পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে

প্রতিটা নারীরই পূর্ণাঙ্গতা প্রকাশ ঘটে যখন সে মাতৃত্ব লাভ করে। আর এই মাতৃত্ব লাভের প্রকৃত কারণ তাদের পিরিয়ড বা মাসিক। অর্থাৎ প্রতি মাসে এই পিরিয়ড নারীদের গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। কিন্তু এই পিরিয়ড চলাকালীন সমযে দেখা দেয় নানান জটিলতা। তাই আজকে আমরা পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এ সম্পর্কে জানবো।
কিন্তু অনেকের এই পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে শুরু হয় মাথাব্যথা, পেটব্যথা, কোমড়ব্যথা, বমি বমি ভাব, হাত জ্বালা পোড়া করা এবং সর্বোপরি মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তবে এটা ঠিক যে, বেশীর ভাগ নারীরই পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ব্যথা অনুভূত হয়। অর্থাৎ এই কারণে পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ইত্যাদি বিষয়গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।

পোস্ট সূচিপত্র: পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
পিরিয়ড বা মাসিক কী?
পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
সংশ্লিষ্ট বিষয়ক প্রশ্নাবলী
পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে - শেষ কথা

পিরিয়ড বা মাসিক কী?

পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ইত্যাদি বুঝতে গেলে আমাদের আগে জানতে হবে পিরিয়ড বা মাসিক কী? আসলে পিরিয়ডের একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। সাধারণত ২৩ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে একটা পিরিয়ড থেকে আরেকটা পিরিয়ড ফেরত আসে। তবে পিরিয়ড সাধারণত ২৮ দিন পর পর হয়ে থাকে। আর এই পিরিয়ড থাকে ৩-৭ দিন পর্যন্ত। অর্থাৎ হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু হতে নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই ঋতুচক্র বলে।

পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন :

পিরিয়ড হওয়ার সময় অনেক কারণেই ব্যথা হতে পারে, তবে চিকিৎসা শাস্ত্রে এই ব্যথা হওয়াকে ডিসমেনোরিয়া বলে। যেমন-

  • পিরিয়ড হওয়ার সময় অনেকের জরায়ুর মুখ সংকুচিত হওয়ার ফলে রক্ত বের হয়ে আসার সময় এ ধরণের ব্যথা অনুভূত হয়, আর এটাকে বলে স্প্যাসমোডিক ডিসমেনোরিয়া। তবে কিশোরী বা তরুণীদের প্রথম পিরিয়ডের সময় এটা লক্ষ্য করা যায়।

আরও পড়ুন: ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে জেনে নিব প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়সমূহ

  • অনেক নারীর জরায়ুতে প্রদাহ বা কোন ইনফেকশন থাকে, তাহলে পিরিয়ডের সময় তলপেট ভারী হয়ে থাকে এবং ব্যথা অনুভূত হয়, একটা অস্বস্তি ভাব তৈরী হয়, বিশেষ করে যখন পিরিয়ডের ফ্লো থাকে তখন অনেক বেশী ব্যথা অনুভূত হতে থাকে।
  • জরায়ুতে যদি পলিপ, অ্যাডিনোমায়োসিস, ফ্রাইবয়েড জাতীয় টিউমার থাকে, তাহলেও পিরিয়ড হওয়ার সময় তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
  • আবার বেশি ব্লিডিং, জমাট বা চাকা চাকা রক্ত বের হওয়ার সময় জরায়ু সংকুচিত হওয়ার ফলে ব্যথা অনুভূত হতে থাকে।

পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় :

পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এর মধ্যে নিম্নে আমরা পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সমূহ সম্পর্কে আলোকপাত করছি:

গরম পানি সেক : অর্থাৎ পিরিয়ডের ব্যথায় গরম পানির সেক খুবেই উপকারী। একটি হট ব্যাগের মধ্যে গরম পানি নিয়ে পেটে সেঁকে দিতে পারেন।

পানি পান : পিরিয়ড চলাকালীন সময় প্রচুর পানি পান করতে হবে। কারণ এই সময়টাতে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরী হয়।

আদার রস : আদা অনেক উপকারের মধ্যে পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে আদা চা পান বা আদা কুচি কুচি করে খেতে পারলেও ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া আদার সঙ্গে মধু, চিনি ও গরম পানি যোগ করে দিনে ৩-৪ বার খেতে পারলে ব্যথা উপশম বা কমে যায়।

অ্যালোভেরা : অ্যালোভেরা রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারলে পিরিয়ডের ব্যথা কমতে থাকে।

