যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা

সৌন্দর্য বা রুচিশীলতা সবাই পছন্দ করে। আর এই প্রতিযোগীতায় সবথেকে এগিয়ে আছে আমাদের সমাজের নারীরা। তাই জেনে নিন, যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা ।

বর্তমানে বাজারে প্রচলিত প্রতিটি রূপচর্চার প্রসাধনীতে কোন না কোন ফুল বা পাতার ছবি ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। অনেক চড়া মূল্যে এসব প্রসাধনী ক্রয় করেও কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়না। আজকে আমরা ঘরে বসেই যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা-এর বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।

পোস্ট সূচিপত্র: যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা
বিস্তারিত: যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা
রূপচর্চায় গোলাপ ফুল বা পাপড়ি
রূপচর্চায় জবা ফুলের ব্যবহার
যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা-শেষ কথা:

বিস্তারিত: যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা

বর্তমানে রুপচর্চার পণ্যের বিজ্ঞাপনে বিভিন্ন ফুলের ব্যবহার দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় গোলাপ ফুল ও জবা ফুলের বিজ্ঞাপন। অর্থাৎ গোলাপ ও জবা ফুলে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, খনিজ ও ভিটামিন থাকে, যা ত্বকের জন্য অত্যাবশীয়। সুতরাং, নিম্নে যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা এর মধ্যে সর্বপ্রথম আমরা গোলাপ ফুলের বিভিন্ন উপকারিত ও গুণাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করবো।

রূপচর্চায় গোলাপ ফুল বা পাপড়ি

গোলাপ ফুলে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ত্বকের বলিরেখা পড়তে দেয়না এবং ত্বক থাকে সতেজ ও কোমল।

যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা হিসেবে ত্বকের কোমলতা বাড়াতে গোলাপ ফুলের জুড়ি নেই। শুকনো গোলাপের পাপড়ির সঙ্গে ২ টেবিল চামচ মধু ও ২ টেবিল চামচ তরল দুধ একসঙ্গে পেষ্ট তৈরি করে রাতে ঘুমানোর পূর্বে মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষার করার তা ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করতে পারলে আপনার ত্বক হবে কোমল ও নরম।

আরও পড়ুন: ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে জেনে নিব প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায়সমূহ

মুখে ব্রণের সমস্যা হতে মুক্তি পেতে  কয়েক ফোটা লেবুর রস ও সঙ্গে গোলাপের পাপড়ি পেষ্ট করে নিন। এরপর ব্রণের স্থানে তা লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর ধুয়ে ফেলুন।

কালো বা কালচে ঠোঁটের কালো দাগ দূর করতে লেবুর রস ৩-৪ ফোটা, লাল চিনি কয়েক দানা, তরল দুধ ও গোলাপের পাপড়ি দিয়ে পেষ্ট তৈরি করুন। এরপর তা ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তবে প্রয়োজনে রাতের ঘুমানোর সময় লাগিয়ে রাখতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহার করতে পারলে ঠোঁটের কালচে ভাব দূর হয়ে যাবে। প্রয়োজনে প্যাক বানিয়ে কাঁচের বয়ামে করে ফ্রিজে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ পর্যন্ত রাখতে পারেন।

চোকের নীচের কালচে দাগ দূর করতে গোলাপের পাপড়ি ভালো কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে একটি পাত্রে গোলাপের পাপড়ি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর তুলার সাহায্যে গোলাপের পাপড়ি ভিজানো পানি চোখে ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। অতপর ধুয়ে ফেলুন। আপনি যদি এটি নিয়মিত করতে পারেন, তাহলে আপনার চোখের নীচে কালচে দাগ বা ডার্ক  সার্কেল দূর হয়ে যাবে।

এ ছাড়াও যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা হিসেবে প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে গোলাপের পাপড়ি ব্যবহার করতে পারেন। কারণ সূর্যের প্রখর রোগে ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়। এক্ষেত্রে গোলাপের পাপড়ির রস, এলোভেরা জেল, শসার রস ও আমল্ড অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে নিন। আপনার ত্বককে রোদে পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করবে।

হাতের উজ্জ্বলতা বাড়াতে গোলাপের পাপড়ির পেষ্ট তৈরি করে এর সঙ্গে ২ টেবিল চামচ চালের গুড়া এবং ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল সহ সবগুলোই একসঙ্গে মিশিয়ে হাতে ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে হাত ধুলে ফেলুন।

আরও পড়ুন: শাপলা ডাটা কি খাওয়া যায়? শাপলা ডাঁটার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাগুলি কী কী

আপনার ত্বকের ময়েশ্টার ধরে রাখতে গোলাপের তুলনা হয় না। এক্ষেত্রে এক টেবিল চামচ গোলাপের রস ও ২ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল একসঙ্গে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে তা মুখে লাগিয়ে রাখুন। নির্দিষ্ট সময় পর তা ধুলে ফেলুন। এতে করে আপনার ত্বকের ময়েশ্চারাইজার ঠিক থাকবে।

