ঘন ঘন হাই ওঠে কেন - ইসলামে হাই তোলা কি খারাপ? - সারারাত ঘুমানোর পরও অফিসে গিয়ে হাই ওঠে কেন

একটা জিনিস হরহামেশাই আমাদের সাথে হয়ে থাকে, সেটা হলো হাই তোলা। অর্থাৎ ক্লাসে, পড়তে বসে, অফিসে, কোন সামাজিক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, গুরুত্বপূর্ণ কোন আলোচনায় ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং সময়-অসময়ে আমাদের এই হাই বা হাম্ উঠে। প্রায়ই সে জন্য আমাদেরকে না না অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে হয় অনেক ক্ষেত্রে। সেইসাথে কমন কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, যেমন-রাত্রে ঘুম হয়নি, না? ইস্ বেচারা। বা সারা রাত কি করছিলা? বেশী করে পানি খাও-হাই কমে যাবে; তোমার শরীর মনে হয় ক্লান্ত, একটু ঘুমিয়ে নাও ইত্যাদি ইত্যাদি। সুতরাং আজকে আমরা জানবো, ঘন ঘন হাই ওঠে কেন - ইসলামে হাই তোলা কি খারাপ? - সারারাত ঘুমানোর পরও অফিসে গিয়ে হাই ওঠে কেন এ সম্পর্কে।
হাই সবারই ওঠে এবং তার কোন নির্দিষ্ট সময় থাকেনা। একজনের হাই দেখলে আরেক জনের হাই আসে, এমনকি মেরুদণ্ডী ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যেও এটি দেখা যায় বেশি। যেমন-কুকুর, বিড়াল, সাপ, পাখি, বানর, বেবুন, শিম্পাঞ্জি ইত্যাদি। আবার কিছু কিছু মাছ জলের ভেতরেও হাই তোলে। হাই শব্দের ইংরেজী হলো Yawn। তবে এই হাই ওঠা নিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটু অন্যরকম বার্তা দিয়ে থাকে। তো চলুন জেনে নেয়া যাক, ঘন ঘন হাই ওঠে কেন - ইসলামে হাই তোলা কি খারাপ? - সারারাত ঘুমানোর পরও অফিসে গিয়ে হাই ওঠে কেন এই সমস্ত বিষয়ে।

পোস্ট সূচিপত্র : ঘন ঘন হাই ওঠে কেন - ইসলামে হাই তোলা কি খারাপ? - সারারাত ঘুমানোর পরও অফিসে গিয়ে হাই ওঠে কেন
ঘন ঘন হাই ওঠে কেন ?
ইসলামে হাই তোলা কি খারাপ?
সারারাত ঘুমানোর পরও অফিসে গিয়ে হাই ওঠে কেন
হাই আটকানোর পদ্ধতি
ঘন ঘন হাই ওঠে কেন - ইসলামে হাই তোলা কি খারাপ? - সারারাত ঘুমানোর পরও অফিসে গিয়ে হাই ওঠে কেন - শেষ কথা

ঘন ঘন হাই ওঠে কেন ?

প্রথমেই আমাদের জানতে হবে, ঘন ঘন হাই ওঠে কেন । আসলে হাই বা হাম্ হচ্ছে একটি শরীরের ইনভলান্টারি অ্যাকশন। এটা একটা অনৈচ্ছিক রিফ্লেক্স। সাধারণত এতে ফুসফুস ও কান একসঙ্গে কাজ করে। মুখ হাঁ হয়ে ফুসফুসে প্রচুর বাতাস ঢোকে, সেই বাতাস মুখ দিয়ে ফুসফুসে যাবার সময় কানকে চাপ দেয়। আসলে কানের সঙ্গে গলার সংযোগী একটি টিউব আছে, যা ইস্টাশিয়ান টিউব নামে পরিচিত। এই টিউবটি মধ্যকানের সঙ্গে নাক ও গলার একটি সংযোগ তৈরি করে। এ সময় বাতাসের চাপে একদিকে বাইরের কানের ইয়ার ড্রাম প্রসারিত হয়, আর অন্যদিকে মধ্যকানের টেনসর টিম্পানি মাসলটি সংকুচিত হয়। এই সংকোচনের কারণে হাই দিলে একটা মড়মড় শব্দ হয় চোয়ালে এবং তখন এই মড়মড় শব্দ শেষ হতেই ফুসফুস থেকে একগাদা বাতাস বেরিয়ে আসে।

