কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কি - জন্মাষ্টমী কি জন্য পালন করা হয় - শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য
প্রতি বছর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী পালিত হয়ে থাকে। এবারও আগামী ২৬ আগষ্ট সোমবার, ২০২৪ পালিত হবে জন্মাষ্টমী। জন্মাষ্টমীকে কেউ শুভ জন্মাষ্টমী, কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী বা শ্রীকৃষ্ণ জয়ন্তী নামেও অভিহিত করে থাকেন। কথায় আছে, হিন্দুদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। তবে এর মধ্যে জন্মাষ্টমী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকে আমরা কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কি - জন্মাষ্টমী কি জন্য পালন করা হয় - শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো।
কৃষ্ণানুসারীদের মতে এবং সংখ্যা তত্ত্ববিদদের ধারণায়, খ্রিষ্ঠপূর্ব ৩২২৮ অব্দে শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন, তবে তার জন্মতিথি তিথি নিয়ে মতান্তরও আছে অনেক। নিরাকার পরব্রহ্ম ভগবানের সাকার রক্ত মাংসের দেহধারী প্রকাশ সুগভীর তাৎপর্য ও গুরুত্ব বহন করে থাকে। শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি আমাদেরকে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনে বিশ্ব সমাজকে আবদ্ধ করার ক্ষেত্রে শুভশক্তিকে জাগ্রত করে সত্য, সুন্দর ও আলোর পথে চলার নির্দেশনা দিয়ে থাকে। চলুন জেনে নেয়া যাক আজকের আলোচনায় কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কি - জন্মাষ্টমী কি জন্য পালন করা হয় - শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য এবং বিভিন্ন ঘটনার বিবরণী:
পোস্ট সূচিপত্র : কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কি - জন্মাষ্টমী কি জন্য পালন করা হয় - শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কি?
জন্মাষ্টমী শব্দের অর্থ কি হতে পারে
জন্মাষ্টমী কি জন্য পালন করা হয়
শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কি - জন্মাষ্টমী কি জন্য পালন করা হয় - শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য - শেষ কথা :
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কি?
দ্বাপর যুগে ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথির রোহিণী নক্ষত্রে বাসুদেব-দেবকীর কোলে মথুরায় কংসের কারাগারে জন্মগ্রহণ করেন শ্রীকৃষ্ণ। যেহেতু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অষ্টমী তিথিতে দেবকীর অষ্টম গর্ভে আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে এই জন্মতিথির নাম জন্মাষ্টমী। ন্যায়ের পক্ষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য কর্ম করেছেন অনেক। সনাতন ধমানুযায়ী যখনই পৃথিবীতে অধর্ম বেড়ে, সাধারণের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, তখনই দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনের মাধ্যমে ধর্মের রক্ষার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবতাররূপে ধরায় নেমে আসেন।
জন্মাষ্টমী শব্দের অর্থ কি হতে পারে :
