কবিদের ভাবনায় বর্ষাকাল - বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল

যে ছয়টি ঋতু সম্বন্ধে আমরা জানি তার মধ্যে বর্ষাকাল হচ্ছে একটি সম্পূর্ণই আলাদা বা ভিন্নমাত্রার ঋতু। এখন চলছে বর্ষাকাল। যুগে যুগে কবিদের ভাবনায় বর্ষাকাল - বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল সম্পর্কে মহান কবি-সাহিত্যিকগণ কত কবিতা, গান লিখেছেন তার ইয়ত্তা নেই।
আবার এই বর্ষাকাল বা বৃষ্টিকে নিয়েও অনেক বিখ্যাত সিনেমা, নাটকও তৈরি  হয়েছে অনেক। আর এখনকার সিনেমাগুলিতে শুধুমাত্র বৃষ্টিকে উপলক্ষ করে একটি বিশেষ দৃশ্য তো থাকেই। বর্ষাকালকে নিয়ে সবচেয়ে বেশী কবিতা রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি এই বর্ষাকালকে এমন ভাবে গানে ও কবিতায় উপস্থাপন করেছেন, যা আমরা সবাই জানি। তো চলুন জেনে নেয়া যাক কবিদের ভাবনায় বর্ষাকাল - বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল কতখানি প্রভাব রাখতে পেরেছে:

পোস্ট সূচিপত্র: কবিদের ভাবনায় বর্ষাকাল - বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল
বিভিন্ন কবিদের বর্ষাকে ভাবনা
শেষ কথা


বিভিন্ন কবিদের বর্ষাকে ভাবনা

কবিদের ভাবনায় বর্ষাকাল - বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল সম্পর্কে অন্যান্যদের মধ্যে প্রথমেই 
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘বর্ষার দিনে’ কবিতায় লিখেছেন-
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়-
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়

এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অন্যতম ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর’ ছড়া কবিতাটি আমাদের দুরন্তপনা শৈশবকেই হাতছানী দিয়ে ডাকে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল কে চঞ্চলা মেয়ের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, 
ওগো ও কাজল মেয়ে
উদাস আকাশ ছলছল চোখে তব মুখে আছে চেয়ে
কাশফুলসম শুভ্র ধবল রাশরাশ যেত মেঘে
তোমার তরীর উড়িতেছে পাল উদাস বাতাস লেগে
ওগো ও জলের দেশের কন্যা তবও বিদায় পথে
কাননে কাননে কদম কেশর ঝরিছে প্রভাত হতে
তোমার আদরে মুকুলিতা হয়ে উঠিল যে বলস্নরী
তরুণ কণ্ঠে জড়াইয়া তারা কাঁদে দিবানিশি ভরি।

পাশ্চাত্য ধ্যানধারণা থেকে বের হয়ে এসে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল -এ বর্ষার রূপকে প্রকাশ করেছেন এভাবে—
গভীর গর্জন করে সদা জলধর
উথলিল নদ-নদী ধরণীর উপর
রমণী রমণ লয়ে সুখে কেলি করে
দানবাদি দেব যক্ষ সুখিত অন্তরে।

আরও পড়ুন: স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার

পল্লী কবি জসিম উদদীন, বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল কে তাঁর পল্লী-বর্ষা কবিতায় গাঁয়ের চিত্র বর্ণনায় লিখেছেন:
গাঁয়ের চাষীরা মিলিয়াছে আসি মোড়লের দলিজায়
গল্পের গানেকি জাগাইতে চাহে আজিকার দিনটায়!
কেউ বসে বসে বাখারী চাঁচিছে, কেউ পাকাইছে রসি
কেউবা নতুন দোয়াড়ীর গায়ে চাঁকা বাঁধে কসি কসি।

কবিদের ভাবনায় বর্ষাকাল - বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল বিষয়ে প্রকৃতির কবি সুফিয়া কামাল বর্ষার অনবদ্যতা সম্পর্কে লিখেছেন,
আমি বর্ষা, আসিলাম
গ্রীষ্মের প্রদাহ শেষ করি
মায়ার কাজল চোখে
মমতায় বর্মপুট ভরি।

কবি বুদ্ধদেব বসুবাংলা কবিতায় বর্ষাকাল -এ[ মেঘের কষ্টের কথা এভাবে ব্যক্ত করেছেন-
নদীর বুকে বৃষ্টি পড়ে
জোয়ার এলো জলে;
আকাশ ভরা মেঘের ভারে
বিদু্যতের ব্যথা
গুমরে উঠে জানায় শুধু
অবোধ আকুলতা।

কবিদের ভাবনায় বর্ষাকাল - বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল বিষয়ে কবি অমিয় চক্রবর্তী ভেবেছেন এভাবে-