আরও পড়ুন: গ্যাস্ট্রিক কী ও কেন হয়? নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ খেলে যেসব ক্ষতি হতে পারে - গ্যাসের ঔষধ খাওয়ার নিয়ম

হাই ওঠার অনেকগুলি কারণ থাকে। যেমন-ক্লান্ত হলে আমরা হাই তুলি, শরীর দুর্বল লাগলে হাই আসে, ঘুম পেলে হাই আসতে চায়, অনেক সময় বিরক্ত হলেও হাসে, আবার গভীর মনোযোগ সহকারে কোন কাজ সমাধা করার পর হাই ওঠে। তবে গরমকালের চেয়ে শীতকালে বেশি হাই তোলে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষের (৪১%) তুলনায় নারীরা (৫৪%) বেশি হাই তোলেন। চিকিৎসা বিদ্যায় বলে, হাই দেখে নাকি বোঝা যায় পারসোনালিটি। অর্থাৎ মনস্তাত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, সাইকোপ্যাথ পারসোনালিটির লোকেরা হাই কম তোলে। কারণ, চারপাশের প্রতি তাদের সহানুভূতি কম। অথচ হাই হলো মস্তিস্কের রিল্যাক্স প্রক্রিয়া, যা পরিবেশের সঙ্গে একটা সংযোগ তৈরি করে।

ইসলামে হাই তোলা কি খারাপ?

ইসলামে হাই তোলা কি খারাপ? এ প্রসঙ্গে রাসুল (সাঃ) বলেন, হাই তোলা শয়তানের পক্ষ হতে হয়ে থাকে। কাজেই তোমাদের কারো যখন হাই আসবে তখন তা সাধ্যমত রোধ করবে। হাই তোলার সময় যেন ‘হা’ না বলে, কেননা শয়তান তাতে হাসে (বুখারী হা/৩২৮৯; মিশকাত হা/৯৮৬)। তিনি বলেন, যদি তোমাদের কেউ হাই তোলে তবে সে যেন তাঁর মুখের উপর হাত রেখে তাকে প্রতিহত করে।

রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা হাঁচি দেওয়া পছন্দ করেন, আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। যদি তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে, তবে প্রত্যেক মুসলিম শ্রোতার তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলা ওয়াজিব।

আরও পড়ুন: কি কি খাবার খেলে শরীরে রক্ত বাড়ে? - কোন ফল খেলে শরীরে রক্ত উৎপন্ন হয়-কোন সবজি খেলে রক্ত হয়

ইসলামে হাই তোলা কি খারাপ? এমন প্রশ্নে ইসলামে বলে, হাই তোলা শয়তানের পক্ষ থেকে। কাজেই, নামাযের সময় যদি হাই আসে, তাহলে অবশ্যই হাই তোলা প্রতিরোধ করতে হবে এবং মুখ ঢেকে রাখা বা কণ্ঠস্বরকে দমন করা, অর্থাৎ শব্দ না করা।

সারারাত ঘুমানোর পরও অফিসে গিয়ে হাই ওঠে কেন :