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কি - জন্মাষ্টমী কি জন্য পালন করা হয় - শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য এর মধ্যে জন্মাষ্টমী শব্দের কি অর্থ হতে পারে। অর্থাৎ, জন্ম এবং অষ্টমী শব্দ দুটির অর্থ করলে দাঁড়ায়, জন্ম শব্দের অর্থ ‘জন্মা’ বা ‘পৃথিবীতে আবির্ভাব’ এবং অষ্টমী শব্দের ‘আট’। অর্থাৎ ভাদ্রপদ (আগষ্ট-সেপ্টেম্বর) মাসের অন্ধকার পাক্ষিক (কৃষ্ণপক্ষ) এর অষ্টম দিনে এবং মাতা দেবকীর অষ্টম সন্তান হিসেবে কৃষ্ণের জন্ম উৎসব উদযাপন।
জন্মাষ্টমী কি জন্য পালন করা হয় :
শ্রীমদ্ভগবতগীতায় বলা হয়, ‘যে যেভাবে আমায় আধাধনা করে, আমি সেইভাবে তাকে কৃপা করি।’ অর্থাৎ এ বিশ্বাসেই মহাকাল ও মহাজগত ব্যাপ্ত শ্রীকৃষ্ণের আরাধনায় মত্ত বিশ্বের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
তাঁরা বিশ্বাস করেন, জন্মাষ্টমীতে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনায় জগতের সব সুখ লাভ হয়, মঙ্গল হয় পরিবার, দেশ ও সমাজের। তবে শুধু মথুরা নয়, শ্রীকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র বৃন্দাবন থেকে শুরু করে সারা বিশ্বের সনাতন ধর্মাবলম্বীরাই প্রতিবছর তিথিটি ভক্তিভরে পালন করে থাকেন।
শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য :
নিজের জন্ম নিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ‘আমার জন্ম-মৃত্যু সাধারণ মানুষের মতো নয়। মানুষ জন্মগ্রহণ করে এবং মারা যায়। কিন্তু আমি জন্মরহিত হয়েও আবির্ভূত হই এবং অবিনশ্বর হয়েও অন্তর্ধান করে থাকি। আবির্ভূত হওয়া এবং অন্তর্হিত হওয়া-দুইটি আমার অলৌকিক লীলা।’
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন, ‘আমি জন্মহীন, অব্যয় আত্মা, ভূতগণের ঈশ্বর হয়েও নিজ প্রতীকে আশ্রয় করে আত্মমায়ায় জন্মগ্রহণ করি।’
আরও পড়ুন: কবিদের ভাবনায় বর্ষাকাল - বাংলা কবিতায় বর্ষাকাল
দ্বাপর যুগে অত্যাচারী রাজা কংসের নৃশংসতায় অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছিল মথুরাবাসী। সবাই অত্যাচারী কংসের হাত থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা শুরু করে। সেইক্ষণে ভগবান ভক্তের ডাকে সাড়া দিয়ে ধরাধামে আগমন করেন।
অত্যাচারী কংস, রাজমাতা দেবকীর আপন ভাই হওয়ার সুবাদে মথুরা রাজ্যের সেনাপতি নিযুক্ত হন। তৎপরবর্তীতে লোভ-লালসা ও হিংসার বশবর্তী হয়ে গভীর চক্রান্ত করে রাজা বসুদেব ও দেববীকে অন্ধকার কারাগারে কারাবন্দী হিসেবে নিক্ষেপের মাধ্যমে নিজেই মথুরা রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেন। রাজা হিসেবে নিজের মৃত্যু সাধারণের হাতে হবে না জেনেও তিনি শঙ্কিত ছিলেন এইজন্য যে, কোন এক শিশুর হাতেই তার নিশ্চিত মৃত্যু হবে। এর ফলে তিনি রাজ্যের সদ্য ভূমিষ্ঠ সকল শিশুসহ বোন দেবকীর গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের হত্যা করতেন। ঠিক, এমনি এক সময়ে আকাশ হতে দৈববাণীর আদেশ শুনতে পান যে, ‘বোন দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তানই হবে তার মৃত্যুর কারণ।’ তবে রাজা কংস সপ্তম সন্তান হাতে নেয়ার পরই সে হাসতে হাসতে শূন্যে ভেসে যায় এবং যাওয়ার সময় সে কংসকে ‘তার মুত্য অবধারিত’ বলে হুঁশিয়ারিও দিয়ে যায়।
এরপরে ভাদ্র মাসের শুক্লা পক্ষের অষ্টমী তিথির রাতে অষ্টম সন্তান হিসেবে দেবকীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন শ্রীকৃষ্ণ। সেই রাত ছিল ঝড়-ঝঞ্ঝাপূর্ণ। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সে সময়ে কারাগারের ফটকে কোন রক্ষী বা পাহারাদার ছিল না।
