মৃগী রোগ কি ভাল হয়? কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়
মৃগী রোগের নাম শুনলেই, কেমন যেন আমাদের মধ্যে ঘৃণা ঘৃণা ভাব বা সংকোচবোধ করি ভিতরে ভিতরে এবং তা বহিঃপ্রকাশ করি অনেক পরে। আসলে বাস্তবিক অবস্থা হলো নিজ ভাগ্যান্বেষণের অবস্থান, অনিয়ম বা উদাসীনতার জন্যই মূলত শরীরে বাঁধে নানা অসুখ-বিসুখ। তাই আমাদের জানতে হবে-মৃগী রোগ কি ভাল হয়? কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় সম্পর্কে।
মূলত মানব মস্তিস্কের কার্যপ্রণালীতে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে এই রোগ দেখা দেয়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় ‘নিউরোলোজিক্যাল ডিজিজ’। শরীরে খিুঁচুনির মধ্যে যেমন-চেতনা হারিয়ে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশে অদ্ভুত নড়াচড়া বা সংবেদন, অদ্ভুত আচরণ এবং মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি। সুতরাং, আজকে এই রোগ সম্পর্কে অর্থাৎ, মৃগী রোগ কি ভাল হয়? কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় জানার চেষ্টা করবো। চলুনে জেনে নেয়া যাক-
পোস্ট সূচিপত্র: মৃগী রোগ কি ভাল হয়? কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়
কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়
কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়
মৃগী রোগ কি ভাল হয়?
মৃগী রোগের কারণসমূহ
চিকিৎসাসেবা কী?
মৃগী রোগ কি ভাল হয়? কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়-শেষ কথা
কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়
আসলে মৃগী রোগ কি ভাল হয়? কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় তা বুঝতে নিম্নে বর্ণিত আলোচনাগুলি গভীর মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে। খিঁচুনি বা মৃগী রোগের উপসর্গ ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে এর মধ্যে বেশ কিছু লক্ষণ বিদ্যমান:
আরও পড়ুন: সকালে খালি পেটে কাঁচা ছোলা খেলে কী উপকার হয়? কাঁচা ছোলার যত পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাসমূহ
- সহজ আংশিক খিঁচুনি: এতে চেতনার কোন ক্ষতি নেই। লক্ষণগুলো নিম্নরূপ:
- মাথা ঘোরা
- শরীরে শিহরণ সংবেদন
- স্বাদ, গন্ধ এবং দৃষ্টিতে পরিবর্তন
- জটিল আংশিক খিঁচুনি: এর সাথে চেতনা বা সচেতনতা হারানো জড়িত। যেমন-
- রোগীর কোনো সাড়া নেই
- রোগী মহাশূন্যের দিকে তাকিয়ে থাকে
- সাধারণ খিঁচুনি: এই প্রক্রিয়াটি মস্তিস্কের সমস্ত অঞ্চলকে জড়িত করে।
- ব্যক্তি তার পেশি নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে যায়
- পেশি শক্ত হয়ে যায়
- মুখ, ঘাড় এবং বাহুর পেশিতে বারবার কম্পন হয়
- রোগীর হাত ও পায়ে সুড়সুড়ি দেওয়ার লক্ষণ থাকে
- ব্যক্তি একই কাজ বারবার করতে থাকে, যেমন-চোখের পলক ফেলা বা ঠোঁট ফাটানো
- এ ছাড়াও পেশিম খিঁচুনি, বিভ্রান্তি, পড়ে যাওয়া, মূত্রাশয় বা অন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ হারানো, দাঁত চেপে যাওয়া, অস্বাভাবিক আচরণ, অনিয়মিত শ্বাস প্রশ্বাস ইত্যাদি।
- আবার এক ধরণের মৃগীরোগী আছে যারা জ্ঞান হারাননা। আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান থাকে কিন্তু তার কিছু শারীরিক লক্ষণ প্রকাশের মাধ্যমে বোঝায় যায় মৃগীরোগ আছে। যেমন-
- হঠাৎ করে মাথা ঘোরা এবং কিছু সময়ের জন্য অমনোযোগী হয়ে যাওয়া
- চোখে লাল-নীল আলো দেখতে পাওয়া। হ্যালুসিনেশন হতে পারে
- শরীরের কোনো একটা অংশ হাত বা পা ঝিমঝিম, অবশ অনুভূত হওয়া
কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়
মৃগী রোগ কি ভাল হয়? কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় তা জানতে নিম্নের আলোচনাগুলি পর্যবেক্ষণ করুন:
আসলে মৃগীরোগ সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা সম্ভব নাও হতে পারে, কেননা এটি জন্মের আগে ঘটে যাওয়া জেনেটিক প্রবণতা বা অবস্থাসহ বিভিন্ন কারণের ফলে হতে পারে।
আরও পড়ুন: আদা খেলে কি হয়? প্রতিদিন কতটা আদা খাওয়া উচিত? আদার উপকারিতা ও গুণাবলীসমূহ