  • সারারাত ঘুমানোর পরও অফিসে গিয়ে হাই ওঠে কেন , দুপুরে ভালোমন্দ খাওয়ার পর অফিসের কাজে বসলেও অনেক সময় ক্লান্তি লাগে, ঘুম ঘিরে ধরে, কাজ করতে অলসতা লাগে। তবে খুব বেশি হাই উঠলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।
  • সারারাত ঘুমানোর পরও অফিসে গিয়ে হাই ওঠে কেন তার কারণ হলো অনেক সময় মাথার অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে হাই ওঠা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে পার্কিনসন্স বা স্কেলেরোসিসের মতো রোগে যারা আক্রান্ত, তাদের অবশ্য অত্যধিক হাই উঠতে পারে।
  • শরীরে অক্সিজেনের কমতি হলে অনেক সময়েই হাই উঠতে পারে। অর্থাৎ, সারারাত ঘুমানোর পরও অফিসে গিয়ে হাই ওঠে কেন বলতে শরীরে যদি পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছায় তাহলে হার্টের রোগ দেখা দিতে পারে। সুতরাং হার্টের সমস্যা অন্যান্য লক্ষণের পাশাপাশি যদি অতিরিক্ত হাই উঠে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
  • চিকিৎসকগণ বলেন, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকলেও হাই উঠে। আবার কোন বিষয় নিয়ে যদি মনের মধ্যে ভয়ের উদ্রেক ঘটলেও হাই উঠতে পারে।
  • অনেক সময় ঔষুধের প্রভাবেও ঘন ঘন হাই উঠতে পারে। যেমন-সর্দি-কাশি বা স্নায়ুজনিত কোন রোগের ঔষুধ খেলে একটা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব আসে অনেকেরই এবং সেটা থেকেও হাই উঠতে পারে।
  • অনেক সময় রাত জেগে গল্প করলে কিংবা আকর্ষিত কোন সিনেমা, সিরিয়াল, ড্রামা অথবা কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান করে বাসায় ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেলে, সেক্ষেত্রে দেরীতে ঘুম হওয়ার কারণে পরের দিন সকালে ঘুম থেকে ক্লান্ত লাগতেই পারে। আবার আপনি ঘুমে আচ্ছন্ন হলেও বারবার হাইও উঠতে পারে। কিন্তু ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা ‘ইনসমনিয়া’র মতো সমস্যা থাকলে নিয়মিত ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। তবে এমন পরিস্থিতিতে হাই উঠলে সাবধান থাকা উচিত।
  • অনেক সময় কোনরকম ক্লান্তি বা অবসাদ ছাড়াই যদি হাই তোলার পরিমাণ বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে লিভারের টেস্ট করিয়ে নেয়া উচিত। আবার পেটের নানা সমস্যার কারণেও হাই তোলার পরিমাণ বেড়ে যায় অনেকটা।
  • মৃগী রোগের পূর্বাভাস হিসেবেও কখনো কখনো ঘন ঘন হাই উঠতে পারে।
  • স্ট্রোক করার আগের অবস্থায়ও ঘন ঘন হাই উঠে থাকে।

হাই আটকানোর পদ্ধতি :

হাই আটকানোর সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় হচ্ছে গভীর ভাবে শ্বাস নেয়া এবং একটু বেশি সময় ধরে সেই শ্বাস ছাড়া। এক্ষেত্রে বুকের বদলে পেটের পেশি ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ, হাই না থামা পর্যন্ত এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। আবার হাই এলে, পুরাতন কিছু স্মৃতি, যেগুলো আপনাকে আনন্দ দিবে সেগুলো মনে করতে পারেন অথবা ঘন ঘন হাই উঠলে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানীয়ও পান করতে পারেন। অনেক সময় হাই উঠা প্রতিরোধে চুইংগাম ভালো কাজে দিয়ে থাকে।

ঘন ঘন হাই ওঠে কেন - ইসলামে হাই তোলা কি খারাপ? - সারারাত ঘুমানোর পরও অফিসে গিয়ে হাই ওঠে কেন - শেষ কথা :

আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পারলেন ঘন ঘন হাই ওঠে কেন - ইসলামে হাই তোলা কি খারাপ? - সারারাত ঘুমানোর পরও অফিসে গিয়ে হাই ওঠে কেন এই সকল বিষয়ে। আশা করছি আজকের পোস্ট থেকে আপনারা অনেক কিছু জানতে পারলেন তারপরেও যদি আরো কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এবং এরকম আরো তথ্য মূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।

আরও পড়ুন: বাংলায় আরবি খাবারের নাম সমূহ - আরবি দেশের নাম সমূহ

বিঃদ্রঃ-ঘন ঘন হাই ওঠে কেন - ইসলামে হাই তোলা কি খারাপ? - সারারাত ঘুমানোর পরও অফিসে গিয়ে হাই ওঠে কেন সম্পর্কিত টপিকটি শুধুমাত্র সচেতনার জন্য প্রকাশিত, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসাপত্র সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনি আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url