হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার - হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি এবং হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা
অনেক সময় একটানা দীর্ঘক্ষণ ধরে কোন কাজ করছি, কিন্তু হঠাৎ করে উঠতে গিয়ে দেখি পা অবশ হয়ে গেছে, নড়ানো যাচ্ছে না, ঝিন ঝিন করছে। এরকম ধরণের সমস্যা বা অনুভূতি অনেকেরই হয়ে থাকে।
আবার সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর দেখি হাত নড়ানো যাচ্ছে না, বা পা অসাড় হয়ে গেছে। চিকিৎসা বিদ্যায় বলে, স্নায়ু যদি কোনও কারণে চাপ পড়ে শরীরের সেই অংশে কোনও অনুভূতি কাজ করে না, তখন তা ঝিন ঝিন করে বা অবশ লাগে। যদিও এটা আমাদের জীবনে একটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই সমস্যাটা যদি বার বার হতে থাকে, বা শরীরের অন্যান্য অংশেও যদি একই সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে আমরা কি করব। এখন আমরা হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার - হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি এবং হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
পোস্ট সূচিপত্র: হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার - হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি এবং হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা
কেন এই সমস্যাগুলো হয়, কারণ কি?
হাত-পা অবশ হওয়া যে সমস্ত রোগের লক্ষণ
হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা সমূহ
এ ছাড়াও কিছু জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার - হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি এবং হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা: শেষ আলোচনা
কেন এই সমস্যাগুলো হয়, কারণ কি?
আসলে হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার - হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি এবং হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা বা শাস্ত্র মতে, শারীরিক দুর্বলতা বা কোনও রকম সংক্রমণের প্রভাব থাকলে এমনটা হতে পারে। আবার কখনও কখনও কোনও গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও এমনটা হতে পারে। তবে সাধারণত অসাড়তা বা অবশ হয়ে যাওয়া জায়গাটিতে যদি কিছুক্ষণ ধরে ম্যাসেজ করা যায় তাহলে কমে যায়। যদি ম্যাসেজ করে না কমে তাহলে ধরে নিতে হবে আপনার স্বাস্থ্যগত কোন সমস্যা আছে। অনেক ক্ষেত্রে শরীরে রক্ত সঞ্চালনের অভাবেও হাত ও পায়ে ঝি ঝি ধরতে পারে। কারণ দেহের বিভিন্ন অংশে ঠিকমতো অক্সিজেন না পৌঁছালে ঝিম ঝিম বা অসাড় অবস্থায় পড়তে হতে পারে। নীচে হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার এর কারণ ও সমস্যাগুলি বর্ণিতে হলো:
আরও পড়ুন: স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণসমূহ ও প্রতিকার
👉 দীর্ঘ সময় কাজ করা: হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার হিসেবে অনেক সময় কম্পিউটারে একটানা কাজ করার ফরে হাতে পায়ে ঝি ঝি ধরতে পারে। আবার অনেকে একই জায়গায় বসে দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল ঘেটে চলেন, এক্ষেত্রে দীর্ঘসময় ধরে একই পজিশনে হাত রাখলে হাতের মধ্যেও ঝি ঝি ধরে যায়।
👉 অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন: অত্যধিক অ্যালকোহল গ্রহণের কারণেও হাত ও পায়ে অসাড়তা সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার হিসেবে যে ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে অ্যালকোহল সেবন করে, একটা পর্যায় দেখা যায় তার শারীরিক সমস্যা, হয় তার হাত না হয় পা অসাড় হয়ে গেছে, কোন কাজ করছেনা।
👉 ভিটামিনের ঘাটতি: শরীরে ভিটামিনের অভাবেও হাত ও পায়ে ঝি ঝি লাগতে পারে। তবে সাধারণত ভিটামিন ১২ এর অভাবে হাতে অসাড়তা দেখা দিয়ে থাকে।
👉স্ট্রোক: মস্তিষ্কে যদি পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ না হয় সেক্ষেত্রে স্ট্রোক হয়ে থাকে। স্ট্রোকের প্রথম লক্ষণই হলো বা হাত অবশ হয়ে যাওয়া। সুতরাং স্ট্রোকের কারণে হাত-পা অবশ হয়ে যেতে পারে।