আরও পড়ুন: পিসিওএস থাকলে কি তাঁরা মা হতে পারেন না? - পিসিওএস এর লক্ষণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি - পিসিওএস থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে

পেট ম্যাসাজ : পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে তলপেট ও তার আশপাশে আলোতোভাবে ম্যাসাজ করতে পারলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

পেঁপে : অর্থাৎ পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য পেঁপে খাওয়া খুবই উপকারী। কেননা পিরিয়ডের সময় নিয়মিত কাঁচা পেঁপে খেতে পারলে তা ব্যথা কমানোর উপশম হিসেবে কাজ করে।

ফ্যাট জাতীয় খাবার : পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে বিশেষে করে অ্যালকোহল, ক্যাফেইন যুক্ত পানীয়, তেল ও মশলাযুক্ত খাবারসহ বিভিন্ন ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

গোলমরিচ, মেথি ও কাঁচা হলুদ : গোলমরিচ, মেথি ও কাঁচা হলুদের মিশ্রণ পিরিয়ড চলাকালীন ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। যেমন-২ কাপ জলে প্রতিটা জিনিসই এক চা-চামচ করে মিশিয়ে ১০ মিনিট ধরে ভালো করে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিয়ে হাল্কা গরম থাকাবস্থায় মিশ্রণটি পান করুন, তবে বেশি ব্যথা শুরু হলে তা দিনে ২-৩ বার পান করতে পারেন।

হালকা ব্যায়াম : অনেকে পেটে ব্যথা হচ্ছে বলে সারাদিন শুয়ে-বসে থাকে, এটি করা যাবে না। এ সময় বাড়ির ছাদে বা খোলা উঠানে হাঁটাচলা করা বা প্রয়োজনে সাইক্লিং করতে পারেন।

টাইট প্যান্ট : পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে কুব বেশি টাইট প্যান্ট পড়া যাবে না, কারণ এতে তলপেটে চাপ সৃষ্টি হবে। নিশ্চেন্তে হাঁটাচলা করতে পারেন এমন সুতি কাপড় পরার চেষ্টা করুন।

সুতরাং উপরোক্ত নিয়ম বা পদ্ধতিগুলো ফলো করতে পারলে, পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে তা অনেকাংশেই কমে যাবে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে :

  • পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে ব্যথা কমানোর জন্য বিভিন্ন ব্যথা নাশক ওষুধ যেমন-প্যারাসিটামল, ভিসেরালজিন, এলজিন, বুটাপেন ইত্যাদি এক-দুইদিন খাওয়া যেতে পারে। তবে ব্যথা অতিরিক্ত মাত্রায় হলে বা অন্য কোন উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • সেকেন্ডারি বা কনজেস্টিভ ডিসমেনোরিয়া হলে অবশ্যই একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ব্যথার ধরণ বুঝতে হবে, যদি ব্যথা শুরু হওয়ার পরে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তা চলে যায় তাহলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিন্তু যদি এর বেশী সময় ধরে ব্যথা অনুভূত হতে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
  • পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ, টিউমারসহ বিভিন্ন রোগের কারণে পিরিয়ডের ব্যথা হলে সেই অনুযায়ী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ক প্রশ্নাবলী:

আসলে পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এ সংক্রান্ত বিষয়ে নিম্নোক্ত প্রশ্নাবলীগুলো আলোচিত হয়ে থাকে।

  • পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় ঔষধের নাম
  • পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ব্যয়াম
  • পিরিয়ডের ব্যথা হলে কি বাচ্চা হয় না
  • পিরিয়ডের ব্যথা কমানো খাবার
  • পিরিয়ডের ব্যথা কেন হয়
  • পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ইসলামিক উপায়
  • পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর দোয়া
  • পিরিয়ডের সময় পা ব্যথা কেন হয়

পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে - শেষ কথা:

পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে-এ বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

আপনাদের পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত। আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানে শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কোন আর্টিকেলে সেই পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন।

আরও পড়ুন: গর্ভাবস্থায় সহবাস করা যাবে কিনা ও গর্ভাবস্থায় সহবাস করার নিয়ম এবং গর্ভাবস্থায় সহবাসে কী গর্ভের বাচ্চার কোন ক্ষতি হয়

বিঃদ্রঃ-পিরিয়ডে ব্যথা হয় কেন - পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় - কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে টপিকটি শুধুমাত্র সচেতনার জন্য প্রকাশিত, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসাপত্র সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনি আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url