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: মৃগীরোগের সাথে যুক্ত স্বাস্থ্যের অবস্থার সঠিক ব্যবস্থাপনা বা নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করার ফলে স্ট্রোক, হৃদরোগ বা মেনিনজাইটিসের মতো সংক্রমণ এই রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
মাথার আঘাম প্রতিরোধ: সাধারণত মৃগীরোগীদের গাড়ি চালানোর সময় সিট বেল্ট ব্যবহার, খেলাধুলার সময় হেলমেট ব্যবহার এবং শিশুদের ক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা ইত্যাদির মাধৗমে মস্তিস্কের আঘাত প্রতিরোধ করা যেতে পারে।
সংক্রমণ প্রতিরোধ: মস্তিস্ককে প্রভাবিত করে এমন সংক্রমণের ফলে কিছু ধরণের মৃগী রোগ হতে পারে, যেমন-টিকা। তাই ভাল স্বাস্থ্যবিধি অনুশীল করা এবং সংক্রামিত হলে দ্রুত চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করা।
প্রসবপূর্ব যত্ন: সঠিক প্রববপূর্ব যত্ন নেয়া এবং গর্ভাবস্থায় পরিচিত ঝুঁকির কারণগুলি এড়ানো, যেমন-অ্যালকোহল বা ড্রাগস জাতীয় সামগ্রী বিকাশমান ভ্রুনের মৃগীরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে।
মৃগী রোগ কি ভাল হয়?
মৃগী রোগের চিকিৎসায় ঝাড়ফুঁক না করে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে একজন মৃগীরোগী সম্পূর্ণ সুস্থ্য হতে পারে। তবে প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে মৃগী রোগের উপসর্গ অন্য কোনো রোগের উপসর্গ হিসেবেও দেখা দিতে পারে। আসলে মৃগী রোগ কি ভাল হয়? কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় এসব বিষয় জানতে গেলে কুসংস্কার পরিত্যাগ করতে হবে। তাই পরিবারের কারো মৃগী রোগের উপসর্গ দেখা দিলে বৈদ্য কিংবা কবিরাজের অপচিকিৎসা না নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আসলে ৯০ শতাংশ রোগী ওষুধ খেয়ে ভালো থাকেন। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগী ২ থেকে ৫ বছর ওষুধ খেয়ে রোগমুক্ত হয়ে যান। তবে মৃগী রোগে আক্রান্ত নারীরা গর্ভধারণের আগে ও গর্ভকালীন সময়ে নিউরোলজি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে এবং নিয়মিত ওষুধ সেবনে সম্পূর্ণ সুস্থ্য হতে পারেন এবং সুস্থ্য শিশু জন্ম দিতে পারেন।
মৃগী রোগের কারণসমূহ
মৃগীরোগ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন-জেনেটিক্যালি, মাথায় আঘাত জনিত কারণে, সংক্রমণ, প্রসবপূর্ব আঘাত বা এক্সপোজার, স্নায়বিক রোগ, স্ট্রোক বা ভাস্কুলার সমস্যা, ব্রেন টিউমার, বিকাশজনিত ব্যাধি ইত্যাদি।
চিকিৎসাসেবা কী?
মৃগী রোগ কি ভাল হয়? কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় এবং এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবা কী হতে পারে তা নিম্নে বর্ণিত হলো:
মৃগীরোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ লোকেরই খিঁচুনি হয় যা অ্যান্টিপিলেটিক ওষুধ যেমন ভালপ্রোয়েট, ইথোসুক্সিমাইড, ক্লোনাজেপাম, কার্বামাজেপাইন এবং প্রিমিডোন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এই ওষুধগুলি মস্তিস্কের নিউরোনাল কার্যকলাপের পরিমাণ হ্রাস করে। মৃগী রোগীদের গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি চালানো বা সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন, কারণ কোন রকম সতর্কতা ছাড়াই এসব ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পেলে। এ ছাড়াও পরিবার এবং বন্ধুদেরকে খিঁচুনি হলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।
মৃগী রোগ কি ভাল হয়? কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায়-শেষ কথা:
আশা করছি, মৃগী রোগ কি ভাল হয়? কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় বিষয়গুলি যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। মৃগী রোগ কি ভাল হয়? কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে মৃগী রোগ কি ভাল হয়? কোনগুলো মৃগী রোগের লক্ষণ এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় আলোচনায় থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url