আরও পড়ুন: বই পড়ার উপকারিতা - আমাদের কেন বই পড়তে হবে? - বই পড়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ঠিক সে সময়ে ভগবান এক দৈববাণীতে বসুদেবকে নির্দেশ করেন যে, সদ্যোজাত ছেলে সন্তানকে নিরাপদে গোকুলে নন্দ-যশোদা দম্পতির কাছে রেখে আসতে। ঐ সময় কারাগারের দরজাও খুলে যায়। বসুদেব ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছেলেকে একটি ঝাঁকা বা ডালায় করে গোকুলে যশোদা ও নন্দ রাজার কাছে রেখে আসেন এবং সঙ্গে নিয়ে আসেন তাঁদের সদ্যোজাত মেয়েকে। ধীরে ধীরে গোকুলেই বড় হতে থাকেন শ্রীকৃষ্ণ। এক পর্যায়ে তিনি জানতে পারেন যে, তাঁর আসল বাবা-মা রাজা কংসের হাতে বন্দী। তিনি অত্যন্ত ব্যথিত হোন এবং নিজের পিতা-মাতাকে উদ্ধারের জন্য ভাই বলরামকে সাথে নিয়ে মথুরার উদ্দেশ্যে রওনা হোন। সেখানে মথুরারাজ কংসকে যুদ্ধে পরাজিত ও হত্যা করে নিজের পিতা-মাতাকে কারাবন্দী হতে মুক্ত করেন।
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন, ‘যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত। অভ্যুত্থানম ধর্মস্য তদাত্মানং সৃজাম্যহম্। পরিত্রাণায় সাধুনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্। ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।’
অর্থাৎ, ধর্মের গ্লানি ও অধর্মের বৃদ্ধির তাৎপর্য হলো ভগবতপ্রেমী, ধর্মাত্মা, সদাচারী, নিরাপরাধ মানুষের ওপর নাস্তিক, পাপী, দুরাচার, বলবান ব্যক্তিদের অত্যাচার বৃদ্ধি পাওয়া। মানুষের মধ্যে সদগুণ, সদাচার অত্যন্ত কমে গিয়ে দুর্গুণ-দুরাচার অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। আর যখনই এমন পাপাচার শুরু হয় পৃথিবীতে, তখনই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ, সাধুর রক্ষা, ধর্ম সংস্থাপনি অবতাররূপে পৃথিবীতে অবর্তীর্ণ হোন।
আরও পড়ুন: বিশ্বের ১৯৩টি দেশের জাতীয় ফুলের নাম ও তালিকা - বিশ্বে কতগুলো দেশ আছে
তিনি ষড়গুণ, অর্থাৎ শৌর্য, বীর্য, তেজ, জ্ঞান, শ্রী ও বৈরাগ্যসম্পন্ন পূর্ণাবতাররূপে প্রকাশিত হোন।
গীতায় ৭/১০ অধ্যায়ে অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, ‘হে পার্থ, আমাকে সর্বভূতির সনাতন বীজ বলিয়া জানিও। আমি বুদ্ধিমানদিগের বুদ্ধি এবং তেজস্বীগণের তেজস্বরূপ।’
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কি - জন্মাষ্টমী কি জন্য পালন করা হয় - শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য - শেষ কথা :
আশা করছি, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কি - জন্মাষ্টমী কি জন্য পালন করা হয় - শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। কারণ প্রতিবছর জন্মাষ্টমী পালন করা হয় কিন্তু আমরা অনেকেই কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কি - জন্মাষ্টমী কি জন্য পালন করা হয় - শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য-এর বিষয়ে অনেক কিছুই অজানা থাকে। সুতরাং, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কি - জন্মাষ্টমী কি জন্য পালন করা হয় - শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে জন্মাষ্টমী সম্পর্কিত তথ্য, অর্থাৎ, কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী কি - জন্মাষ্টমী কি জন্য পালন করা হয় - শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর ইতিহাস ও তাৎপর্য-আলোচনায় থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url