অন্ধকার মধ্যদিনে বৃষ্টি ঝরে
মনের মাটিতে, বৃষ্টি ঝরে
রুক্ষ মাঠে, দিগন্ত পিয়াসী মাঠে
স্তব্ধ মাঠে, মরুময় দীর্ঘ তিয়াষার
মাঠে, ঝরে বনতলে, ঘন শ্যাম রোমাঞ্চিত
মাটির গভীর গূঢ় প্রাণে, শিরায়-শিরায়
স্নানে, বৃষ্টি ঝরে মনের মাটিতে।

কবি ফররুখ আহমদ, বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল কে তাঁর শিশুতোষ কাব্য ‘বৃষ্টির গান’-এ বলেছেন-
বৃষ্টি এলো কাশবনে
জাগলো সাড়া ঘাসবনে
বকের সারি কোথায় রে
লুকিয়ে গেলো বাঁশবনে।
নদীতে নাই খেয়া যে
ডাকলো দূরে দেয়া যে
কোন সে বনের আড়ালে
ফুটলো আবার কেয়া যে।

কবিদের ভাবনায় বর্ষাকাল - বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল কে নিয়ে কবি শামসুর রাহমান বলেছেন,
শ্রাবণের মেঘ আকাশে আকাশে জটলা পাকায়
মেঘ ময়তায় ঘনঘন আজ একি বিদু্যৎ জ্বলে
মিত্র কোথাও আশেপাশে নেই শান্তি উধাও
নির্দয় স্মৃতি মিতালি পাতায় শত করোটির সাথে।

আরও পড়ুন: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্পর্কে অজানা তথ্য

বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল বর্ণনা করেছেন রোমান্টিক কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বর্ষাকে উপভোগ করেছেন এভাবে
বাইরে বৃষ্টি, বিষম বৃষ্টি, আজ তুমি ঐ রুপালি শরীরে
বৃষ্টি দেখবে প্রান্তরময়, আকাশ মুচড়ে বৃষ্টির ধারা...
আমি দূরে এক বৃষ্টির নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছি, একলা রয়েছি
ভিজেছে আমার সর্ব শরীর, লোহার শরীর, ভিজুক আজকে
বাজ বিদ্যুৎ একলা দাঁড়িয়ে কিছুই মানি না, সকাল বিকাল
খরচোখে আমি চেয়ে আছি ঐ জানলার দিকে, কাচের এ পাশে
যতই বাতাস আঘাত করুক, তবুও তোমার রুপালি চক্ষু-
আজ আমি একা বৃষ্টিতে ভিজে, রুপালি মানবী, দেখবো তোমার
বৃষ্টি না ভেজা একা বসে থাকা।

কবিদের ভাবনায় বর্ষাকাল সম্পর্কে কবি শহিদ কাদরী লিখেছেন-
বৃষ্টি পড়ে মোটরের বনেটে টেরচা
ভেতরে নিস্তব্ধ যাত্রী, মাথা নীচু
ত্রাস আর উৎকণ্ঠায় হঠাৎ চমকে
দ্যাখে জল-অবিরল
জল, জল, জল
তীব্র, হিংস্র, খল।

মধ্যযুগের কবিদের ভাবনায় বর্ষাকাল - বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল বর্ণিত হয়েছে এভাবে-

পদাবলী সাহিত্যের শ্রী চন্ডীদাস বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল কে ব্যক্ত করেছেন এভাবে-
এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা
কেমনে আইলো বাটে।
আঙ্গিনার মাঝে বঁধূয়া ভিজিছে
দেখিয়া পরান ফাটে।

পদাবলী সাহিত্যের আরেকজন বিদ্যাপতি । তিনিও বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল কে ব্যক্ত করেছেন-
এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর
এ ভরা বাদর মাহ বাদর
শূন্য মন্দির মোর।

বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল সম্পর্কে মধ্যযুগের কবিপ্রতিভা মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ‘কালকেতু উপাখ্যানে’বর্ষাকাল সম্পর্কে বলেছেন,
আষাঢ়ে পুরিল মহী নবমেঘে জল।
বড় বড় গৃহস্থের টুটয়ে সম্বর
মাংসের পসরা লয়্যা বুলি ঘরে ঘরে।
কিছু খুদকুঁড়া মিলে উদর না পুরে
শ্রাবণে বরিষে মেঘ দিবস রজনী।
সিতাসিত দুই পক্ষ একই না জানি

শেষ কথা

যুগে যুগে কবিরা বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল বিষয়ে প্রত্যেকেই বৃষ্টি নিয়ে একাধিক কবিতা রচনা করেছেন। তাঁরা বৃষ্টিকে কেউ রোমান্টিক, কেউ যন্ত্রণাদায়ক, কেউ উৎপীড়ক আবার কেউবা অত্যন্ত আদরণীয় বলে মনে করেন। বৃষ্টির ছোঁয়া হৃদয়কে করে প্রশমিত। স্বর্গীয় এক সুধাধারা নেমে আসে অন্তরে।

আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে শীর্ষ ১০টি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান

আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। কবিদের ভাবনায় বর্ষাকাল - বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ কবিদের ভাবনায় বর্ষাকাল - বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল আলোচনায় আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url