সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় - কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে

বর্তমানে আমরা কেউই অসুস্থ হতে চায় না। কারণ অসুস্থতা মানেই ঝামেলা এবং খরচের ব্যাপার। অসুস্থ হলে যে শুধু খারাপ লাগে তা-ই নয়, সাথে সাথে আমাদের জীবন-জগত, পরিবার-পরিবেশ, আর্থিক-মানসিক ইত্যাদি বিষয়গুলিতে নেমে আসে ঘোর অমানিশা।
আমাদের খুবই সুপরিচিত প্রবাদ আছে, “বিপদ আসার আগেই সাবধান হওয়া ভালো।” আসলে বাস্তবে অনেক বিপদই আমাদের জীবনে এমনভাবে ঝড় হয়ে আসে যে, কিছু বুঝে উঠার আগেই সবকিছু তছনছ করে চলে যায়। আবার এটাও ঠিক যে, কিছু কিছু রোগকে এড়ানো যায় না। আর তাই আমাদের নিজেদের অসুস্থ না হওয়া অথবা অসুস্থতা রোধ করার উপায় হিসেবে সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় - কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে আলোচনাটি পড়তে হবে :

পোস্ট সূচিপত্র: সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় - কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে
                            কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে
                            শেষ কথা

কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে : 

কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে তার অকাট্য সংজ্ঞা হলো বুঝে চলা। অর্থাৎ আমি যদি জেনেও না জানি, বুঝেও না বুঝি, দেখেও না দেখি, কোন কিছুকে গুরুত্ব না দিয়ে থাকি ইত্যাদি সমস্ত কিছুতেই ‘না’ শব্দটার প্রাধান্যই বেশি। বলাবাহুল্য এই ‘না’ শব্দটিকে ‘হাঁ’ করার মূল দায়িত্ব কিন্তু আমাদের। আমাদের চারপাশে এবং সর্বোপরি তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় ভালো এবং খারাপ দুটোই আছে, কিন্তু আমাদের খারাপকে দেখে ভালো গ্রহণ করতে হবে। যাইহোক, ফালতু প্যাঁচাল না পেরে সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় - কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে বিষয়ে আলোচনা শুরু করি:

সঠিক সময় খাবার খাওয়া

কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে তার সমাধান হিসেবে প্রথমেই আমাদের খাদ্য তালিকায় ফল ও শাক-সবজি থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিনে অন্তত পাঁচটি সবজি আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন। কারণ ফল ও শাক-সবজিতে ক্যালোরি ও চর্বি কম থাকে, ফাইবার বেশি থাকে এবং এগুলো ভিটামিন ও খনিজের ভালো উৎস। ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার ওজন কমাতে সাহায্য করে। সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় হিসেবে আমাদের প্রতিদিন সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ করতে হবে।

বিশুদ্ধ পানি পান করুন

কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে তার উপায় হচ্ছে, আপন প্রতিদিন যে পানিটা খাচ্ছেন তা বিশুদ্ধ কি না তা জেনে খাবেন। কারণ পানির উৎস যদি নিরাপদ না হয় এবং পানি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে রাখা না হয়, তা হলে এতে নানার কম রোগজীবাণুসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ হতে পারে। অর্থাৎ সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় হিসেবে অবশ্যই  বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।

আরও পড়ুন: কোমর ব্যথা হলে কি করণীয় - নিরাময় পদ্ধতিগুলি কি কি


পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম ও বিশ্রাম করুন

ভালো ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মানসিক সুস্থতা বাড়ায়। কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে তার কারণ হিসেবে বলা যায়, একজন কিশোর-কিশোরী দৈনিক ৯ থেকে ১০ ঘন্টা এবং একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। এ ছাড়াও যদি কোন কারণে ঘুম না আসে তাহলে বিশ্রাম করুন। কারণ বিশ্রামে শরীরে অনেক প্রশান্তি যোগায়। সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় হলো এক নাগাড়ে কোন কাজ করা উচিত নয়।

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাস গ্রহণ করুন

প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করুন। ভোরের বাতাস নির্মল/বিশুদ্ধ হয়ে থাকে, বাইরে গিয়ে প্রচুর পরিমাণে সকালের আলো উপভোগসহ বিশুদ্ধ বাতাসে নিজেকে সতেজ করুন। অর্থাৎ সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় - কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে এর জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

শারীরিক পরিশ্রম/নিয়মিত ব্যায়াম করুন

সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় হিসেবে সকালে ব্যায়ামের অভ্যেস করুন। আপনার বয়স যা-ই হোক না কেন, সুস্থ থাকার জন্য নিয়মিতভাবে শারীরিক পরিশ্রম করা প্রয়োজন। পরিশ্রম বা নিয়মিত ব্যায়াম করলে ভালোভাবে ঘুমাতে পারবেন, ওজন সঠিক মাত্রায় নিয়ে আসতে পারবেন, হজমসহ নানা বিষণ্ণতা রোগের ঝুঁকি কমাতে পারবেন, মজবুত হাড় এবং শক্তিশালী পেশি গড়ে তুলতে সহায়তা হবে।

ধূমপান/অ্যালকোহল সেবন বন্ধ করুন

ইংরেজিতে একটি কথা আছে, ‘অতিরিক্ত সবকিছুই খারাপ’। অর্থাৎ সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় হিসেবে অবশ্যই ধুমপান ও অ্যালকোহল পরিত্যাগ করতে হবে।

