শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক

আমাদের সংসার জীবনে যে কঠিন কাজগুলো সমাধা করতে হয় তার মধ্যে অন্যতম শিশুকে খাওয়ানো। অর্থাৎ, সবথেকে এই কঠিন কাজটি সমাধা করেন আমাদেরই সংসার জীবনের সাথে ওতঃপ্রোতভাবে আবদ্ধ নারীরা, হোক সে অর্ধাঙ্গিনী, হোক সে মা, হোক সে বোন। অর্থাৎ, তাঁরাই পারেন একটি শিশুকে কিভাবে ধীরে ধীরে বড় করে তোলা যায়। তাই, আমরা আজকে শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক বা কৌশল জানার চেষ্টা করবো।

দিন বদলের হাওয়াই সবকিছুতেই যেমন পরিবর্তন ঘটছে, ঠিক তেমনি শিশুদের খাদ্যাভাসে, খাবার খাওয়ানোতেও পরিবর্তন হয়েছে। শিশুকে খাওয়ানোর জন্য মায়ের হাজার প্রচেষ্টা, ভাল ভাল রান্না, কিন্তু শিশু খেতে কিছুতেই খেতে চায় না। আধুানিক মায়েরা শিশুকে খাওয়ানোর জটিল এই সমস্যাকে তাড়াতাড়ি সমাধানের পথ হিসেবে ইউটিউব, মোবাইলে গেম, প্রয়োজনে টিভিতে কার্টুন এবং সর্বোপরি প্রচণ্ড বকাঝকা বা মারধোরও করে থাকেন। চলুন শিশুকে খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক বা ট্রিকস সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি:

👉 শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক হিসেবে আপনার সন্তান কোন ধরণের খাবার খেতে পছন্দ করে আগে সেটা পর্যবেক্ষণ করুন। অর্থাৎ আপনার পছন্দের খাবারই যে তাকে খেতে হবে এমন কথা নয়, সে কোন খাবারের প্রতি আগ্রহ পোষণ করছে এবং সেই খাবারের মধ্যে ভিটামিন, প্রোটিন, খনিজ আছে কি না সেদিকে খেয়াল করুন।

👉 শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক হিসেবে প্রতিদিন এক ধরণের খাবার না দেওয়ায় ভালো, কারণ এতে তারা খাওয়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

👉 শিশু যদি খেতে না চাই, তাহলে তাকে জোর করে খাওয়াবেন না। মনে রাখবেন শিশুদের পাকস্থলী আকারে বেশ ছোট থাকে।

👉 শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক এর মধ্যে আপনি নিজে যখন খেতে বসবেন তখন শিশুকে সঙ্গে নিয়েই বসুন। মনে রাখবেন শিশুরা খুব অনুকরণপ্রিয় হয়ে থাকে, তাই সে যদি দেখে তার বাবা-মা-দাদা-দাদিরা আনন্দ করে খবার খাচ্ছে, তখন সে একসময় খেতে শুরু করবে। এছাড়াও আপনার শিশু খেতে বসতে ভয় না পায় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

👉 শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক হিসেবে অবশ্যই তাদের খাওয়ানোর সময় মোবাইল ফোন বা টিভি চালু করবেন না। বরং তার সাথে নানরকম গল্প বলে ব্যস্ত রাখুন। অর্থাৎ সে সারাদিন কী করলো, কার সঙ্গে খেলাধুলা করলো, কোন খেলাটা তার ভালো লেগেছে এবং সর্বোপরি তার প্রশংসা করুন।

👉 অনেক সময় মায়েরা বিভিন্ন তরকারি বা ডাল দিয়ে ভাত মাখিয়ে শিশুকে খেতে দেয়। শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক হিসেবে অবশ্যই এটা করবেন না, আপনি সব খাবারই অল্প অল্প করে প্লেটে সাজিয়ে নিন, এতে দেখতেও ভাল লাগবে এবং শিশুদের খাবার খাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ জন্মাবে।

👉 শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক হিসেবে খাবারের প্রতি শিশুদের আগ্রহ তৈরি করতে চাইলে সবকিছুতেই তাকে সঙ্গে রাখুন। যেমন বাজার করা, তরকারি কাটা ও ধোয়া-মুছা করা, প্লেটে সাজানো ইত্যাদি সমস্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গেই শিশুকে যুক্ত রাখুন। এছাড়া কোন খাবার খেলে কী উপকার হয় তা গল্প করুন, যেমন ডিম খেলে শক্তি হয়, চোখের পাওয়ার বাড়ে, কলা খেলে দুই হাতে শক্তি বাড়ে ইত্যাদি।

👉 শিশুদের বাইরের খাবারের প্রতি কোনমতেই যেন আগ্রহ না জন্মায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-চকলেট, চিপস, জুস, ললিপপ ইত্যাদি শিশুর খাওয়ার রুচি নষ্ট করে ফেলে। অর্থাৎ এই সমস্ত খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে সে বাড়ির খাবার আর খেতে চাইবে না। অর্থাৎ শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক হিসেবে বাইরের খাবারের পরিবর্তে ঘরোয়া খাবারের প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে।

👉শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক হিসেবে আপনাকে কৌশলী হতে হবে। যেমন আপনার শিশু যদি ডিম ও দুধ একেবারেই খেতে না চায়, সেক্ষেত্রে ডিম ও দুধ দিয়ে পুডিং বানিয়ে দিতে পারে।

👉 শিশুর মধ্যে ক্ষুধা তৈরি হওয়ার সময় দিতে হবে। আর এতে করে সে নিজেই খাবার খেতে আগ্রহী হবে। মাঝে মাঝে তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তার কী খেতে ইচ্ছা করছে। এতে করে তার ওই খাবারের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে।

👉 মনে রাখবেন শিশুরা সাধারণত চঞ্চল ও দুরন্ত প্রকৃতির হয়। খাবারের চেয়ে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ থাকে তাদের বেশি। খেলাধুলা করলে শিশুর মন যেমন ভালো থাকবে, তেমনি ক্ষুধাও পাবে। শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক হিসেবে আপনার শিশু খেলতে খেলতে যদি খেতে চাই, তাহলে তাতে বাধা দেওয়া ঠিক নয়।

👉 মনে রাখবেন সব শিশুই সমান নয়। একজনের শিশু বেশি খাচ্ছে বলে আপনি আপনার বাচ্চাকে বেশি খাওয়াবেন এমনটা ঠিক নয়। আমাদের বড়দের যেমন ভিন্নতা আছে, শিশুদের মধ্যেও ভিন্নতা আছে। অর্থাৎ শিশু যদি একেবারেই কম খায়, সেক্ষেত্রে শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক হিসেবে কিছুক্ষণ পর পর ভুলিয়ে-ভালিয়ে, গল্প বলে অল্প অল্প করে তাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।

আসলে ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক হিসেবে নিজেদেরকেও একটু আধুনিক হতে হবে। আগেকার সময়ে মা আমাদের কোলে করে বাইরে নিয়ে এসে পাখি, কুকুর, বিড়াল, ছাগল, গরু ইত্যাদি দেখিয়ে মুখের মধ্যে খাবার গুঁজে দিত। কিন্তু এখনকার বাচ্চারা পেটে থাকতেই ডিজিটাল, সুতরাং এদের ক্ষেত্রে প্রচুর ধৈর্য্য, সহ্য এবং সর্বোপরি উপস্থিত বুদ্ধি মাথায় নিয়েই দায়িত্ব পালন করতে হবে।

আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ শিশুদের খাওয়ানোর চমকপ্রদ কিছু টেকনিক আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল।