উপরোক্ত টোটকা বা দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ সম্পর্কে জেনে থাকি, তাহলে সেইরকম মুহুর্তে আমাদের উপকার হয়। আপনি যদি একজন ডেন্টিস্ট এর কাছে যান তাহলে একটা কথা শুনে থাকবেন, ব্রাশ টেকনিক। অর্থাৎ ডেন্টিস্ট সাহেব তার এ্যাসিস্ট্যান্টকে বলছেন, ব্রাশ টেকনিকটা দেখিয়ে দাও। আসলে এই ব্রাশ টেকনিক কি? আমরা যারা সকাল-বিকাল-রাত্রিতে দাঁত ব্রাশ করি তারা বেশীর ভাগই ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে দাঁতের এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত খালি ঘষে যায়, কিন্তু সঠিক নিয়ম বা ব্রাশ টেকনিকটা হলো ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে তা দাঁতের উপরে-নীচে নামানো। অর্থাৎ সামনের পাটিতে উপর থেকে নীচে এবং ভিতরের মাড়ির দাঁতেও উপর থেকে নীচে নামাতে হবে। মূল কারণ হচ্ছে খাদ্যকণাগুলি আসলে দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে জমা থাকে, তাই যখন আমরা হরাইজন্টালি (সারি ভাবে) এ মাথা থেকে ও মাথা খুব ব্রাশ করি তখন সেই ফাঁকে জমে থাকা খাদ্যকণাগুলি বের হয় না। আর যদি ভার্টিকালি (কলাম) অর্থাৎ উপর-নীচে ব্রাশ ঘুষতে থাকি তাহলে যে খাদ্যকণাগুলি দাঁতের ফাঁকে জমে আছে তা বেরিয়ে যায়।

আরও পড়ুন: জাঙ্ক ফুড কি - জাঙ্ক ফুডের ক্ষতিকর দিকসমূহ

সুতরাং আমাদের একটু সচেতনতা, একটু পরিশ্রম, একটু মেধা বিকাশ, একটু ধৈর্য্য অনেক কিছু সমাধান এনে দিতে পারে। আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের অবশ্যই উপকারে আসবে। দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ দাঁতের ব্যথায় আমাদের করণীয় ও ঘরোয়া উপায়সমূহ আলোচনায় আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ও আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url