যাদের অতিরিক্ত ঠোঁট ফেটে থাকে, তাদের ক্ষেত্রে আধা টেবিল চামচ গোলাপের পাপড়ি বাটা, আধা টেবিল চামচ মধু, আধা টেবিল চামচ গ্লিসারিন এবং এর সঙ্গে সামান্য চিনি যোগ করে ঠোঁটে অন্তত ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। খেয়াল রাখবেন চিনি গলে না যাওয়া পর্যন্ত ধোয়া যাবে না। এই প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করলে ঠোঁট ফাটা কমে যাবে অনায়াসে।

এক্ষণে আমরা যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা এর মধ্যে জবা ফুলের বিভিন্ন উপকারিত ও গুণাগুণ সম্পর্কে আলোচনা করবো।

রূপচর্চায় জবা ফুলের ব্যবহার

যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা হিসেবে চুলের খুশকি কমাতে জবা ফুল দারুণ কার্যকরি। এক্ষেত্রে ২-৩ চামচ মেথি পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর  জবা ফুলের পেষ্ট ৩ চামচ, এলোভেরা জেল, অলিভ অয়েল তেল দিয়ে ভালোভাবে মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি মাথায়/চুলের গোড়ায় খুব ভালোভাবে ঘষে ঘষে লাগিয়ে ফেলুন। মাথায় লাগানো প্যাকটি না শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

চুল পড়া বন্ধ ও নতুন চুল গজাতে জবা ফুলের পেষ্টের সঙ্গে মেহিদি মিশ্রণ করে তাকে লেবুর রস মিশিয়ে ভালোভাবে পেষ্ট তৈরি করুন। এরপর তা মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে অন্তত ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষার পর ধুয়ে ফেলুন।

ত্বকের বলি রেখা দূর করতে শুকনো জবা ফুলের পাপড়ির গুড়া ৩ চামচ, ৪ টেবিল চামচ টক দই, ১ টেবিল চামচ চন্দন গুড়া সবগুলোই একসঙ্গে মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে নিন। এরপর তা মুখে লাগিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর ধুয়ে ফেলুন।

ত্বকে টক্সিন ও অতিরিক্ত তেল ভাব কমাতে জবা ফুলের পাপড়ির পেষ্ট তৈরি করে তার সঙ্গে এলোভেরা জেল মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এতে করে ত্বকের দূষণ ও অতিরিক্ত তেল ভাব দূর হবে।

ব্রণ দূর করতে জবা ফুল শুকিয়ে পাউডার তৈরি করে নিন। এরপর জবা ফুলের পাউডারের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু, মুলতানি মাটি ও পানি একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর তা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। জবা ফুলের ফেসপ্যাক সপ্তাহে ৩-৪ দিন ব্যবহার করতে পারেন।

আরও পড়ুন: কখন চুলে সরিষার তেল ব্যবহার করবো - সরিষার তেলের নানান উপকারিতা

ত্বকের বলি রেকা দূর করতে শুকনো জবা ফুল দারুণ কার্যকরী। প্রথমে শুকনো জবা ফুলের পাপড়ি ৩ টেবিল চামচ, ৪ টেবিল চামচ টক দই এবং ১ টেবিল চামচ চন্দন গুড়া মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তা মুখে মাখতে হবে।

জবা ফুল ছত্রাক এবং অন্যান্য জীবাণু প্রতিরোধ করে। আপনার চুলের গোড়া মজবুত করতে ছয়টি জবা ফুরের সঙ্গে অ্যালোভেরার নির্যাস আধা কাপ নিতে হবে। এরপর আধা কাপ টক দই আর একটি ডিম যোগ করে অর্থাৎ সব উপকরণগুলো একসঙ্গে ব্লেন্ড মাথায় লাগাতে হবে। অন্তত পক্ষে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে যদি একবার ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার চুল হয়ে উঠবে ঘন ও কালো। অর্থাৎ প্রাকৃতিক উপায়ে যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা হিসেবে জবা ফুল দিয়েও তেরি করতে পারেন প্যাক।

যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা-শেষ কথা:

বস্তুত সবাই কিন্তু সুন্দরের পিছনেই ছুটতে থাকে প্রতিনিয়ত, প্রতিক্ষণে...। বিজ্ঞাপনে প্রদর্শিত নানা সামগ্রী যাতে প্রাকৃতিক কোন না কোন ফুল বা পাতার ছবি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অনেক চড়া মূল্যে এসব প্রসাধনী ক্রয় করেও কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়না। তাই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা-এর বিস্তারিত প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে জেনে শুরু ঘরোয়া উপায়ে তৈরি করতে পারেন রূপচর্চার জন্য প্যাক।

আশা করছি, যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা এগুলো যদি জেনে থাকেন তাহলে আপনাদের উপকারে আসবে। আসলে প্রাকৃতিক উপায়ে যেভাবে গোলাপ ও জবা ফুল দিয়ে সহজেই হতে পারে রূপচর্চা বিষয়ক আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো বিষয়ে জানতে চাইলে সেটাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো তথ্যমূলক পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ফলো করতে পারেন। এতোক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url