আরও পড়ুন: অতিরিক্ত তামাক গ্রহণ কি ফুসফুসের ক্যান্সারের জন দায়ী


নিজেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন

সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় হিসেবে প্রতিটা খাবার তৈরি করার আগে আপনার হাত, কাটিং বোর্ড, কাটার যন্ত্রপাতি, বাসনপত্র এবং রান্না ঘরের উপরিভাগের মেঝে গরম জল ও সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন। বিশেষ কিছু বিষয়ে হাত ধোয়া উচিত, যেমন-টয়লেট ব্যবহার করার পরে, কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়ার আগে এবং পরে, হাঁচি দেওয়া, কাশি দেওয়া এবং নাক ঝাড়ার পরে, আবর্জনা পরিষ্কার করার পরে, ক্ষতস্থান অথবা কাটা জায়গা পরিষ্কার করে ওষুধ লাগানোর আগে এবং পরে, কোনো পশুর গায়ে হাত দেওয়ার অথবা তাদের মল-মূত্র পরিষ্কার করার পরে এবং খাবার প্রস্তুত করা অথবা খাওয়ার আগে।

সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করুন

সুস্থ থাকার জন্য যেসব সংকল্প গ্রহণ করা হয়, তার বেশির ভাগই বছর জুড়ে বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে। কাজেই সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় হিসেবে জীবনযাত্রার সঙ্গে মানানসই সংকল্প নির্ধারণ করে তা নিয়মিত মেনে চলা উচিত। এতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। পরিকল্পনা গ্রহণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন: ওজন কমাতে চাওয়ার বদলে ঠিক কতটা ওজন কমানো প্রয়োজন বা কতটা ওজন কমাতে চান, তা নির্ধারণ করুন।

মানসিক চাপ কমান

কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে অর্থাৎ যদি আপনার মানসিক চাপ অনুভব করেন, তাহলে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, হাঁটা বা গান শোনার মতো সাধারণ কাজগুলো সহায়ক হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলে।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে

প্রতি বছর নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে হিসেবে ছোটখাট কোন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে তা বড় আকার ধারণের আগেই শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ছাড়াও শারীরিকভাবে সুস্থ বোধ করলেও প্রতি বছর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে ভুলবেন না।

ছোটখাটো স্বাস্থ্যগত সমস্যায় হাই পাওয়ারের ঔষুধ সেবন বন্ধ করুন। বর্তমান সময়ে আমরা সবাই ডাক্তার। কেননা অনেক ঔষধই আমরা ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা না করেই খেয়ে থাকি। যেমন-আমার ঘুম আসছে না, তাই আমি কাউকে জিজ্ঞাসা না করে ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমালাম। একদিন পায়খানা হয়নি, তাই আমি পরেরদিন পায়খানা হওয়ার ঔষধ খেলাম। এমনকি অনেকই বিষয় আছে যাতে আমরা নিজেরাই ডাক্তার হয়ে যায়।

সবসময় নিজেকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করুন

কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে এর ‍উপায় হিসেবে আপনি করতে উপভোগ করেন এমন বিষয়গুলো বেছে নিন। যেমন বাস্কেটবল, টেনিস ও ফুটবল খেলা, জোরে হাঁটা, সাইকেল চালানো, বাগান করা, কাঠ কাটা, সাঁতার কাটা, নৌকা চালানো, জগিং করা অথবা. টিভি দেখা, গান শুনা, গল্প করা বা বই পড়া বা রান্না করা ইত্যাদি।

বাইরের খাবার পরিহার করুন

শরীর সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় এর জন্য বাইরের খোলা জায়গায় যে সমস্ত খাবার তৈরী হয়ে থাকে তা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

আরও পড়ুন: জাঙ্ক ফুড কি - জাঙ্ক ফুডের ক্ষতিকর দিকসমূহ


সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন

যখন আমরা কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করি তখন খাদ্য গ্রহণে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারি না। অর্থাৎ বেশি খাদ্য খেয়ে ফেলি এবং পরবর্তীতে নিজেকে অসুস্থ্য মনে হয়। হোক সেটা অনুরোধে অথবা লোভ। নিজে কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে হিসেবে এই অভ্যেসটা সংবরণ করতে হবে।

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফাইবার (আঁশ) যুক্ত খাবার নিশ্চিত করুন

সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় হিসেবে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আঁশ জাতীয় খাদ্য রাখতে হবে। যেসব খাবারের মধ্যে আঁশ আছে খাদ্য তালিকায় সেই খাবারগুলো যুক্ত করুন। আসলে উন্নত বিশ্বে তারা যে কোন খাদ্য গ্রহণ করার পরপরই একটি কাঁচা সবজি বা ফল খেয়ে থাকে, কারণ এতে করে পেটের মধ্যে জমাকৃত খাবারটি হজমে সহায়তা হয় এবং পায়খানাও পরিস্কার হয়ে থাকে।

শেষ কথা

সুতরাং সুস্থ্য থাকতে  হলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে হবে। অর্থাৎ আমাদের চলমান জীবনে নিজের সামর্থ্য, বুদ্ধি ও যুক্তি দ্বারা সবকিছু বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে সুস্থ্য থাকার প্রয়াস নিতে হবে।

আশা করছি, এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় - কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ সুস্থ্য থাকতে হলে কী করণীয় - কিভাবে সুস্থ্য থাকা যেতে পারে বিষয়ে আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url