👉থাইরয়েড: হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার হিসেবে গলার থাইরয়েড গ্রন্থিতে গন্ডগোলের কারণে অনেক সময় হাত-পা অসাড় হয়ে যায় বা হাত-পায়ে ঝি ঝি ধরে। এইরকম পরিস্থিতিতে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রক্ত পরীক্ষা করা উচিত।
👉গর্ভবতী মহিলা: সাধারণত গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ধরণের সমস্যা দেখা দেয়, এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উটিত।
👉মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম: মায়োফেসিয়াল পেইন সিনড্রোম অত্যন্ত সংবেদনশীল পেশীতে ব্যথার কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন: মাইগ্রেন হলে কি কি সমস্যা হতে পারে - প্রতিকারগুলি কি কি
👉কারপাল টানেল: হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার , অর্থাৎ কারপাল টানেল হল কব্জির মাঝখান দিয়ে একটু খোলা, যা মিডিয়ান নার্ভ নামেও পরিচিত। এই মধ্যমা স্নায়ু আপনার সূচক, থাম্ব, মধ্যম এবং আংশিকরিং আঙ্গুলগুলিতে অনুভূতির অনুভূতি পাঠায়, যা হাতের আঙুলের অসাড়তা সৃষ্টি করতে পারে।
👉ওষুধ: সাধারণত ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলি স্নায়ুর ক্ষতি বা নিউরোপ্যাথি হতে পারে। হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার হিসেবে এই বাম বাহু বা ডান বাহুতে অসাড়তা সৃষ্টি করতে পারে। ডান হাতের অসাড়তার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে টেনিস এলবো, টানেল সিনড্রোম ইত্যাদি।
হাত-পা অবশ হওয়া যে সমস্ত রোগের লক্ষণ :
হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার - হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি এবং হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা বিষয়ে হাত-পায়ে অবশ বা অনুভূতিহীন হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা যখন তখন যে কারোরই হতে পারে। অর্থাৎ যাদের ক্ষেত্রে এ ধরণের সমস্যা অনুভূত হয়, তাদেরকে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া মারাত্মক কিছু রোগের লক্ষণ হতে পারে:
💧 ডায়াবেটিস: বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। পেরিফেরাল স্নায়ু রোগের এটি একটি সাধারণ কারন। অর্থাৎ এর ফলে পায়ের পাতা অবশ হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়, যা আস্তে আস্তে উপরের দিকে ওঠে।
💧 নিউরালজিয়া: আপনার স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে তীব্র ব্যথা এবং জালা অনুভূত হয়। শরীরের যে কোনো স্থানেই হতে পারে এই রোগ। বিশেষ করে সংক্রমণ এবং বয়সের কারণে এই রোগ হতে পারে।
💧 স্ট্রোক: স্ট্রোকের প্রথম লক্ষণ বাঁ হাত অবশ হয়ে যাওয়া, যা হাতের তালু পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়াও হঠাৎ করে দৃষ্টি শক্তির পরিবর্তন, ভারসাম্য নষ্ট হয়, কথা বলায় সমস্যা হয় এবং হাত-মুখ ও পা অবশ হয়ে যায়।
💧 লাইম ডিজিজ: লাইম ডিজিজ একটি পতঙ্গবাহিত ইনফ্লামেটরি ডিজিজ, যা খুবই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রাথমিক লক্ষণগুলি হচ্ছে-ক্লান্তি, জ্বর, পেশি ও জয়েন্টের ব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলো সময়মত চিকিৎসা করা না হলে স্নায়ুর জটিলতায় সৃষ্টি হয় হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া।
💧 কারপাল টানেল সিনড্রোম: কবজির মিডিয়ান স্লায়ুতে চাপ পড়ার ফলে কারপাল টানেল সিনড্রোম হতে দেখা যায়। এ্ মিডিয়ান স্নায়ুটি হাতের তালু এবং প্রথম তিনটি আঙুলের অনুভূতি এবং নড়াচড়ায় সাহায্য করে।
💧 সিস্টেমিক ডিজিজ: হাত-পা অবশ রোগ শুধু শরীরের একটি অঙ্গই আক্রান্ত হয় না, বিশেষ করে কিডনি রোগ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, ভাসকুলার ডিজিজ এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার বা দূর্ঘটনায় কোনো স্নায়ুর ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা পুরো শরীরের ওপর এক ধরণের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। পরবর্তীতে এসব প্রতিক্রিয়ার উপসর্গ হিসেবে শরীরের কোন অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে।
💧 ফাইব্রোমায়ালজিয়া: এটি মস্তিস্কের এমন এক ধরণের সমস্যা, যা হলে পেশিমে ব্যথা, স্মৃতির সমস্যা এবং মেজাজ পরিবর্তনের সমস্যা হয়। হাত ও পা অবশ হয়ে যাওয়ার সাধারণ একটি কারণ এটি।
হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা সমূহ:
হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা এর ক্ষেত্রে তা অবশ বা অসাড়তা হবার কারণ নির্ণয়ের জন্য শারীরিক ইঙ্গিত, যেমন-সংবেদন হ্রাস, পরিবর্তিত প্রতিচ্ছবি এবং দুর্বলতা মূল্যায়ন করা হয়। এ ছাড়াও ইতিহাস ও উপসর্গের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসকেরা একটি ব্যাপক শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন। যেমন-এমআরআই, এক্স-রে, আলট্রাসাউন্ড, রক্ত পরীক্ষা, লাম্বার পাংচার ও ইলেকট্রোগ্রাফি ইত্যাদি।
আরও পড়ুন: গন্ধভাদুলী পাতার উপকারিতা ও গুনাগুণ
- মেডিকেশন: হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি হিসেবে ওষুধ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অন্তত আংশিকভাবে উভয় হাতের অসাসড়া দূর করতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কোনো হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা নিতে ওষুধ খাবার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করেই তা গ্রহণ করা সমীচিন। অসাড়তার চিকিৎসার মধ্যে ব্যবহৃত ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে:
- ব্যথা উপশম, অ্যান্টিকোগুল্যান্ট, antidepressant, পেশী শিথিলকারী।
- হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি হিসেবে শারীরিক থেরাপী কিছু অবস্থার ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে।
- পথ্য: অর্থাৎ হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি হিসেবে খাদ্য তালিকার সামঞ্জস্য যেমন-ভিটামিনজনিত খাদ্য, সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং কিছু লাইফষ্টাইলে সামঞ্জস্য যেমন-অ্যালকোহল ও ধুমপান এড়ানো ইত্যাদি।
- অনেক সময় হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি এবং হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা হিসেবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার বা সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে ডাক্তাররা কিছু ক্ষেত্রে সার্ভিক্যাল মেরুদন্ডের অস্ত্রোপচারের সুপারিশ করতে পারেন, অবশ্য যদি তারা সন্দেহ করেন।
- এ ছাড়াও হাত-পা এর অসাড়তার উপর নির্ভর করে বা হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা হিসেবে অতিরিক্ত থেরাপি অথবা অন্যান্য চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করা যেতে পারে, অর্থাৎ, হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি এর ক্ষেত্রে বোটক্স ইনজেকশন, মালিশের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা, আলট্রাসাউন্ড খেরাপি, জ্ঞানীয় আচরণ থেরাপি ইত্যাদি ।
এ ছাড়াও কিছু জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী:
- হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা
- হাত পা অবশ হয়ে আসে কেন
- ঘুমের মধ্যে হাত পা অবশ হয় কেন
- পায়ের আঙ্গুল অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
- বাম হাত অবশ হওয়ার কারণ
- হাত পা ঝিন ঝিন করার হোমিও চিকিৎসা
- হাত পা দুর্বল লাগে কেন
হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার - হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি এবং হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা: শেষ আলোচনা
আজকের আর্টিকেল থেকে আপনারা জানতে পারলেন হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার - হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি এবং হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে। আশা করছি আজকের পোস্ট থেকে আপনারা হাত পা অবশ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার - হাতের অবশ ভাব কমানোর উপায় কি এবং হাত পা অবশ হওয়ার ঔষধ বা চিকিৎসা সেবা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অনেক কিছু জানতে পারলেন, তারপরেও যদি আরো কিছু জানার থাকে, তাহলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন এবং এরকম আরো তথ্য মূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url